কিশোরগঞ্জের সমরেশ বাবু
কিশোরগঞ্জের সমরেশ বাবু নামে তিনি সমধিক পরিচিত। হাওরের জনপদ ইটনার মতো একটি অতি প্রান্তিক এলাকায় ১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করে গত ২০ অক্টোবর (২০১৯) এডভোকেট সমরেশ চন্দ্র রায় ৭৩ বছর বয়সে পরলোকগমন করেছেন। কিশোরগঞ্জের মানুষ তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছে, যা একাধিক স্মরণ সভা, স্মৃতিচারণে প্রতিভাত।
আমার আশৈশব পরিচিত তিনি। তার সুদীর্ঘ জীবনের অনেকটুকু সম্পর্কেই আমি ব্যক্তিগতভাবে জ্ঞাত। যার ভিত্তিতে আমি তাকে ভাটীবাংলার জনদরদী ঐতিহ্যের মরমী উত্তরাধিকার ও বিশিষ্ট সমাজসেবী-শিক্ষানুরাগী-আইনজ্ঞ হিসাবে অভিহিত করতে পারি।
সামাজিক জানাশোনার গন্ডি পেরিয়ে এডভোকেট রায়ের সঙ্গে আমার বেশ কয়েক বার নিবিড় যোগাযোগ হয়েছে। উচ্চশিক্ষা বা পেশাগত কারণে কিশোরগঞ্জের বাইরে অবস্থান করলেও জন্মশহরের সঙ্গে আমার সংযোগ কদাচ বিচ্ছিন্ন হয় নি। ফলে এডভোকেট রায় ও অন্যান্য শহরবাসী সুধীজনের সঙ্গে নৈমিত্তিক দেখা-সাক্ষাত, আলাপ-আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা সভা-সমাবেশে বক্তৃতাকালেও মূল শহরের চৌহদ্দীর মানুষগুলোর দেখা পেয়েছি। বিশেষত আমার জন্ম ও অবস্থান শহরের কেন্দ্রস্থলের গৌরাঙ্গ বাজার এলাকায় হওয়ায় যোগাযোগটি ছিল অতীব স্বাভাবিক ঘটনার মতো। ফলে সমরেশ বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে প্রতিনিয়ত।
একবার এডভোকেট রায়ের সঙ্গে আমার মুখোমুখি অবস্থান হয় আদালতে। একটি দেওয়ানি মামলায় আমাদের পক্ষে ছিলেন এডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন আর প্রতিপক্ষে এডভোকেট সমরেশ রায়। সেটি ছিল খুবই ছোট্ট একটি মিস কেস এবং তার রায় এসেছিল আমাদের পক্ষে। চমৎকার পেশাদারি দক্ষতায় এডভোকেট রায় আমার প্রতিপক্ষকে বিজয়ী করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। কিন্তু এর ফলে তার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক মোটেও নষ্ট হয় নি। বহু মানুষের সামনে তিনি উচ্চকণ্ঠে এমন একটি কথা বলেছিলেন, যা আজও আমার মনে আছে। তিনি বলেন, ‘পেশার কারণে আমি এই মামলা নিয়েছি এবং লড়াই করছি। কিন্তু আমার প্রতিপক্ষ হলেও আপনি বা আপনার পিতা আমার শ্রদ্ধাভাজন।’
সাহসের সঙ্গে সর্বাবস্থায় সত্য কথা বলার মানুষ ছিলেন তিনি। তিনি মোটেও ধামাধরা ও মিনমিনে ছিলেন না। কোনও ধরনের লেজুড়বৃত্তি ও কর্তাভজা মানসিকতা তার ছিলনা। প্রশাসন বা ক্ষমতার পোঁ ধরে তৈলমর্দনের যে প্রবণতা আজকাল অনেকের মধ্যেই যে দেখা যায়, তেমনটি তিনি কখনোই করেননি।
এডভোকেট রায়ের সঙ্গে ২০১৫ সালের পর আরও নিবিড়তা বৃদ্ধি পায়, যখন আমি আনুষ্ঠানিকভাবে কিশোরগঞ্জের সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য-শিক্ষা বিষয়ক সমীক্ষাধর্মী ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা বক্তৃতা’র সূচনা করি। সে বছর থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতবিদ গুণীজনের সম্মাননার মাধ্যমে আমার পিতা কিশোরগঞ্জের বরিষ্ঠ চিকিৎসক, ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামী, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আলহাজ ডা. এ. এ. মাজহারুল হক এবং আমার মহীয়সী মাতা সমাজসেবী