অ্যাথলেটদের অবসর-পরবর্তী বিচিত্র পেশা
অবসর নেওয়া ক্রীড়াব্যক্তিত্বদের প্রাণবন্ত ও লক্ষ্যকেন্দ্রিক মানসিকতা খেলোয়াড়ি দিনগুলোর পরও যেভাবে তাঁদেরকে প্রতিশ্রুতিশীল ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করে, তা যে কারো জন্যই শিক্ষণীয়। অ্যাথলেটদের অবসর-পরবর্তী জনপ্রিয় পেশাগুলোর মধ্যে রয়েছে অভিনয়, গান, কোচিং, ব্যবসা, টেলিভিশন ধারাভাষ্য ইত্যাদি। তবে অবসর নেওয়া অনেক অ্যাথলেটের অপ্রত্যাশিত আর বিচিত্র সব পেশা বাছাইয়ের তথ্যে নিশ্চিতভাবেই চোখ কপালে উঠবে আপনার।
উইলিয়াম ‘মুকি’ উইলসনের কথাই ধরুন। দীর্ঘ ১২ বছরের সফল বেসবল ক্যারিয়ারে নিউইয়র্ক মেটসের হয়ে ওয়ার্ল্ড সিরিজসহ মুকি জিতেছেন অনেক কিছু। অবসরের পরও মেটসের সাথে নানা কার্যক্রমে যুক্ত থাকা মুকির সুপ্ত আগ্রহ রয়েছে আরেকটি বিষয়ে—ট্রাক ড্রাইভিং! “প্রয়োজনের তাগিদে নয়, ব্যাপারটাকে বরং আমি বেশ উপভোগই করি”—এক সাক্ষাতকারে বলছিলেন তিনি। ড্রাইভিংয়ের নেশায় গাড়ি ছেড়ে ট্রাক কেন, সেটি অবশ্য জানা যায়নি।
তবে খেলা ছাড়ার আগেই তিনবারের এনবিএ চ্যাম্পিয়ন শ্যাকিল ও’নিল ২০০৫ সালে সম্মানিত হন যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি মার্শাল হিসেবে। অবসর-পরবর্তী সময়ে টেলিভিশন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করা শ্যাক বেশ কয়েকবার প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হন যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকাণ্ডে। ২০১৫ সালে দক্ষিণ ফ্লোরিডার রিজার্ভ পুলিশ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব নেবার আগে এই জনপ্রিয় বাস্কেটবল খেলোয়াড় একই পদে কাজ করেছেন লস এঞ্জেলেস ও মায়ামিতে।
ফুটবলের বুটজোড়া তুলে রাখবার পর বেশ ব্যাতিক্রমী এক পেশাতেই যুক্ত হন সাবেক ইংলিশ তারকা ডেভিড হিলিয়ার। তাঁর ক্লাব আর্সেনালের নামের অর্থ হচ্ছে অস্ত্রাগার, আর হিলিয়ার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পর্বে বনে গিয়েছেন দমকলকর্মী। নব্বই দশকের অগ্রভাগে গানারদের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ, লিগ কাপ জেতা হিলিয়ার দ্য সান পত্রিকাকে জানান, স্ত্রীর পরামর্শেই বেছে নিয়েছিলেন দমকলকর্মীর কাজ। “ফায়ার ব্রিগেডের কাজে সহজেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি, কেননা বাড়ি থেকে দূরে পুরো ৩-৪ দিন আমরা প্রায় ১২ জন একসাথে যুক্ত থাকি—ঠিক যেমনটা থাকা হতো ম্যাচের আগে আর্সেনালের টিম হোটেলে”, বলছিলেন হিলিয়ার।
এনবিএ হল অব ফেমার আদ্রিয়ান ড্যান্টলি খেলা ছাড়বার পর যুক্ত হন ডেনভার নাগেটসের সহকারী কোচ হিসেবে। তবে ২০১৩ সালে সব ছেড়ে ড্যান্টলি নেমে পড়েন ইস্টার্ন মিডল স্কুলের শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারে সহায়তা বা ক্রসিং গার্ডের কাজে। বিপুল সম্পদশালী এই বাস্কেটবল গ্রেটের কাছে নতুন এই পেশা অবশ্যই বাড়তি আয়ের মাধ্যম নয়। “আমি কেবল বাচ্চাদের জন্য এটি করেছি,” বলেছিলেন ড্যান্টলি, “আমি সারা দিন বাড়ির চারপাশে বসে থাকতে চাইনি। গত সাত মাসে আমি নিশ্চিতভাবে দুটি জীবন বাঁচিয়েছি, দুবার গাড়িচাপা পড়ারও অবস্থা হয়েছিল আমার। এই পথে চলা প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ ড্রাইভিংয়ের সময় ফোনকল বা টেক্সটিংয়ে ব্যস্ত থাকে আর ক্রসিং গার্ড হিসেবে যুক্ত না হলে বিষয়টা আমার অজানাই রয়ে যেত।”
