স্লাভোয় জিজেকের সাক্ষাৎকার

করোনাভাইরাস সমাজতন্ত্রকে নতুন সুযোগ দেবে



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
স্লাভোয় জিজেক

স্লাভোয় জিজেক

  • Font increase
  • Font Decrease

স্লাভোয় জিজেক বর্তমান দুনিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী মুখ। খুব কম দার্শনিক জীবিত অবস্থায় এতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছেন। দ্য সাবলাইম অবজেক্ট অব আইডিয়োলজি প্রকাশের মধ্য দিয়ে নজরে আসেন। মহামারি নিয়ে তার লেখা বই ‘প্যানডেমিক: দুনিয়া কাঁপানো কোভিড-১৯’ প্রকাশিত হয়েছে সদ্যই। এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চার্লি ন্যাশ; যা প্রকাশিত হয়েছে স্প্যাকট্যাটরে।


“ঠিক আছে, পারব। যদিও আমি অসুস্থ। (ভাইরাসের কারণে না)”

এই কথার মধ্য দিয়েই সাক্ষাৎকার নির্ধারিত হলো। স্লাভোয় জিজেকের সাথে এক ঘণ্টার ফোনালাপ। যেই আমি তাকে তার সময়ের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছি; জোর দিয়ে বললেন, “খুব বেশি প্রত্যাশা করবেন না। এটা ভাইরাস নয়। কিন্তু উপেক্ষা করি কিভাবে? ভাইরাসের অনেক লক্ষণই আমার মধ্যে আছে। তবুও আশার কথা হলো, এটা ভাইরাস না।”

“বহু বছর ধরেই লক্ষণগুলো বয়ে বেড়াচ্ছি।” তিনি যোগ করলেন। “জানেনই তো আমার হামেশাই নাক টানা ও অন্যান্য স্বভাবের ব্যাপারে।”

স্লাভোয় জিজেক বর্তমান দুনিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী মুখ

কথা ছিল প্রকাশিতব্য প্রবন্ধের বই A Left That Dares to Speak Its Name প্রসঙ্গে আলাপ হবে। বইটি নিয়ে সত্তর বছর বয়সী দার্শনিকের দাবি গত পাঁচ দশক ধরে লেখা তার বেশিরভাগ বইয়ের তুলনায় এটি সহজপাঠ্য। কিন্তু জিজেক বেশি আগ্রহী কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস নিয়ে কথা বলতে।

মাছ ধরার নৌকা নিয়ে নির্বোধ সিনেমাটা দেখেছি কিনা জিজ্ঞেস করার আগেই বলে নিলেন, “ইউরোপ এখন এক যথার্থ ঝড়ের নিকটবর্তী হচ্ছে।”

“সিনেমাটি অভিনেতা জর্জ ক্লোনির; নাম The Perfect Storm। পারফেক্ট স্টর্ম কাকে বলে জানেন? যখন বিপর্যয়গুলো, যেমন এখানে একটি টর্নেডো আর ওখানে একটি ঝড় এসে একসাথে মিলিত হয়। এবং এই একত্রীকরণ তাদের প্রভাবকেও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমার মনে হয় ইউরোপ এখন এক যথার্থ ঝড়ের নিকটবর্তী হচ্ছে।”—তিনি ব্যাখ্যা করলেন।

“আমি ঠাহর করতে পারছি না; আদতে এখানে হচ্ছেটা কী? সব হর্তাকর্তারা তাদের ঘোষণা শুরু করছেন এভাবে—‘আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই; আতঙ্কিত হবেন না।’ এবং তারপর তারা যা শোনাচ্ছেন তা ভীতিকর।” তিনি বলেন, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের প্রভাব ইউরোপের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

“এর সাথে যদি সম্ভাব্য শরণার্থীদের নয়া স্রোতকে যোগ করো; তবে দেখবে এটি যথার্থ অর্থেই ঝড়। আমি মনে করি ইউরোপ এখন এতটাই দুর্বল যে; সুসংগঠিত পন্থায় এর প্রতিক্রিয়া জানাতেও সক্ষম না। এই জন্যেই বলেছি, করোনাভাইরাস সমাজতন্ত্রকে নতুন সুযোগ দেবে।” তিনি বলেন।

