করোনাভাইরাস : দেশভেদে মৃত্যুহারে ফারাক কেন?



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
গ্রাফিক: বার্তা২৪.কম

গ্রাফিক: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ক্রমেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। আক্রমণের নতুন কেন্দ্র এখন ইউরোপ; বিশেষভাবে ইতালি। ইতালিতে মৃত্যুর পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায় তা জার্মানির তুলনায় দশগুণ বেশি। বেড়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রেও। মার্চের শেষতক ইতালিতে মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ১১%-এ। একই সময়ে জার্মানিতে ছিল মাত্র ১% এবং চীনে ৪%। বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে কম প্রকোপ ইসরায়েলে—মাত্র ০.৩৫%।

ব্যাপারটা বিস্ময়কর। একই ভাইরাস বিভিন্ন দেশে ভিন্ন আচরণ করছে। অথচ উল্লেখযোগ্য রকমের মিউটেশনও ঘটেনি যে, দেশভেদে ভিন্ন আচরণ করবে। একই সাথে একেক সময় একেক রকম আচরণের নজিরও স্পষ্ট। এর পেছনে কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বোধ হয় আমাদের সনাক্ত করা ও পরীক্ষা করার ধরন।

মৃত্যুহারে ফারাক
মৃত্যুহার কিভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে—এই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে দেশে দেশে। ফলে গণনায় ব্যাপক ব্যবধান জন্ম নেয়। এমনকি দুটি দেশের মৃত্যুহার সমান থাকলেও। সাধারণত দুই প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্বের মুখোমুখি হওয়া সম্ভব মৃত্যুহারের সংজ্ঞায়নে। প্রথমত, পরীক্ষা করে যত লোকের কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে; তাদের মধ্য থেকে যত জন মারা গেল তার অনুপাত। একে বলা হয় ‘কেইস ফ্যাটালিটি রেট’। দ্বিতীয়ত, সর্বোপরি যাদের ইনফেকশন নিয়ে মৃত্যু হয়েছে, তার অনুপাত। সংখ্যাটা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না বরং অনুমিত। একে বলা হয় ‘ইনফেকশন ফ্যাটালিটি রেট’। অন্য কথায় বললে কেইস ফ্যাটালিটি রেট বলতে বোঝায় যতগুলো মৃত্যু নিয়ে ডাক্তার নিশ্চিত এবং ‘ইনফেকশন ফ্যাটালিটি রেট’ বলতে যতজন মারা গেছে লক্ষণ নিয়ে।

বিষয়টা পরিষ্কার করার জন্য আমরা একটা উদাহরণ নিতে পারি। ধরা যাক, কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১০০ জন। তাদের মধ্যে দশ জনের অবস্থা এতটা নাজুক হয়েছিল যে, হাসপাতালে নিতে হয়েছে। পরীক্ষা করে সেখানে তাদের কোভিড-১৯ আক্রান্ত ঘোষণা করা হলো। কিন্তু বাকি ৯০ জনের কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। ধরা যাক, হাসপাতালে থাকা একজন রোগী মারা গেল অর্থাৎ বাকি ৯৯ জন বেঁচে গেল। এখন এই উপাত্ত থেকে আমরা দেখতে পাই কেইস ফ্যাটালিটি রেট ১০% কিন্তু ইনফেকশন ফ্যাটালিটি রেট মাত্র ১%।

সুতরাং কোনো দেশ যদি কেবল বেশি অসুস্থদের টেস্ট করানো হয় এবং অপেক্ষাকৃত কম অসুস্থদের টেস্ট না করানো হয়—তাহলে তাদের মৃত্যুহার অনেক বেশি হবে। যেমনটা বর্তমানে যুক্তরাজ্যে হচ্ছে। টেস্ট পরিব্যাপ্ত হলে মৃত্যুহার কম যাবার উদাহরণ জার্মানি এবং দক্ষিণ কোরিয়া।

