নিজের ব্যক্তিত্ব কি পরিবর্তন করা যায়?



তানিম কায়সার, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ব্যক্তিত্ব কি কেবল জীবনের অভিজ্ঞতার সঞ্চার?

ব্যক্তিত্ব কি কেবল জীবনের অভিজ্ঞতার সঞ্চার?

  • Font increase
  • Font Decrease

একবার একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখা হয়ে গেল এক ভদ্রলোকের সাথে। ওয়েটিং রুমে আমারই পাশের সোফায় বসেছিলেন তিনি। অল্প পরিচিত হওয়ায় সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করার পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি কী করি। উত্তরে বললাম পড়াশোনা। তিনি তখন আমাকে আমার পড়াশোনা রিলেটেড একটি প্রশ্ন করলেন। আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে যাওয়ায় উত্তর দিতে গিয়ে ‘ইয়ে মানে’, ‘মনে হয়’ এসব বলতে শুরু করলাম। লোকটি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “আমি যা বলব তা কিন্তু, ইয়ে মানে, মনে হয়, হতে পারে এসব দিয়ে বলব না। আমি যা বলব কনফার্ম করেই বলব।”

আমি তার কথা শুনে অবাক হলাম। তাকে কিছুটা থামিয়ে দিয়ে আমাকে করা প্রশ্নের জবাব বলতে শুরু করলাম। যদিও উত্তরের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত ছিলাম না। তিনি ব্যাপারটি বুঝতে পেরে আমাকে বললেন, যা জানেন না, তাও বলার ইচ্ছে হচ্ছে, এটা তো ভালো ব্যক্তিত্বের লক্ষণ না।

আমি এবার আর কথা বাড়ালাম না, থামলাম। এই লোকটা আমার বোকামি ধরে ফেলেছেন। এরপর লোকটা চলে গেলেন। যাওয়ার সময় বললেন, একটু নাড়া দিলাম, যাতে বদলে যান। আমি তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার চলে যাওয়া দেখতে থাকলাম। কিন্তু তার বলা কথাগুলো আসলেই আমাকে নাড়িয়ে দিল। আজকে তাই ‘ব্যক্তিত্ব’ নিয়ে আলোচনায় আমার এই গল্পটাই প্রথমে মনে পড়ে গেল।

মানুষ তার স্বাভাবিক যে সমস্ত বাহ্যিক ও মানসিক আচরণ বা বৈশিষ্ট্য দ্বারা অন্য ব্যক্তি বা সমাজকে প্রভাবিত করে তাকে ব্যক্তিত্ব বলে। একজন মানুষের নিজেকে তারই মতো অন্য আরো একশজন থেকে আলাদা করে নেওয়ার একমাত্র উপায় হলো তার ব্যক্তিত্ব। আমরা প্রায়শই বলি, “শুধু মানুষ হয়ে জন্ম নিলেই মানুষ হওয়া যায় না।” এই যে একজন মানুষ আসলেই মানুষের মতো মানুষ হতে পেরেছেন কিনা তা নির্ধারণ করে দেয় তার ব্যক্তিত্ব।

বেশিরভাগ মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ব্যক্তিত্ব একটি আপেক্ষিক বিষয়, সাধারণত একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষের মধ্যে যেসকল গুণ লক্ষ করা যায় তা হলো—সামাজিক, আত্মসচেতন, বুদ্ধিমান, মেজাজ নিয়ন্ত্রণ, আবেগময়তা, আত্মবিশ্বাস, সাফল্য অর্জন ইত্যাদি।

বিজ্ঞানীগণ মনে করেন আমাদের ব্যক্তিত্বসমূহ অনেকটা দাঁতের মতো। এরা দিনের পর দিন স্থিতিশীল থাকে, তবে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনও হতে পারে। তাহলে আমরা কিভাবে তাদের পরিবর্তন করব? দাঁতের ক্ষেত্রে এটি পরিষ্কার, আঁকাবাঁকা দাঁত সোজা করা হয় চিকিৎসার মাধ্যমে। তবে আমাদের ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে এটি অস্পষ্ট। সবার মনেই এই প্রশ্নটা আসে—ব্যক্তিত্ব কি কেবল জীবনের অভিজ্ঞতার সঞ্চার, নাকি নিজের ব্যক্তিত্বকে উদ্দেশ্য অনুযায়ী পরিবর্তন করা যাবে?

সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে লোকজন তাদের ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে এই প্রশ্নের উত্তরের সন্ধান করতে কমবেশি অনেক পদ্ধতি প্রয়োগ করেছে। থেমে নেই বিজ্ঞানীরাও। এই প্রশ্নের উত্তরের সন্ধান করতে গিয়ে শুরুতে তারা ৩৭৭ জন মনোবিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীকে বাছাই করেছিলেন এবং তাদের ৬০টি প্রশ্ন দিয়েছিলেন। যেগুলোর মাধ্যমে তাদের ব্যক্তিত্ব পরীক্ষা করা হয়। যেখানে ব্যক্তিত্ব গঠনের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বিষয় বা ‘বিগ ফাইভ’কে পরিমাপ করা হয়েছে। ‘বিগ ফাইভ’ বা সেই পাঁচটি বিষয় হলো অকপটতা, নীতিবোধ, বহির্মুখিতা, সম্মতি এবং স্নায়ুবিকলতা।

এরপরে, তারা অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞাসা করলেন, তাদের মধ্যে সেই পাঁচটি বৈশিষ্টের এমন কোনো একটি বা একাধিক বৈশিষ্ট্য রযেছে কিনা যেটি তারা পরিবর্তন করতে চান। তাদের অনেকেই দুটি বৈশিষ্ট্য বেছে নিয়েছিল যার ওপর তারা কাজ করতে চান। তবে সবচেয়ে বেশি মানুষ যেটি পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন সেটি হলো স্নায়ুবিকলতা হ্রাস (উদ্বেগের সময়ে উদ্বিগ্ন না হওয়া এবং উদ্বেগ কমানো)।

নিজেদের ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে পরবর্তী ১৫ সপ্তাহের জন্য প্রতি সপ্তাহে অংশগ্রহণকারীরা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তৈরি করা চারটি ‘চ্যালেঞ্জ’ গ্রহণ করে। এগুলো তৈরি করা হয়েছিল কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যুক্তিসঙ্গত এবং পরিমাপযোগ্য বিষয় হিসেবে যা চিন্তার ধরন এবং অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ—স্নায়ুবিকলতা প্রতিরোধের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল, যেখানে তাদের বলা হয় আপনি যখন ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হন, কমপক্ষে দুই মিনিট ব্যয় করুন সব থেকে সফল দৃশ্য কল্পনা করার জন্য। অন্যদিকে লোকজন বহির্মুখিতা পছন্দ করে না ফলে নতুন কারো সাথে নিজেকে পরিচয় করানোকে একটা চ্যালেঞ্জ মনে করে।

প্রতি সপ্তাহের শেষে, অংশগ্রহণকারীরা যে চ্যালেঞ্জগুলো গ্রহণ করেছিল তা সম্পন্ন করেছে কিনা তা জানাত এবং সেইসাথে পুনরায় ব্যক্তিত্ব পরীক্ষাটিতে অংশ নিত। অধ্যয়ন শেষে, তাদের অনেকে ব্যক্তিত্ব পরিবর্তনের লক্ষ্যে এগিয়েছিল। তবে কিছু প্রতিবন্ধকতাও ধরা পড়েছিল।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, একজন ব্যক্তি যত বেশি ‘চ্যালেঞ্জ’ সম্পন্ন করেছেন, তিনি তত বেশি অগ্রগতি করেছেন। উচ্চাকাঙ্ক্ষী বহির্মুখীরা যারা ১৫ সপ্তাহে ৩০টি চ্যালেঞ্জ সম্পন্ন করেছেন তারা ২০টি চ্যালেঞ্জ সম্পন্নকারীদের তুলনায় আরো বহির্মুখী হয়েছেন। কিন্তু ইতিবাচক ব্যাপার হলো তাদের মধ্যে যারা যত স্থিরভাবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে কাজ করেছিল, তারা ততই সফল হয়েছিল।