আলহাজ নূরজাহান বেগমের উদ্যোগ, পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনায় প্রতিষ্ঠিত ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’-এর জনমানবকল্যাণমূলক বেসরকারি-অরাজনৈতিক উদ্যোগসমূহের সঙ্গে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক মাত্রা দৃঢ়তর হয়। আর্থ-মানবতা ও জনকল্যাণধর্মী বহুবিধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পথিকৃৎ ও উদাহরণ সৃষ্টিকারী সম্মাননা বক্তৃতা বহু ব্যক্তি ও সংগঠনের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়েছে। আমার প্রদত্ত সম্মাননা বক্তৃতার লিখিত ভাষ্যগুলো ব্যাপকার্থে ‘কিশোরগঞ্জচর্চা’র একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যেও পরিণত হয়েছে। আশার কথা এটাই যে, ক্রমে ক্রমে কিশোরগঞ্জে কর্মরত কল্যাণধর্মী ফাউন্ডেশনগুলোর মধ্যে একটি ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ তৈরি হয়ে সমাজ কাঠামোতে বিদ্যমান মূর্খতা, কূপমণ্ডুকতা, পরশ্রীকাতরতা, অশিক্ষা, অজ্ঞানতার বিপরীতে সম্মিলিত আলোকায়ন ধারাকেই বেগবান করছে। ব্যক্তি মানুষের সামাজিক জীবনে এই আলোকচ্ছটা আমাদের আশাবাদী ও উদ্দীপ্ত করে।
এডভোকেট সমরেশ রায় আমার ও ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম গভীরভাবে লক্ষ্য করতেন। সময় বা সুযোগ পেলে তিনি কথা বলে আমার পরিকল্পনা সম্পর্কেও জেনে নিতেন। আমি বেশ বুঝতে পারি যে, তিনি সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে ভাবেন এবং মানুষের জন্য কিছু করতে চান। হাসপাতাল বা শিক্ষায় দান, অনুদানেও তিনি এগিয়ে আসেন। এক পর্যায়ে তিনি ‘রাজেন্দ্র আশালতা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ গড়ে তার সমাজসেবামূলক কাজগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে নিয়ে এসে পরিচালিত করতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৩০ মার্চ, ২০১৭ সালে তিনি ‘রাজেন্দ্র আশালতা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ কর্তৃক কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আয়োজিত গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে আমাকে আমন্ত্রণ করেন। আমি সানন্দে উপস্থিত থাকি এ কারণে যে, ২০১৫ সালে আমরা যাকে ‘মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন’ কর্তৃক সংবর্ধিত করেছিলাম, তাকেই তিনি সম্মাননা জানিয়েছেন। অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সৎ ইতিহাসঅন্বেষা ও চর্চা, সুস্থ সামাজিক নিরীক্ষা ও আদর্শ-স্থানীয় ব্যক্তিত্বের সঠিক মূল্যায়নের দ্বারা আলো ও শুদ্ধতার জয় হয়ে ‘মাজহারুন-নূর’ তথা ‘আলোর প্রকাশ’ মর্মার্থটি অন্ধকার-অর্বাচীনতার গতানুগতিক ধারার বিপরীতে আশা জাগানিয়া আলোক শিখা জ্বালিয়েছে।
এডভোকেট রায় আলোর জন্য কাজ করেছেন শিক্ষা বিস্তার ও মানবকল্যাণের প্রেরণায়। তিনি বহু গুণীজন, দরিদ্র ছাত্র, বিপন্ন রোগীকে সাহায্য করেছেন। সংশ্লিষ্ট সকলেই কর্তব্য হবে এডভোকেট রায়ের বদান্যতাকে মনে রাখা। এ কথাও মনে রাখা দরকার যে, একটি অতি অবহেলিত, অতি পশ্চাৎপদ এলাকা থেকে উঠে এসে তিনি কঠিন জীবন সংগ্রামের মাধ্যমে জয়ী হয়েছেন এবং নিজের পিছিয়ে পড়া জন্মস্থানের তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষায়, জ্ঞানে, সংস্কৃতিতে এগিয়ে আনতে চেষ্টা করে গেছেন।