“অবশ্যই আমি প্রাচীন ধাঁচের সাম্যবাদকে বুঝাচ্ছি না। সাম্যবাদ বলতে বুঝাচ্ছি তা-ই; যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে। আমাদের সংগঠিত করা, বিন্যাস করা ইত্যাদি ইত্যাদি। হায় খোদা, এটা একটা বিপদজনক পরিস্থিতি। তারা দেশে মাস্ক, রেসপিরেটর কিংবা অনুরূপ যন্ত্রপাতির স্বল্পতার কথা বলছে। আমাদের একে একটা যুদ্ধ হিসাবেই গণ্য করতে হবে। এক প্রকার ইউরোপীয় বিন্যাসের মতোই; সম্ভবত যুদ্ধবস্থার সৈন্য সমাবেশের মতো। এটা করা যেতে পারে; এটা এমনকি বাড়াতে পারে উৎপাদনশীলতাও।”—জিজেক বলতে থাকেন। “রাষ্ট্রীয় বিন্যাস, সামাজিক প্রচেষ্টা এবং সংগঠনের মধ্যে দিয়েও পুঁজিবাদের ভালো দিকগুলো রেখে দেওয়া সম্ভব। শুধু করোনা ভাইরাসের সাথে না, এটা প্রয়োজনীয় হতে পারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং উদ্বাস্তু সমস্যার মতো যে কোনো সংকটের সাথেই।”

আটলান্টিকের অপর পারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী?
“২০২০ সালের ডেমোক্রেটিক নমিনেশনের দৌরাত্ম্যে”, জিজেক বলেন, “সাম্প্রতিক কালের ঘটনাগুলোর দ্বারা আমার দীর্ঘদিনের উপমিতিগুলোই চূড়ান্তভাবে সত্যায়িত হয়। এটা কি স্পষ্ট না যে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিষ্ঠিত বার্তাটি হলো, ‘বার্নি স্যান্ডার্সের চেয়ে ট্রাম্প ভালো?”

“আমি খেয়াল করেছি তুমি ব্যাপারটা কিভাবে নিচ্ছো, চলো একে বলা যাক ‘নির্বাচনযোগ্যতার সমস্যা’। ডেমোক্রেটিক প্রচারণায় বলা হচ্ছে বার্নি স্যান্ডার্স কট্টরপন্থী ইত্যাদি ইত্যাদি। হায় খোদা, ট্রাম্প তো সেভাবেই নির্বাচনে জিতেছে। আমি বুঝাতে চাচ্ছি, একসময়ের বুলি—‘নির্বাচনে জিততে হলে সাবধানে কাজ করো; মধ্যমপন্থায় থাকো’, এখন আর কাজ করে না।”

“যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি এবং মূলধারায় আমাদের একটা সামাজিক বিপ্লবের শক্ত ভিত আছে। যথার্থ এক উপায় হিসাবে এটা অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ।”

জিজেক বলতে থাকলেন, মূলধারার ডেমোক্রেটিক কিংবা রিপাবলিকান পার্টি ক্রমেই পার্থক্য হারাচ্ছে। উদাহরণ হিসাবে ইঙ্গিত দেন সাম্প্রতিক সময়ে বিলিয়নিয়ার মাইকেল ব্লোমবার্গের নির্বাচনি দৌরাত্ম্যের প্রসঙ্গ টেনে। “ট্রাম্প নাকি স্যান্ডার্স?—তারা এটা বলে না, তবে ডেমোক্রিটিক কাছারিতে যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয়; তবে তারা কার্যত ট্রাম্পকেই বেছে নেবে। তাই আমি মনে করি, রাজনৈতিক পরিহাসটা এখানেই।”

জিজেকের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেক বেশি নিষ্ক্রিয়। তার অন্যতম ভুল যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের পেছনে অবস্থান করে সিরিয়া থেকে সরে আসা। তিনি একে ট্রাম্পের করা সবচেয়ে সর্বনাশা কাজ বলে দাবি করেছেন।

“ট্রাম্প কুর্দিদের বলি দিয়েছেন।” জিজেক বলেন, “প্রধান ভুক্তভোগী। সবাই তাদের শোষণ করতে চায়। কুর্দিদের প্রতি আমার পূর্ণ সহানুভূতি আছে। উত্তর ইরাকের রক্ষণশীল কুর্দিদের জন্য অতো না হলেও দক্ষিণপূর্ব তুরস্ক এবং উত্তর সিরিয়ার কুর্দিদের জন্য রয়েছে।”

“ট্রাম্প একতরফাভাবে পথ খুলে দিল। নতুন পরিস্থিতিতে সেখানে কেবল দুই ভাগীদার এরদোয়ান এবং পুতিন। তাদের দুজনের লক্ষ্যবস্তুও স্পষ্ট, ইউরোপ এবং ইউরোপের ঐক্যকে ধ্বংস করা। মানুষ এখনো খেয়াল করেনি যে, একই ব্যাপার ঘটছে লিবিয়ায়। একপক্ষকে রাশিয়া মদদ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। গৃহযুদ্ধের মধ্যে অন্যপক্ষকে সমর্থন দিচ্ছে তুরস্ক। এবং তারপর তারা চুক্তি করছে।”

