রেমডেসিভির বিতর্ক



ড: মো: আজিজুর রহমান শামীম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ১ মে গুরুতর করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) রোগীর চিকিৎসায় রেমডেসিভির ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। কিন্তু, বিতর্ক শুরু হয় কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এর কার্যকারিতা নিয়ে। কারণ, এর তিন দিন আগে কোভিড-১৯ রোগীদের রেমডেসিভির প্রয়োগে কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি বলে ল্যানসেটের এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রশ্ন হলো— রেমডেসিভির কী ধরনের ড্রাগ, এটি কীভাবে কাজ করে এবং কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এটি কি আসলেই কার্যকরী?

১। রেমডেসিভির (GS-5734) একটি বিস্তৃত বর্ণালীর অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ, যা করোনাভাইরাসের কয়েকটি প্রজাতি, যেমন: সার্স, মার্স, সার্স-কোভ-২সহ (বর্তমান মহামারির কারণ) আরও কয়েকটি আরএনএ ভাইরাস, যেমন: ইবোলা, মারবার্গ ইত্যাদির বিরুদ্ধে কার্যকরী।

রেমডেসিভির একটি সংশ্লেষিত (সিনথেটিক) অ্যান্টিভাইরাল রাসায়নিক। এটির আবিষ্কারক আমেরিকার বিখ্যাত জীবপ্রযুক্তিবিষয়ক কোম্পানি গিলিয়াড সায়েন্সেস। গিলিয়াড বলছে, এ ওষুধ আবিষ্কার করতে তাদের প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা করতে হয়েছে। আবিস্কারের পর ২০০৯ সালের দিকে কোম্পানিটি প্রথমে হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস এবং রেস্পিরেটরি সিঙ্কশিয়াল ভাইরাসের বিরুদ্ধে এটির কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাস রোগে আক্রান্তদের নিয়ে প্রথম ধাপের (ফেইজ-১) ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়।

কিন্তু, ২০১৮ সালে এসে ইবোলা ভাইরাস রোগে এটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ রেমডেসিভিরের চাইতে আরও দুটি ওষুধ (রেজেনেরন ও মনোক্লনাল অ্যান্টিবডি ১১৪) ইবোলা ভাইরাস রোগে অধিক কার্যকরী বলে প্রমাণ পায়। তাই, ইবোলা ভাইরাস রোগে এর ব্যবহারের অগ্রগতি সেখানেই থেমে যায়। ২০১৬ সালে গিলিয়াড সায়েন্সেস ইবোলার পাশাপাশি সার্স ও মার্স ভাইরাসের প্রাইমেট মডেলের ওপর এর কার্যকারিতা পরীক্ষা শুরু করে। সার্স ও মার্স ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাইমেট মডেলের কার্যকারিতা ভালো বলে প্রমাণিত হলেও এ দুটি ভাইরাসে ঘটিত রোগে ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করতে পারেনি গিলিয়াড।

২। রেমডেসিভির এক প্রকারের প্রো-ড্রাগ। এর কেমিক্যাল ফর্মুলা: C27H35N6O8P এবং আণবিক ওজন ৬০২ দশমিক ৫৮৫ গ্রাম/মোল। প্রাণীদেহে প্রবেশের পর এই নিস্ক্রিয় উপাদানটির মূল গঠন দেহের এস্টারেজ এবং ফসফোরামাইডেজ এনজাইমের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে GS-441524 নামক সক্রিয় উপাদান তৈরি হয়। যেটি আবার নিউক্লিওটাইড কাইনেজ এনজাইমের মাধ্যমে GS-441524 ট্রাইফসফেটে রূপান্তরিত হয়। GS-441524 নামক নতুন এই সক্রিয় উপাদানটির কেমিক্যাল ফর্মুলা: C12H13N5O4 ও আণবিক ওজন ২৯১ দশমিক ২৬ গ্রাম/মোল। GS-441524 ট্রাইফসফেট ভাইরাসের আরএনএ ডিপেন্ডেন্ট আরএনএ পলিমারেজ নামক এক এনজাইমের কাজে বাধা সৃষ্টি করে। যার ফলে ভাইরাসের আরএনএ’র কপি তৈরি করার ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়।

৩। রেমডেসিভির ইবোলা, সার্স এবং মার্স ভাইরাসঘটিত রোগের চিকিৎসায় আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চীনের উহানে নতুন এক ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়। যা খুব দ্রুত সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। আজ পর্যন্ত (৩ মে ২০২০) প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ এই ভাইরাসঘটিত রোগ কোভিড-১৯’এ আক্রান্ত হয়েছেন এবং এর মধ্যে আড়াই লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। জানুয়ারিতে উহানে যখন করোনাভাইরাসের নতুন এ প্রজাতিটি হাজারো মানুষকে আক্রান্ত করে, তখন গিলিয়াড সায়েন্সেস রেমডেসিভির নিয়ে এগিয়ে আসে এবং আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজের হাসপাতালে উহানফেরত কোভিড-১৯ আক্রান্ত একজন আমেরিকান নাগরিকের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়। চমকে দেওয়ার মতো ফল দেয় রেমডেসিভির।

এরপর ফেব্রুয়ারিতে গিলিয়াড চীনের দুটি হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার জন্য রেমডেসিভির পাঠায়। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চিকিৎসা আশাব্যঞ্জক হওয়ায় ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে বিশ্বের ছয়টি দেশের (যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও যুক্তরাজ্য) ১ হাজার ৬৩ জন রোগীর ওপর শুরু হয় তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্টনি এস ফাউসি, যিনি এ ওষুধটির তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তিনি গত ২৯ এপ্রিল দাবি করেছিলেন, রেমডেসিভির কোভিড-১৯ আক্রান্তদের দ্রুত সেরে ওঠার ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে কাজ করছে এবং রেমডেসিভির প্রয়োগে সেরে ওঠার সময় ১৫ দিন থেকে ১১ দিনে নেমে এসেছে।

