অবহেলিত বলধা গার্ডেনের ‘সূর্যঘড়ি’
অযত্ন আর অবহেলায় শ্রীহীন হয়ে পড়ে আছে রাজধানী ঢাকার ওয়ারী এলাকার শতবর্ষী বলধা গার্ডেনের ‘সূর্যঘড়ি’। ১৯০৯ সালের বলধা গার্ডেন প্রতিষ্ঠার সময়েই এ সূর্যঘড়িটি তৈরি করেছিলেন বলধা এস্টেটের জমিদার প্রকৃতিপ্রেমী নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী।
‘সূর্যঘড়ি’ কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে সোজা কথায় বলা যায়, সূর্যের আলোর সাহায্যে যে ঘড়ির সময় নির্ণয় করা হয় সেটাই সূর্যঘড়ি। দেশে দেশে সূর্যঘড়ি বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে।
প্রাচীনকালে বর্তমান সময়ের মতো ডিজিটাল ঘড়ি কিংবা কাঁটার ঘড়ি ছিল না। তখন সময় নির্ধারণ করা ছিল খুবই দুরূহ কাজ। দিনের বেলা আকাশে সূর্যের অবস্থান দেখে আনুমানিক সময় নির্ধারণ করা হতো।
ইতিহাস বলছে, আনুমানিক সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে মিশর ও ব্যাবিলনে এমন ঘড়ির উৎপত্তি হয়েছিল। সূর্যঘড়ি দিনের বেলা কাজ করলেও রাতে এ ঘড়ি কোন কাজে আসে না।
বলধা গার্ডেনের যে সূর্যঘড়ি, সেটি কনক্রিটের একটি স্থাপনা। এ স্থাপনার পূর্ব-পশ্চিমে উঁচু। এর মধ্যবর্তী অংশ অবতল আকৃতির অর্ধবৃত্তাকার। এ অবতল অংশে সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দাগ কেটে সময় লেখা আছে। মাঝ বরাবর আনুভূমিকভাবে লোহার একটি চ্যাপ্টা দণ্ড স্থাপন করা আছে। এ দণ্ডের ছায়া অবতল অংশের যে স্থানে পড়ে তা পড়ে সময় নির্ণয় করা হয়।
সরেজমিনে বলধা গার্ডেনের সূর্যঘড়ি পরিদর্শন করে দেখা যায়, এর কনক্রিটের স্থাপনার কোন কোন স্থান ভেঙ্গে গেছে। সময় নির্ধারণের জন্য এর অর্ধবৃত্তাকার অবতল যে অংশে দাগ কাটা হয়েছে তার বেশির ভাগ অংশের দাগই উঠে গেছে। ঘড়িতে কাঁটার ছায়া পড়লেও বোঝার উপায় নেই কয়টা বাজে।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্য বলধা গার্ডেনের সূর্যঘড়ি। কিন্তু এর চারিদিকে বড় বড় বিল্ডিং হওয়ায় আগের মতো সূর্যঘড়িতে আর ছায়া পড়ে না সময়ও নির্ধারণ করা যায় না। সূর্যঘড়ি কিভাবে কাজ করে দর্শনার্থীরা তা দেখা থেকে বঞ্চিত হয়।
সূর্যঘড়ির বেহাল অবস্থা সম্পর্কে বলধা গার্ডেনের পরিচালক হক মাহবুব মোর্শেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি স্থাপনাটির স্থানে স্থানে ভেঙ্গে যাওয়া ও লেখা উঠে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন।
তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, মাত্র দেড় মাস হলো তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। দায়িত্ব নিয়েই উদ্যানের বিভিন্ন অসুবিধাগুলো চিহ্নিত করেছেন। ঘড়িটি মেরামত ও পুনরায় দাগ কাটার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাল একজন শিল্পী দিয়ে কাজ করানোর গুরুত্ব তিনি অনুধাবন করেছেন।
শিগগিরই ঘড়িটিকে আগেই চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ঘড়িটিতে রোদ না লাগার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজউক ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়। উদ্যানটির সাইকী ও সিবিলী উভয় অংশের চারিদিকে বড় বড় বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে। এতে করে সূর্যঘড়ির কার্যকারিতা ম্লান হয়ে গেছে। এখন খুব অল্প সময় ঘড়িটি রোদ পায়।’
দুর্লভ সব উদ্ভিদের জন্য বিখ্যাত বলধা গার্ডেন। ৩.৩৮ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত এ উদ্যান সাইকী ও সিবিলী নামক দুটি অংশে বিভক্ত। উদ্যানের জৌলুস বাড়ানোর জন্য সিবিলী অংশে স্থাপন করা হয়েছে সূর্যঘড়ি।