গবেষকরা তাদের গবেষণা পরিচালনা করার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আবিষ্কার করেন। সেটি হলো একটি মানুষের ব্যক্তিত্ব যেভাবে ধীরে ধীরে উন্নত হতে পারে, ঠিক তেমনি তার অবনতিও হতে পারে। যেমন ধরুন একজন মানুষ যখন সফল হতে থাকে তখন তার ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আসে। আর সেই পরিবর্তন হয় ইতিবাচক। কিন্তু যখন একজন মানুষ ব্যর্থ হতে থাকে তখনও তার ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আসতে থাকে এবং তা নেতিবাচক। এক্ষেত্রে ব্যর্থ ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্বকে বদ মেজাজ, অস্থিরতা এবং বিরক্তি—এসব দিয়ে বেষ্টিত করে রাখে।

এই গবেষণার মাধ্যমে কিছু বিষয়কে মাপকাঠি হিসেবে উল্লেখ করা হয় যেগুলো আপনার ব্যক্তিত্বে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। মনোবিজ্ঞানীগণ এক্ষত্রে কিছু পরামর্শ প্রদান করেন—
১। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলা থেকে বিরত থাকা।
২। মনোযোগ দিয়ে কথা শোনা। এটা অন্যের কাছে আপনার ব্যাপারে ইতিবাচক বার্তা দেবে এবং আপনিও তার ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন।
৩। ব্যক্তিত্বের সাথে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিজের জানার পরিধি বিস্তৃত করা।
৪। সবসময় নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করা। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু মানুষের সাথে চলাফেরা করলে আপনার জানার পরিধি কম হবে।
৫। ‘নেতৃত্বদানের ক্ষমতা আসে জন্ম থেকেই’—এই কথাটি সম্পূর্ণভাবে সঠিক নয়। আপনি যদি পেশাগত জীবনে সাফল্য অর্জন করতে চান, তাহলে নেতৃত্বদানের দক্ষতাগুলো বাড়িয়ে তোলা আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
৬। সম্মান এবং প্রশংসা অর্জন করা যায় ঠিক তখনই, যখন আপনি নিজে অন্যকে সম্মান এবং প্রশংসা করবেন। তাই অন্যকে সম্মান দিয়ে কথা বলুন।
৭। একজনের কথা অন্যজনের কাছে বলার অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করুন।

◤ চাইলে আপনি নিজের ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন করতে পারেন ◢


সামগ্রিকভাবে, এই গবেষণাটি নিশ্চিত করেছে, আপনি আপনার ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন করতে পারেন। তবে আপনি চাইলেই এটা খুব সহজে পরিবর্তন করতে পারবেন এমন না। এজন্য আপনাকে দিতে হবে যথাযথ গুরুত্ব। উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলোর মধ্যে নিজের ভেতর যেসব বিষয়ের ঘাটতি আছে সেসব ব্যাপারে কাজ করলে ব্যক্তিত্বে নিয়ে আসা যাবে ইতিবাচক পরিবর্তন।

মনে রাখবেন একজন মানুষ আর একজন অমানুষের মধ্যে প্রথম যে পার্থক্য তা হলো পারসোনালিটি বা ব্যক্তিত্ব। একজন মানুষ আর একজন মহামানুষের মাঝেও তাই। বিখ্যাতজনেরা বলে গেছেন, যার ব্যক্তিত্ব কিংবা চরিত্র বলতে কিছু নেই তার মতো দরিদ্র আর কেউ নেই।

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;