সাহিত্যের প্রয়োজনে জন্ম নেওয়া কয়েকটি কৃত্রিম ভাষা



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ভাষার জন্ম মানুষের চিরন্তন ভাবকে প্রকাশ করার তাগিদেই

ভাষার জন্ম মানুষের চিরন্তন ভাবকে প্রকাশ করার তাগিদেই

  • Font increase
  • Font Decrease

পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক ভাষা। হচ্ছে এবং এভাবে চলতে থাকলে আরো অনেক ভাষাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ভাষার এই উত্থান-পতনের গল্প পুরোটাই প্রাকৃতিক। অনেকটা সভ্যতার মতোই। কিন্তু তাই বলে মানুষের চিরায়ত কৌতূহল থেমে থাকেনি। নিজের মনের ভাব বিশেষভাবে লিপিবদ্ধ রাখার জন্য আবিষ্কৃত হয়েছে নানা সংকেত। কারো কাছে আবার তা আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে জন্ম নিয়েছে সম্পূর্ণ মৌলিক ভাষা।

হাল আমলে টেলিভিশন কিংবা বইয়ের গল্পের প্রয়োজনে প্রায়ই বিভিন্ন কৃত্রিম ভাষার দেখা মেলে। তাদের বেশির ভাগই অর্থহীন ধ্বনি কপচানোতে পরিণত হয়েছে। তবে, বাস্তবিক অর্থেই কয়েকটি কৃত্রিম ভাষা আবিষ্কৃত হয়েছে; যাদের বৈশিষ্ট্য ও কার্যাবলি জীবিত ভাষার সদৃশ। কোনো কোনো ভাষার আবার রীতিমতো বিশেষজ্ঞ এবং পণ্ডিতগোষ্ঠীও তৈরি হয়ে গেছে। সাহিত্যিকদের হাত ধরে জন্ম নেওয়া সেইসব কৃত্রিম ভাষা নিয়েই আমাদের আজকের গল্প।

এলিয়েনিজ : ফিউচারামা

এলিয়েনদের ভাষা হিসাবে আবিষ্কৃত এলিয়েনিজ খুব সম্ভবত সবথেকে সহজ ভাষা। অবশ্য তার জন্য গণিতে ধারণা থাকতে হবে। ফিউচারামা নামের এনিমেটেডে সিরিজে ভাষাটা ব্যবহার করা হয়েছে। ইংরেজির সাথে খাপ খাইয়ে ২৬টি চিহ্নের প্রবর্তন করা হয় প্রথমে। ভক্তেরা তাকে সাদরে গ্রহণ করলে আরেকটু এগিয়ে দ্বিতীয় রূপটাতে প্রবেশ করা হয় গাণিতিক বিশ্লেষণের সহযোগে।

এলিয়েনিজ লিপির জন্ম হয় এলিয়েনদের ভাষা হিসাবে


প্রতিটি প্রতীকের একটা সংখ্যাগত মান আছে এখানে। যে কোনো সংবাদ প্রেরণ করা হয় এর মধ্য থেকেই। অর্থ বের করতে হলে—প্রথমে প্রতিটি প্রতীককে সরাসরি অনুবাদ করে ফেলা হয়। উদাহরণ হিসাবে বলতে গেলে 0 = A, 1= B ইত্যাদি। তারপর পরবর্তী বর্ণগুলোকে অনুবাদ করা হয় পূর্ববর্তী প্রতীকের মান দেখে। তবে যদি মান শূন্যের চেয়ে ছোট হয়; তবে ২৬ যোগ করতে হবে।

ল্যাপিন : ওয়াটারশিপ ডাউন

রিচার্ড এডামস্ ১৯৭২ সালে তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘ওয়াটারশিপ ডাউন’ রচনা করেন। রচনার অন্যতম আকর্ষণ খরগোশকে দিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাষায় কথা বলানো। ফরাসি শব্দ ল্যাপিন-এর অর্থ খরগোশ; মাঝে মাঝে খরগোশ সমাজ বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়। ১৯৯৬ সালে লেখকের পরবর্তী সিকুয়েল ‘টেইলস ফ্রম ওয়াটারশিপ ডাউন’-এও ভাষাটাকে অকপটে সামনে আনা হয়েছে।

রিচার্ড এডামস্ এবং তাঁর বইয়ের ফ্ল্যাপ


রিচার্ড এডামস্ মাত্র কয়েক ডজন শব্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তার লেখায়। কিন্তু পরবর্তীতে তার সমর্থকেরা একে পৃথক ব্যকরণ এবং শব্দভাণ্ডারসহ কার্যকরী এক ভাষাতে পরিণত করে। 

“Os e layth Frithyeer hyaones, on layth zayn yayn dahloil.”—প্রচণ্ড রোদ পড়েছে আজ। আমরা ফুল খুঁজতে বের হব।

না’ভি : অ্যাভাটার

বিখ্যাত পরিচালক জেমস ক্যামেরুন তার সৃষ্টিশীলতার নজির অনেক আগেই রেখেছেন। ২০০৯ সালে অ্যাভাটার ছিল সেই তকমাকে আজীবনের জন্য পাকাপোক্ত করা। সিনেমাটিতে একটা আলাদা জাতি না’ভিকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে একটা স্বতন্ত্র ভাষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