“আমি মনে করি গোটাটাই সহযোগিতামূলক। এই টানাপোড়েন ইউরোপকে নতুন দফায় উদ্বাস্তুদের হুমকিতে ফেলেছে। এখন এটা বামপন্থীদের কাছে ভয়ংকর শোনাতে পারে। তারপরেও আমি মনে করি ইউরোপে নতুন উদ্বাস্তুদের স্রোত মানে পরিপূর্ণভাবে সেখানকার আদর্শিক এবং রাজনৈতিক সর্বনাশ। আমি উদ্বাস্তুদের বিপক্ষে না। কিন্তু চার বছর আগে প্রথম ধাক্কার সময়টাতেই একে আরো সংগঠিত উপায়ে মোকাবেলা করা উচিত ছিল। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির অর্থ কেবল হাঙ্গেরি কিংবা কয়েকটা দেশই না; গোটা ইউরোপকে ক্রমান্বয়ে দখল করে নেবে পপুলিস্ট সরকার। আমাদের ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না; কেমন অদ্ভুত মিত্র পেয়েছি এখানে।”

জিজেক মনে করেন ইউরোপের নিষ্ক্রিয়তা রাশিয়ার পুতিন এবং তুরস্কের এরদোয়ানকে ‘নয়া অক্ষশক্তি’র অংশ করেছে। যেটি তেল কিংবা উদ্বাস্তুদের মাধ্যমে যে কোনো সময় ইউরোপকে ব্ল্যাকমেল করতে পারে।

“ইউরোপের নিষ্ক্রিয়তায় আমি হতবাক”, তিনি বললেন। “তুরস্ক উদ্বাস্তুদের সাহায্য করলে আমরা তাকে ৬ বিলিয়ন ইউরো দিই। এটা ন্যক্কারজনক সমঝোতা। ঠিক আছে; কিন্তু আমাদের হাতে থাকা অপেক্ষাকৃত শান্তির চার বছর সময়কে ব্যবহার করা উচিত ছিল ইউরোপকে সংগঠিত করার জন্য। উদ্বাস্তুর বিরুদ্ধে না; পরিস্থিতির বদল ঘটানোর জন্য। অবশ্যই ইউরোপ উদ্বাস্তু গ্রহণ করবে, কিন্তু এটা কোনো সমাধান না।

“সেখানে সৌদি আরব, কুয়েত এবং আমিরাতের মতো সম্পদশালী দেশ আছে। তারা কোনো অভিবাসী নিচ্ছে না। কেন ইউরোপ? কেন সৌদি আরব, কুয়েত কিংবা আমিরাত নয়? তারা ধনী এবং সম্পদশালী। তাদের জন্য গ্রহণ করা সহজ হতো।”

বামপন্থী পপুলিস্টদের ব্যাপারে জিজেক সন্দেহপ্রবণ। তার দাবি, একসাথে কাজে জড়িত হতে নয়; “কেন ভুল হলো এই বিষয়ে চমৎকার বই লিখতে” তারা বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করে।

“আমি বরং শিষ্ট এবং বাস্তববাদী বামপন্থাকে গুরুত্ব দেব; যেটির কী করতে হবে তার একটা স্পষ্ট প্রস্তাবনা আছে। যেমন... ঠিক আছে, সোজাসুজি বললে, আমরা পুঁজিবাদ থেকে একেবারে বের হতে পারব না। তাহলে তার সাথে বোঝাপড়া কেমন হবে?” জিজেক বলেন, “পপুলিস্ট বামদের কাজ করতে হবে, কিভাবে পুঁজিবাদী কলকব্জাগুলোকে ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে।”

জিজেক বলেন, “ট্রাম্প এবং পপুলিজমের উত্থান আসলে উদার এবং মধ্যপন্থী ঐক্যমত্যের সমাপ্তির ইঙ্গিত।” সংখ্যাগুরুরা এর মধ্য দিয়ে হতাশ হয়েছে এবং আমরা আর পেছনেও ফিরতে পারব না। তাই হচ্ছে গোটা ইউরোপ জুড়ে। লি পেন (ফরাসি পপুলিস্ট রাজনীতিবিদ), এএফডি (জার্মানির পপুলিস্ট পার্টি) ও অন্যান্যসহ চারপাশে কেবল পপুলিস্ট বিদ্রোহ।” বামপন্থীদের উৎসাহিত করার আগে তিনি ঘোষণা করেন, “তাই করো; যা ডানপন্থী হয়ে ট্রাম্প করেছে।”