প্রসঙ্গত, কেন আমি এডভোকেট সমরেশ চন্দ্র রায়কে ভাটীবাংলার জনদরদী ঐতিহ্যের মরমী উত্তরাধিকার ও সমাজসেবী-শিক্ষানুরাগী অভিধায় আখ্যা দিয়েছি, তা খুলে বলা দরকার। আমরা জানি, প্রত্যন্ত এলাকা হলেও ভাটীবাংলার প্রাণকেন্দ্র ইটনার জনদরদী একটি ঐতিহ্য আছে। আঠারো-উনিশ শতকে ইটনার আনন্দমোহন বসু অবিভক্ত বাংলার রেনেসাঁ-পুরুষ। প্রথম র্যাংলার এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একদা সভাপতি আনন্দমোহন বসুর নামে কলকাতা ও ময়মনসিংহে দু’টি কলেজও রয়েছে। ফলে সমাজ প্রগতি ও শিক্ষায় তাঁর ঐতিহ্য অমলিন। ইটনার ভূপেশ গুপ্ত সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনের একজন অগ্রণী নেতা। মানুষের মুক্তির প্রচেষ্টায় তাঁর কর্ম ও জীবনের ঐতিহ্য বহুজনের অনুপ্রেরণার উৎস। জর্জ বিশ্বাস নামে পরিচিত দেবব্রত বিশ্বাস ইটনার জলমগ্ন মৃত্তিকার সোঁদা-গন্ধ সমগ্র বাংলার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ইটনার গুরুদয়াল সরকার কিশোরগঞ্জের আধুনিক উচ্চশিক্ষার প্রাণ-পুরুষ।
ইটনা তথা ভাটীবাংলার জনদরদী ঐতিহ্যের আরো বিবরণ দেওয়া যায়। কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় তা করছি না। তবে শতবর্ষ প্রাচীন জনদরদী ঐতিহ্য থেকে ইটনা বিচ্যুত হয়েছিল। অনেক দিন এমন কাউকে দেখা যায় নি, যিনি জন্মভূমির মুখোজ্জ্বল করার মতো কিছু করেছেন। বহু বছর পর মরমী উত্তরাধিকার হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন সমাজসেবী-শিক্ষানুরাগী সমরেশ চন্দ্র রায়। জনদরদী ঐতিহ্যের প্রকৃত উত্তরাধিকার তিনি। তাঁকে আমরা বলেছি সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী। কিশোরগঞ্জ ডায়বেটিক সমিতির ভবন নির্মাণ, স্কুল প্রতিষ্ঠা, বছর বছর বৃত্তি প্রদান, গুণীজন সম্মাননা ইত্যাদি বহুবিধ কাজের মাধ্যমে তিনি তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিশেষণগুলোকে সপ্রমাণিত করেছেন। তিনি একজন প্রবীণ ও নেতৃস্থানীয় আইনজীবীও বটে। এবং সর্বোপরি, একজন নীরব দাতা। পিতা-মাতার নামে ‘রাজেন্দ্র আশালতা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ প্রতিষ্ঠা করে তিনি তাঁর জীবনের সঞ্চয়ের প্রায় পুরোটাই তুলে দিয়েছেন। বৈশ্য যুগের প্রবল স্বার্থযুক্ত পরিস্থিতিতে এমন ত্যাগ খুব সহজ নয়। সমাজে এমন উদাহরণ খুব বেশি পাওয়াও যাবে না।
অতএব, বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ ও যুক্তিবোধের আশ্রয় নিয়ে বলা যায়, তিনি তাঁর স্বদেশবাসী ও জন্মভূমির প্রতি দায়িত্ব পালন করেছেন; জন্মভূমির মহান ব্যক্তিবর্গের ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে স্মরণীয় মানুষদের কাতারে নিজেকে শামিল করেছেন এবং শিক্ষানুরাগ, সমাজকল্যাণ ও দানশীলতার অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। সমাজে ইতিবাচক প্রণোদনা জাগ্রত করার জন্য আমাদের সামনে তার মতো একটি ত্যাগী ও কর্মচঞ্চল জীবনের অর্জনসমূহকে উপস্থাপন করারও প্রয়োজন রয়েছে, যা থেকে আত্মকেন্দ্রিক, ব্যক্তিস্বার্থবাদী, সমাজ ও মানুষের কল্যাণ প্রচেষ্টাহীনগণ পরার্থে কাজ করার শিক্ষা পেতে পারেন এবং সমাজহিতৈষী কাজে আরো অনেকেই উৎসাহিতও হতে পারেন।