নীল বর্ণের এই জাতির স্বাতন্ত্র্যকে আরো বাস্তবতা দিতে সৃষ্টি করা হয় না’ভি ভাষা


সঠিক সময়ে তাকে সাহায্য করেন ভাষাবিজ্ঞানী বন্ধুবর পল ফ্রমার। তিনি বিস্তৃত শব্দভাণ্ডার আর ব্যকরণের মধ্যদিয়ে জন্ম দিলেন নতুন এক প্রকাশভঙ্গির। আর দর্শক-ভক্তরাও দ্রুত তা গ্রহণ করল। পল ফ্রমারের সহযোগিতাতেই ভাষাটির আরো অগ্রগতি সাধন করা হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়—“Fayvrrtep fìtsenge lu kxanì. Fìpoti oel tspìyang, fte tìkenong liyevu aylaru.”—দানব এখানে নিষিদ্ধ। আমি একে খুন করব পরবর্তীদের শিক্ষা দেবার জন্য।

ডথরাকি : গেইম অব থ্রোনস

জর্জ আর আর মার্টিন তার বেস্টসেলার মহাকাব্যিক আখ্যান ‘এ সং অব আইস এন্ড ফায়ারস্’-এ অশ্বারোহী যাযাবার গোষ্ঠী ডথরাকির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। বইটাতে মার্টিন অল্প কিছু শব্দও উল্লেখ করেন তাদের ব্যবহৃত ভাষার। কিন্তু পরবর্তীতে এইচভিও টেলিভিশন সিরিজ ‘গেইম অব থ্রোনস’-এ ডেভিড পিটারসন কয়েকটি শব্দ থেকে একটি স্বতন্ত্র ভাষাকেই বের করে আনেন।

ডেভিড পিটারসনের চেষ্টায় পরিণত হয় এক পৃথক ভাষা ◢


যেহেতু ডথরাকিদের বেশিরভাগ সময় কাটে ঘোড়ার পিঠে; তাই ভাষার সাথে ঘোড়ায় ওঠা ও নামার ব্যাপারটাই বেশি সম্পর্কিত। টিভি সিরিজে অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের উচ্চারণ দুর্দান্ত ছিল। আর একারণেই দর্শকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ভাষা। তারাও শিখে ফেলে—“Hash yer dothrae chek asshekh?”—কেমন হলো আজকে ঘোড়ায় যাত্রা?

ক্লিনগন : স্টার ট্রেক

সবচেয়ে জনপ্রিয় ফিকশনাল ভাষার মধ্যে অন্যতম ক্লিনগন। ভাষাবিজ্ঞানী মার্ক ওকরান্ড বিখ্যাত টেলিভিশন শোতে ক্লিনগন জাতির বিশেষ প্রকার ভাষাকে সামনে আনেন। ওকরান্ড বেশকিছু বইও প্রকাশ করেন এই ভাষাকে সামনে রেখে। ক্লিনগন ভাষা ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত একটা সংস্থা পাক্ষিক জার্নালও প্রকাশ করে একে উৎসর্গ করে।

ক্লিনগন লিপির দৌরাত্ম এতটাই যে; প্রকাশিত হয় জার্নাল


ভক্তেরা পরবর্তী সময়ে বিয়ের উৎসব সঞ্চালনা এবং গান লেখাতে এই ভাষার ব্যবহার করতে শুরু করে। পরিস্থিতি এতটাই এগিয়ে যায় যে, শেক্সপিয়ারের নাটক হেমলেট পর্যন্ত লিখিত হয় ক্লিনগন ভাষায়। প্রায়শ ভাষাটি ইংরেজিতে বর্ণান্তকরণ করে লেখা হয়। যেমন—“nuqDaq oH puchpa e”—বা বাথরুমটি কোথায়?

এলভিশ : জে আর আর টলকিনের রচনাবলি

জে আর আর টলকিন ছিলেন একজন বিচক্ষণ ভাষাতাত্ত্বিক এবং অভিধানকার। কোনো বিখ্যাত লেখা শুরু করার আগেই তিনি একটি ভাষা সৃষ্টি করার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালান। দিনশেষে অভাবনীয় সফলতা এসে ধরা দেয়। ‘হবিট’ এবং ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ রচনার ক্ষেত্রে সেই ভাষা ব্যবহৃত হয় এলভ্-জাতির ভাষা হিসাবে। ভাষাও পরিচিতি পায় এলভিশ নামে।

কৃত্রিম ভাষাগুলোর মধ্যে সবথেকে সফল এলভিশ


পরবর্তীকালে দারুণ জনপ্রিয়তায় গ্রহণযোগ্যতা পায় ভাষাটি। পাঠক ও ভক্তদের কাছে ভাষাটা দুটি গঠনে গৃহীত হয়েছে। প্রথমত, কুয়েনইয়া বা উচ্চ এলভিশ আর দ্বিতীয়ত সিনডারিন। উভয়েই গড়ে উঠেছে ফিনিশ (ফিনল্যান্ডের ভাষা) এবং ওয়েলশ্ (ওয়েলসের ভাষা) এর ওপর ভিত্তি করে। টলকিন এই দুটি ভাষা নিয়েই গবেষণা করেছিলেন। আবার জন্ম নেওয়া ভাষার রূপ দুটোকে বিভিন্ন উপভাষায় বিভাজন করা যায়। এলভিশ বর্ণলিপির মধ্যেও আছে বেশ কিছু পার্থক্য। তাদের একটা দেখা যায় ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ সিনেমাতে ঠিক রিংটার গায়ে। উদাহরণ স্বরূপ—“Elen síla lumenn’ omentielvo”—বা একটি নক্ষত্র আলো দেয় আমাদের মিলন মুহূর্তে।

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;