পরীক্ষার প্রভাব
‘ফ্যাটালিটি রেট’-এর একই ধরন নির্ধারণে সতর্ক থাকার পরেও ফলাফলে ব্যবধান আসতে পারে। বিশ্বব্যাপী মৃত্যুহারে অসামঞ্জস্যের অন্যতম কারণ পরিব্যাপ্ত এবং যথাযথ পরীক্ষার অভাব। বর্তমানে প্রাপ্ত তথ্যগুলো আদতে এক দেশের সাথে অন্য দেশের তুলনা করার মতো না। এখনো বিভিন্ন দেশ থেকে আসা তথ্যগুলো একপাক্ষিক। সঠিক তথ্য পেতে গেলে, কেবল লক্ষণ নিয়ে আসা রোগীদের পরীক্ষা করলেই হবে না বরং যাদের লক্ষণ নেই তাদেরকেও আনতে হবে পরীক্ষার আওতায়। তবেই দেখা সম্ভব মহামারিটি কিভাবে আমাদের গোটা জনসংখ্যাকে আঘাত করছে। একটা নির্ভরযোগ্য এবং পরিশীলিত পথ বের হবে তবেই।

শুধু সঠিক উপাত্তের খাতিরেই না, কোভিড-১৯ বহনকারীকে চিহ্নিতকরণেও গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষা করা। তার বড় প্রমাণ হতে পারে উত্তর ইতালির ভো গ্রাম। প্রথম কেইস সনাক্ত করার সময়েই গোটা গ্রামের প্রায় ৩,০০০ লোককে পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছিল। দেখা গেছে ৩% অধিবাসী তখনই আক্রান্ত। অথচ কোনো প্রকার লক্ষণ দেখাচ্ছে না। একই ফল দেখিয়েছে আইসল্যান্ড। ৩৬,৫০০ নাগরিকের ৩% এর বেশি জনকে আনা হয় পরীক্ষার আওতায়। লক্ষণ আছে কিংবা নেই—উভয়কেই। দেখা যায় ০.৫% নাগরিক কোভিড পজিটিভ। লক্ষণহীন নাগরিক কম থাকায় ফলাফল কম এসেছে। তাই ধরে নেওয়া হয়েছে সংক্রমণ ১% হবে, যার সাংখ্যিক মান দাঁড়ায় ৩,৬৫০ জন।

পরীক্ষা কিভাবে করা হচ্ছে—তার ওপর নির্ভর করে উপাত্ত

তাছাড়া প্রাপ্ত উপাত্তগুলো প্রায়ই ক্লিনিক্যাল, মাঠ পর্যবেক্ষণ থেকে না। সেক্ষেত্রে মান আরো ব্যাপক হতে পারত। অন্তত এন্টিবডি টেস্ট-এর আগে অব্দি। এন্টিবডি টেস্ট হলো ভাইরাসের আক্রমণে আক্রান্তের দেহ কিভাবে সাড়া দিচ্ছে তা সনাক্তকরণ। এর মধ্য দিয়ে রোগী দেহের অগ্রগতি নিশ্চিত হয়ে তাকে দৈনন্দিন জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া যায়। ফলে এই টেস্টের উন্নয়ন এবং সরবরাহটা এসময় বিপ্লবাত্মক হতে পারে। ইতালির ভো-তে পরীক্ষার ব্যাপকতা বেশ ভালো ফল বয়ে এনেছে। আইসল্যান্ডের মৃত্যু সংখ্যা এখন অব্দি দুই।