একটি নির্মম সত্য তথ্য এখানে উল্লেখ করার তাগিদ অনুভব করছি। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে বহু আত্মকেন্দ্রিক, ব্যক্তিস্বার্থবাদী, সমাজ ও মানুষের কল্যাণ প্রচেষ্টাহীন লোকজনকে জানি, যারা জীবনের শেষ পর্যায়টি অতিক্রম করছেন অতীব কষ্টে চাকর ও কুকুরের সাহায্যে। জীবনে তারা খুবই সফল ছিলেন। ছিলেন ডাকসাইটে আমলা, অধ্যাপক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ইত্যাদি। কিন্তু তারা ছিলেন ভীষণ রকমের আত্মকেন্দ্রিক, ব্যক্তিস্বার্থবাদী, সমাজ ও মানুষের কল্যাণ প্রচেষ্টাহীন। নিজের, পরিবারের এবং সন্তানদের ব্যক্তিগত স্বার্থের বাইরে তারা পরের জন্য বিন্দুমাত্রও করেন নি। সন্তানদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানিয়ে ইউরোপ, আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন তারা। স্বার্থপর পিতা-মাতার স্বার্থপর সন্তানেরাও পিতা-মাতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজ নিজ স্বার্থে ব্যস্ত হয়েছে। পিতা-মাতাকে দেখার সময় তাদের নেই।
ফলে অতি স্বার্থপর পিতা-মাতার ধূর্ততা বিরাট বোকামিতে পর্যবসিত হয়েছে। সন্তান থাকার পরেও নিঃসন্তান এইসব স্বার্থপর পিতা-মাতা নিরাপত্তার জন্য পালিত কুকুরের প্রতি এবং নিজস্ব কাজ-কর্মের জন্য চাকর-বাকরের প্রতি নির্ভরশীলভাবে খুবই লাঞ্ছিত, অমানবিক ও নিম্ন স্তরের জীবন-যাপন করছেন। তাই, আপনার সন্তান মহা-কিছু হয়েছে তো আপনার বা সমাজের কি লাভ হচ্ছে? আপনার অতিরিক্ত স্বার্থপরতা আপনার কি কল্যাণ ও উপকার এনে দিয়েছে? এসব প্রশ্ন সচেতন মানুষ মাত্রেই নিজেকে করার দরকার আছে।
এক্ষেত্রে শিক্ষানুরাগী-সমাজসেবক সমরেশ চন্দ্র রায় বাস্তবিক অর্থেই একজন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি নিঃসন্তান। কিন্তু সমাজের অবহেলিত-শিক্ষাবঞ্চিত শত শত সন্তানের পিতা তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্কুলে শিক্ষার্থীরাই তাঁর সন্তান। নিঃসন্তান হয়েও তিনি নিঃসঙ্গতায় আক্রান্ত নন। চাকর বা কুকুর নয়, তিনি বেঁচে ছিলেন সমাজের শত শত মানুষের শ্রদ্ধায়-ভালোবাসায়। তিনি আলোকিত জীবন-যাপন করছেন অসংখ্য সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীর প্রতি আপত্য স্নেহে-মায়ায়-মমতায়-বদান্যতা।
এই নশ্বর জীবন শেষেও তিনি তাঁর অকৃত্রিম কর্ম ও ত্যাগের উজ্জ্বলতায় আপামর মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন। পরলোকের পথে তাঁর শেষযাত্রাতেইবতিনি নিঃশেষ হয়ে যাবেন না। তিনি অম্লান হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায় এবং প্রজন্ম-প্রজন্মান্তরের স্মৃতি ও সত্তায়।
জীবনের সফলতা বলতে যা আমরা সবাই অনুভব করি, তিনি সেটা বিজয়ী বীরের মতো অর্জন করতে সচেষ্ট হয়েছেন। তাঁর প্রয়াণে বেদনার সঙ্গে সঙ্গে একটি সার্থক জীবনের অবসান-যাতনা অনুভব করেছে কিশোরগঞ্জবাসী। ভাটীবাংলার জল ছলছল ভূগোলের আবেগ ও মায়া জড়িয়ে তিনি রয়েছেন সকলের হৃদয় স্পর্শ করে। কিশোরগঞ্জের শিক্ষা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নয়নে তিনি তাঁর সমকালের অগ্রসর চরিত্র রূপে সমাসীন হয়েছেন। মফস্বলের সমাজ প্রগতির অনন্য উদাহরণ হয়ে তিনি জাগ্রত থাকবেন।