ফাবিয়েন বার্থেজের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? ফ্রান্সের হয়ে ১৯৯৮ ফুটবল বিশ্বকাপ জেতা টেকো মাথার এই গোলরক্ষক বেশ আলোচিত ছিলেন ডি-বক্সে দুরন্ত গতিতে ছোটাছুটির জন্য। অবসরের পর সেই গতির খেলায় আরো ভালোভাবে ঝুঁকেছেন মোটরস্পোর্ট ইভেন্ট লিঁ মা-এ নাম লিখিয়ে। ২০১৪ সালে নবম আর ২০১৬ সালে অষ্টম স্থানে থেকে প্রতিযোগিতা শেষ করলেও ২০১৭ সালে সাবেক এই ম্যান ইউনাইটেড গোলরক্ষক ট্র্যাক ছাড়েন ফিনিশিং লাইনে পৌঁছাবার আগেই।
মাথায় পাওয়া আঘাতের সাথে যুদ্ধে হার মেনে মাত্র ৩১ বছর বয়সেই অবসর নেন লিভারপুল সেন্টার-ব্যাক ড্যানিয়েল অ্যাগার। তবে মাঠের বাইরেও বেশ সপ্রতিভ অ্যাগার পরবর্তীতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন পেশাদার উল্কি বা ট্যাটুশিল্পী হিসেবে। বর্তমান সময়ে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ট্যাটু পার্লার ‘ট্যাটুডু’-এর জন্ম হয় এই ড্যানিশ ডিফেন্ডারের হাত ধরে।
ইংলিশ অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ ২২ গজের মারমুখী মেজাজ বজায় রেখেছেন অবসরের পরও। তবে উইলো ব্যাটের বদলে হাত চালিয়েছেন বক্সিং গ্লাভস মুড়িয়ে। তাঁর এই বক্সিংপ্রীতি নিয়ে বিবিসি একটি ডকুমেন্টারিও বানিয়েছে। শুরুর দিকের বেশ কটি লড়াইয়ে অসহায় আত্মসমর্পণ করা ফ্লিনটফ ম্যানচেস্টারের এক রিংয়ে হারিয়ে দিয়েছিলেন মার্কিন বক্সার রিচার্ড ডসনকে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হওয়া ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপের জার্মান দলের সদস্য টিম উইজ আবার ছাড়িয়ে গেছেন ফ্লিনটফকেও। ভের্ডার ব্রেমেনের সাবেক গোলরক্ষক ফুটবল-অধ্যায় শেষ করে নাম লেখান পেশাদার রেসলিংয়ে। জনপ্রিয় ‘ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্ট’ বা ডব্লুডব্লুই ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে যুক্ত হয়ে রিংয়ে বেশ ভালোই নাম করেন একসময়ের দক্ষ পেনাল্টি সেভার উইজ।
খেলাধুলার প্রশস্ত মাঠ ছেড়ে রাজনীতির বন্ধুর ময়দানে এসেছেন অবসরে যাওয়া অনেক ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। তবে দীর্ঘ এ তালিকায় জ্বলজ্বলে এক ব্যতিক্রম ইমরান খান। পাকিস্তান ক্রিকেট দলের এযাবতকালের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় এই ইমরানই কিনা, সে বিষয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে বিশ্বকাপজয়ী হার্টথ্রব এই অলরাউন্ডার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেও নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। ১৯৯২-এর জাতীয় ক্রিকেট হিরো এখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।