কোভিড-১৯ মৃত্যু!
মৃত্যুহার হেরফের হবার পেছনে আরো কিছু কারণ সনাক্ত করতে পারি আমরা। প্রথমত, ডাক্তাররা ঠিক কীরকম মৃত্যুকে কোভিড-১৯ এর মৃত্যু বলে ঘোষণা করছেন। মনে হতে পারে বিষয়টা সহজ। যদি কেউ কোভিড-১৯ সংক্রমণ অবস্থায় মারা যায় তবে তা কোভিড-১৯ এর মৃত্যু। কিন্তু পেছনে এজমার মতো কারণও থাকতে পারে যা কোভিড-১৯-কে বর্ধিত করেছে মাত্র। হতে পারে মৃত্যুটা অন্য কোনো শারিরীক পূর্ব অক্ষমতার জেরে, যার সাথে কোভিড-১৯ এর সম্পর্ক ক্ষীণ। কোন অবস্থাকে মৃত্যুর কারণ বলে ধরা হবে?

খোদ দেশের ভেতরেই সরকারি পরিসংখ্যান থেকে ভিন্ন হতে পারে যে কারো হিসাব। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যবিভাগ প্রতিদিন আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ করে থাকে। এখানে সেইসব মৃত্যু অঙ্গীভূত যাদের কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিল। কিন্তু পেছনে ক্যান্সারের মতো অন্য কারণও থাকতে পারে। অন্যদিকে দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান দিচ্ছে অন্য হিসাব। সেখানকার পরিসংখ্যানে কেবল তারাই লিপিবদ্ধ, যাদের মৃত্যুসনদে কারণ হিসাবে কোভিড-১৯ আছে। অর্থাৎ ফলাফল পৃথক হতে বাধ্য। অবশ্য এদের কোনটা ঠিক বা কোনটা ভুল, তা বিষয় না। তাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব যৌক্তিকতা কিংবা দুর্বলতা আছে। ইতালিতে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত যে কারো মৃত্যুর কারণ হিসাবে আসে কোভিড-১৯ এর নাম। ফলে অন্যান্য দেশের তুলনায় তার উপাত্ত ভারী।

মৃত্যু কিভাবে সনাক্ত করা হচ্ছে; তা একটা বড় ইস্যু

সেদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তাররা আরো বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। কোভিড-১৯ মৃত্যুর তথ্য রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে জমা দেবার সময় তাদের প্রশ্ন করা হয়—রোগী কেমন অসুস্থতা নিয়ে মারা গেছেন। ডাক্তার ঠিক কী দেখে কোভিড-১৯ এর মৃত্যু সাব্যস্ত করলেন তা বের করা যায় এভাবে। হার্ট অ্যাটাক কিংবা অন্য কারণে মারা গেলে তা কোভিড-১৯ না। এভাবে উপাত্তে ফারাক হওয়াটা স্বাভাবিক। অবশ্য তা খুব বেশি না। বর্তমানে সরকারি রিপোর্টের ক্ষেত্রে আপাতত কোভিড-১৯ লক্ষণ থাকলে তা-ই ধরা হচ্ছে মৃত্যুর তালিকায়।

জটিল কারণ
কিছু রোগীর কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হয়নি, কিন্তু সন্দেহ থেকেও মুক্ত না। তখন পরিস্থিতি দাঁড়ায় আরো জটিল। এমন অনেক মৃত্যুই আছে, যাদের আগে থেকেই শারীরিক জটিলতা ছিল। মহামারির সময় মানুষ সাধারণত যে কোনো মৃত্যুর পেছনে একই কারণ খুঁজে পান। সঠিকভাবে দেখতে পেলে এই ভুল ধারণা থাকত না। একটা উদাহরণ হতে পারে ২০০৯ সালের সোয়াইন ফ্লু। প্রথম দিকে মৃত্যু হার দাঁড়িয়েছিল ১০% এর উপরে। এমনকি দশ সপ্তাহ পরেও বিভিন্ন দেশে হিসাবে করে বের হয়েছে ০.১% থেকে ৫.১% অব্দি। পরবর্তীতে গবেষকরা যখন নথি ঘাঁটলেনৎ, দেখা গেল সোয়াইন ফ্লুতে প্রকৃত মৃত্যুহার অনেক কম ০.০২% এর কাছাকাছি।