তিনি বলেন, “আমার মনে আছে, শুরুর দিকে মানুষ ভেবেছিল ট্রাম্প অনেক বেশি বিভেদ সৃষ্টিকারী। নাহ; আসলে এভাবেই তুমি জেতো। হিলারি হেরে গেছে কারণ সে চেষ্টা করেছে এই খেলাটা খেলতে। আমাদের আরো কেন্দ্রের দিকে যেতে হবে, নৈতিক সংখ্যাগুরু এবং নীরব নৈতিক সংখ্যাগুরু। আমার মনে হয় বামদের একে প্রশংসা করা উচিত। তাদের কৌশল যেন এমন না হয়, ‘আমরা প্রগতিশীল, আমরা বিপ্লবী, আমরা জনসম্মুখে বাজে কথা বলি’, আমি মনে করি বামপন্থা, নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার জন্য, এই পথেই নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে। উত্তরাধুনিকতা মানে যদি অশ্লীলতা, বিদ্রুপ, অসামঞ্জস্য এবং মিথ্যা সংবাদ হয়ে থাকে; তবে ট্রাম্প প্রকৃত অর্থেই উত্তরাধুনিক প্রেসিডেন্ট। এবং আমি মনে করি বামপন্থীরা লজ্জাহীনভাবে চিৎকার করতে থাকবে, “না, আমরা শুধুমাত্র কিছু প্রান্তিক দলের কথা বলছি না; বলছি সাধারণ, বিনয়ী, দরিদ্র দৈনন্দিন মানুষদের কথা।”

“বামদের এলজিবিটি কিংবা অমুক তমুক সংখ্যালঘুদের নিয়েও ঘোরগ্রস্ততা থামাতে হবে। আমি মনে করি, ভিন্ন জীবনাচার নিয়ে ঘোরগ্রস্ততা, সংখ্যালঘুদের, সম্পূর্ণভাবে শুধুমাত্র একটি কৌশল বড় ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যা এড়িয়ে যাবার।”

“শ্রেণি সংগ্রাম ফিরে আসছে”, জিজেক ব্যক্ত করলেন, “গত বছরের দুই বিস্ময়কর সফল সিনেমা ছিল জোকার এবং প্যারাসাইট। দুইটাই শ্রেণী সংগ্রামের ওপর দাঁড়ানো।”

“ডিজিটাল যুগ এই শ্রেণী সংগ্রামে শ্রমিকদের সাহায্য করবে কিনা; তা অস্পষ্ট। একদিকে ইন্টারনেট সরাসরি সামাজিক সহযোগিতার দ্বার খুলে দিয়েছে। আপনি নিমেষেই পৌঁছাতে পারবেন মিলিয়ন মানুষের কাছে। অন্যদিকে, এখানেই জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ আবির্ভুত হন।”

“আমরা ক্রমেই সচেতন হচ্ছি, ইন্টারনেট কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে; ডিজিটাল জগতটা কারা নিয়ন্ত্রণ করবে? আজকের দিনে এটাই অন্যতম প্রধান যুদ্ধ। আমার মনে হয়, ডিজিটাল জগত নিজে ভালো বা মন্দ কোনোটাই নয়। এটা আসলে এক সংগ্রামের রাজ্য।”

আমি (চার্লি ন্যাশ) তাকে প্রশ্ন করেছিলাম নিক ল্যান্ড এবং ক্রমশ জনপ্রিয় হতে থাকা দর্শন—এক্সিলারেশনিজম নিয়ে। যার শুরুই হয়েছে এই তত্ত্বের মধ্য দিয়ে যে, সামাজিক পরিবর্তনের জন্য পুঁজিবাদ এবং প্রযুক্তিকে দ্রুততর হতে হবে। তিনি ল্যান্ডকে জানেন বলে মনে হলো না কিন্তু বললেন, “এক্সিলারেশনিজমের মধ্যে আমি যা ভালো দেখি তা হলো, আমি এই তত্ত্ব কিনব না যে তুমি স্থানীয় প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক পুঁজিবাদ মোকাবেলা করবে। আমার কয়েকজন লাতিন আমেরিকান বন্ধু দাবি করে আমাদের প্রাচীন গোত্র সংস্কৃতিতে ফিরে যাওয়া উচিত। না। আমি এখানেও মার্ক্সবাদী। আপনাকে আমূল পুঁজিবাদের আধুনিকীকরণের মধ্য দিয়েই যেতে হবে। ফেরার কোনো পথ নেই।”

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;