করোনা নিয়ে বিজ্ঞানীদের কথা এত পরিবর্তন হয় কেন



তানিম কায়সার, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
তাপবৃদ্ধিতে ভাইরাসের পরিণতি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মতদ্বৈততা আছে

তাপবৃদ্ধিতে ভাইরাসের পরিণতি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মতদ্বৈততা আছে

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমানে সারা বিশ্বে করোনা মহামারির আকার ধারণ করেছে। ছুটছে পাগলা ঘোড়ার মতো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সারা বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ চেষ্টা করছেন এই ঘোড়ার মুখে লাগাম লাগানোর, একে থামানোর। কিন্তু এটা করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে প্রায়ই একজন বিজ্ঞানী আরেকজন বিজ্ঞানীর গবেষণাকে ভুল প্রমাণ করছেন বা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? বিজ্ঞান কেন তাদের একটি কথার ওপর স্থির থাকতে পারছেনা, এই বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ভাবনায় আছেন।

এ ব্যাপারে কথা বলছিলেন যুক্তরাজ্যের (UK) ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে (NHS) ইমার্জেন্সি মেডিসিন ট্রেইনি হিসেবে কর্মরত ডা. রাইক রিদওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের (USA) ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস এট অস্টিনে পিএইচডি গবেষণারত মাইক্রোবায়োলোজিস্ট হাসান উজ জামান। বিজ্ঞানীদের কথার এমন ঘনঘন পরিবর্তন কেন, এটা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মাইক্রোবায়োলোজিস্ট হাসান উজ জামান জানান, এটা আসলেই ঠিক যে করোনা নিয়ে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েকবার তাদের কথার পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেন, যদিও বিজ্ঞানীরা তাদের কথার এবং গবেষণার ব্যাপারে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলেছেন তবুও একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে যে তাদের মূল বিষয় কিন্তু এক। অর্থাৎ তারা মানুষকে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে বলছেন, বারবার হাত ধোয়া, আক্রান্ত ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনে থাকার কথা বলেই যাচ্ছেন। পরিবর্তন যা হচ্ছে সেটা রোগের আক্রমণ এবং আক্রান্ত করার ধরনের ব্যাপারে।

হাসান উজ জামান জানান, COVID-19 একদম নতুন একটি রোগ। সোজা বাংলায় যেটাকে “কাঁচা রোগ” বলে আখ্যা দেওয়া হয়। সেহেতু এ ব্যাপারে অবশ্যই বিজ্ঞানীদের কথা পরিবর্তন হবে। যেমন শুরুতে ধারণা করা হচ্ছিল এতে কেবল বয়স্ক ব্যক্তিদের আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। বাকিদের আক্রান্ত হলেও মৃত্যুর ঝুঁকি নেই। কিন্তু পরে আরেকদল বিজ্ঞানী জানালেন, প্রমাণও মিলল, এই রোগ যুবক, বৃদ্ধ সকলের জন্যেই হুমকির। এই যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, এর কারণ হলো এই রোগের ব্যাপারে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ ডাটা বিজ্ঞানীদের হাতে নেই। যার কারণে তাদের কথায় প্রায়ই এমন পরিবর্তন আসছে।

তিনি আরো জানান, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে যে আশি শতাংশ লোককে হসপিটালাইজড হতে হবে না, তারা বাসায় থেকেই এমনি এমনি সেরে উঠবেন। কিন্তু এই যে আশি সংখ্যা, তিনি আশঙ্কা করেন, এই সংখ্যায় পরিবর্তন হতে পারে। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন অবস্থার ভিত্তিতে মৃতের হার কমবেশি হয়েছে, বিভিন্ন বয়সী লোকের মৃত্যুর যে হার, সেখানেও পরিবর্তন এসেছে। একইভাবে ভাইরাসটির রিপ্রোডাকশন রেইট, সংক্রমণের হারের সংখ্যায়ও পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু মূল বিষয়ে তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। শ্বাসযন্ত্রের রোগ বা এজাতীয় ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় এ ব্যাপারে তারা সকলেই একমত। কেননা এগুলো আজকের গবেষণা নয়। এর আগেও সার্স কিংবা মার্সের সময় হওয়া বিভিন্ন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এসব জেনেছেন।

শুরুতে বেশ কিছু বিজ্ঞানী বলেছিলেন গরম আসার সাথে সাথে এর প্রকোপ কমতে শুরু করবে। এখন পর্যন্ত এই কথাটিই বিজ্ঞানীদের মত পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। কিছুদিন আগে আবার একদল বিজ্ঞানী এটাকে অস্বীকার করেন। কিন্তু অতি সম্প্রতি আবারও কিছু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে আসলেই তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ভাইরাসের কার্যকারিতা হ্রাস পাবার একটা সূত্র আছে। গরমে এই ভাইরাস টিকতে পারে না, এটা ভাবার পেছনে প্রধান যে বিষয়টা কাজ করেছে তা হলো এর আকৃতি। এই ভাইরাসের চারপাশে থিকথিকে একটা কোমল আবরণ আছে। শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের ক্ষেত্রে যেটা দেখা যায়—বেশি তাপমাত্রায় এই কোমল আবরণ থাকতে পারে না, নষ্ট হয়ে যায় ফলে ভাইরাসটা তখন আর কার্যকর থাকে না। এটিও অনেক আগে থেকেই গবেষণা দিয়ে প্রমাণিত। ২০১০ সালে গিনিপিগের ওপর পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাপারটি প্রমাণিত এবং পৃথিবীর প্রায় ৭৮টি জায়গায় এমনি কোমল আবরণযুক্ত ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে সত্যিই তাপমাত্রা বাড়লে এ জাতীয় ভাইরাসের প্রবাহ হ্রাস পায়।

তবে বিজ্ঞানে খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার হলো পরীক্ষাগারে যে ফলাফল পাওয়া যায়, বাস্তব ক্ষেত্রে সবসময় হুবহু তা হয় না। বরং প্রায়ই ভিন্ন হয়ে থাকে। গিনিপিগের ওপর পরিচালিত গবেষণাকে আমলে নিয়েও তাই বাস্তবে কী ঘটে তার মুখাপেক্ষী থাকতে হয় বিজ্ঞানীদের।

গ্রীষ্মে ভাইরাসের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়ার পেছনে অবশ্য অন্য একটি কারণ আছে। সূর্যের আলো বেশি থাকে। মানুষ প্রচুর পরিমাণ সূর্যের আলো তথা ভিটামিন ডি গ্রহণের সুযোগ পায় যেটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আর এ কারণেই শীতকালের তুলনায় গরমকালে ভাইরাসজনিত রোগ ব্যাধি খুব কম দেখা যায়। এছাড়া যারা ভিটামিন ডি-এর বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করেন তারাও এই সময়ে সুফল ভোগ করবেন।

যুক্তরাজ্যের (UK) ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে (NHS) ইমার্জেন্সি মেডিসিন ট্রেইনি হিসেবে কর্মরত ডা. রাইক রিদওয়ান এই ব্যাপারে আরেকটি সম্পূরক তথ্য দেন। তিনি বলেন ১৯১৮ সালের দিকে যখন স্পেনিশ ফ্লু মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ল এবং লাখ লাখ লোক মারা গেল তখনও কিন্তু তাপমাত্রা এবং সূর্যের আলোর একটা প্রভাব লক্ষ করা গেছে। তখন দেখা গেছে যাদেরকে সূর্যের আলোতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে তারা তুলনামূলকভাবে সুস্থ হয়েছে বেশি।

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;