গোপন মৃত্যু
একদিকে বেশি গণনার মাধ্যমে যেমন মৃত্যুহারের উপাত্ত ভারী হয়ে উঠতে পারে। সেভাবে কিছু কারণে মৃত্যুহারের পাল্লা হালকা হতে পারে। দুটিই সত্যিকার হিসাবে থেকে বিচ্যুতি। রোগের লক্ষণ দেখা যায়নি কিংবা লক্ষণ দেখা গেলেও হাসপাতালে যায়নি, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত এমন কেইস নেহায়েত অল্প না। ফলে এইসব মৃত্যু নথিভুক্ত হচ্ছে না। ইতালির লোম্বার্ডির একটি গ্রামের নাম নেমব্রো। সেখানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দেখা যাচ্ছে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত মৃত্যু মাত্র ৩১ জন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেই সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কারণ গত বছরের এই সময়ের মৃত্যুহারের চেয়ে এবারের মৃত্যুহার কমপক্ষে চার গুণ বেশি। সাধারণত বছরের প্রথম মাসে ৩৫ জন ব্যক্তি মারা যায় নেমব্রোতে। এবছর মারা গেছে ১৫৮ জন। এই ফলাফল পরীক্ষাহীন কোভিড-১৯ এর মৃত্যুকেই নির্দেশ করে।

হাসপাতালে পরিষেবার মান, আইসিইউ কিংবা বেডের সংখ্যাও এখানে নিয়ামক হিসাবে কাজ করে। যে দেশের বেড সংখ্যা সীমিত তাদের খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয় কোভিড-১৯ সেবা প্রদানে। ফলে সামাজিক পর্যায়ে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। আবার বেডগুলো ঠিক কতটুকু দূরে দূরে বসানো হয়েছে—সেটাও কম গুরুত্বপূর্ণ না। যদি দুই বেডের মধ্যবর্তী দূরত্ব কম থাকে তাহলে এক বেডে কোভিড-১৯ রোগী থাকলে অন্য বেডে তা দ্রুতই পরিবাহিত হবে।

বয়সের ভূমিকা
দেশে দেশে মৃত্যুহার ব্যবধানের অন্যতম কারণ বয়সের তারতম্য। পরিসংখ্যান অনুসারে ইতালিয় নাগরিকদের চারভাগের একভাগের বয়স ৬৫’র বেশি; যা চীনের তুলনায় ১১% বেশি। মার্চের মাঝামাঝি ইতালিতে কেইস ফ্যাটালিটি দাঁড়িয়েছে ৭.২%। একই সময়ে চীনের ছিল তা ২.৩%। ৭০-৭৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ইতালিতে কেইস ফ্যাটালিটি রেট ছিল ১২.৮%, যেখানে চীনে ৮%। আশির বেশি বয়সের নাগরিকদের মধ্যে দেখলে ইতালিতে ২০.২% এবং চীনে ১৪.৮%। এই অসামঞ্জস্যের কারণ এখনো অমীমাংসিত।

ইতালিতে মৃত্যুহার বেড়ে যাবার একটা কারণ তাদের গৃহীত ব্যবস্থা। রোগীর শরীরে এন্টিবায়োটিক দিয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না, নেওয়া যায় ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে। এজন্য ভাইরাল ইনফেকশনগুলো প্রায়ই অবাধ চলাচল করতে পারে। এন্টিবায়োটিকের মধ্য দিয়ে তাই ভাইরাসের না, রোগীর মৃত্যু ঘটে। যা-ই হোক, নাগরিকদের স্বাস্থ্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। যাদের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা আছে তারা আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। যেহেতু হাসপাতালগুলো এখনো রোগীতে পূর্ণ এবং ডাক্তারেরা সব ব্যস্ত, আমাদের বোধ হয় আরেকটু অপেক্ষা করা দরকার।


মূলসূত্র - বিবিসি

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;