এর দুদিন পরেই মে মাসের ১ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ‘ইমারজেন্সি ইউস অথোরাইজেশন’ স্কিমের আওতায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যারা গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন, তাদের জন্য ‘রেমডেসিভির’ ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এটিই প্রথম অনুমোদিত কোনো ওষুধ।

রেমডিসিভিরের আপাতত মুখে খাওয়ার কোনো ডোসেজ ফর্ম নেই। এটি শুধুমাত্র ইন্ট্রাভেনাস ইঞ্জেকশন (শিরায় ইঞ্জেকশন) হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, এটি পাঁচ দিনেই বেশ আশাব্যঞ্জক ফল দেয়। প্রথম দিনে ২০০ মিলিগ্রাম করে দিনে একবার এবং পরবর্তী চার দিন ১০০ মিলিগ্রাম করে দিনে একবার করে ইন্ট্রাভেনাস রুটে দিতে হবে এ ওষুধ। শুধুমাত্র গুরুতর আক্রান্ত অর্থাৎ যাদের নিউমোনিয়া দেখা দিবে এবং রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দিবে (অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৪ শতাংশ বা তার চেয়ে কম) এরকম রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে রেমডেসিভির। গিলিয়াড বলছে, রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার ১০ দিনের মধ্যে রেমডেসিভির ব্যবহার শুরু করলে বেশি ভালো ফল পাওয়া যায়।

৪। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের শুরু থেকে রেমডিসিভির বেশ আশাব্যাঞ্জক ফল দিলেও, গত ২৩ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে ভুলভাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন সারাবিশ্বে ঝড় তুলে। অবশ্য দুই ঘণ্টার মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওয়েবসাইট থেকে সেই রিপোর্টে সরিয়ে ফেলে। রিপোর্টটিতে বলা হয়েছিল, চীনে যে রেমডেসিভিরের ট্রায়াল চলছিল, সেটি ব্যর্থ হয়েছে।

পরে ২৯ এপ্রিল বিশ্বের নামকরা প্রভাবশালী জার্নাল ‘ল্যানসেটে’ প্রকাশিত হয় সেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল। চীনের ১৫৮ জন গুরুতর অসুস্থ রোগীর শরীরে দেওয়া হয় ওষুধটি। পাশাপাশি ৭৯ জনকে রাখা হয় প্লাসেবো কন্ট্রোল গ্রুপে, যাদের ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শুধু দ্রাবক দেওয়া হয়, কোনো ওষুধ দেওয়া হয়নি। দুই গ্রুপের রোগীদেরই ২৮ দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তাতে দেখা যায়, এটি রোগীদের অবস্থার কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটায়নি এবং প্লাসেবো গ্রুপের তুলনায় রক্তে ভাইরাসের সংখ্যাও কমাতে পারেনি।

ল্যানসেটে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশের একই দিনে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করে, তারাসহ ছয়টি দেশে ১ হাজার ৬৩ জন রোগীর ওপর চালানো তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল। যা আমি ইতোমধ্যেই উল্লেখ করেছি। চীনের এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এ বিপরীত ফলাফল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। এ নিয়ে গিলিয়াডের ভাষ্য হলো, ল্যানসেট জার্নালে চীনের ট্রায়ালের যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তাতে রোগীর সংখ্যা ছিল অনেক কম (১৫৮ জন) এবং রোগীরা ছিল শুধু একটিমাত্র দেশের।

বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত ট্রায়ালে ছয় দেশের মোট ১ হাজার ৬৩ জন রোগী অংশ নিয়েছে, তাই, এই ফলাফলটাই বেশি নির্ভরযোগ্য। গিলিয়াড শিগগিরই তাদের গবেষণার বিস্তারিত ফলাফল জার্নালে প্রকাশ করবে বলে জানায়। পাশাপাশি সবমিলিয়ে ১৫টি দেশের ১৮০টি হাসপাতালে ৫ হাজহার ৬০০ জন গুরুতর অসুস্থ কোভিড-১৯ রোগীর ওপর এই ওষুধের কার্যকারিতার পরীক্ষাও চলমান বলে জানায় গিলিয়াড। সেই প্রসারিত ট্রায়ালের ফলাফলই বলে দেবে— কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এর ভবিষ্যৎ।

ড: মো: আজিজুর রহমান শামীম, সহযোগী অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (ইমেইলঃ [email protected])

   

ব্যাঙের চিৎকার যে কারণে শুনতে পায় না মানুষ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যাঙ অন্য প্রাণীদের মতো চিৎকার করলেও শ্রবণ শক্তির চেয়ে ফ্রিকোয়েন্সি বেশি হওয়ার কারণে মানুষ তা শুনতে পায় না।

ব্রাজিলের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্পিনাসের এক দল গবেষকের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

আমাজন জঙ্গলে ব্যাঙ নিয়ে গবেষণা করার সময় তারা অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করেছিলেন। তারা দেখেন যে, স্মল লিফ লিটার ব্যাঙগুলি তাদের মাথা পিছনে ফেলে তাদের মুখ প্রশস্ত করে রেখেছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল, তারা চিৎকার করছে। কিন্তু তারা কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না।

যখন বিজ্ঞানীরা উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি অডিও রেকর্ডার ব্যবহার করে রেকর্ড করেছিল, তখন তারা উভচর প্রাণীদের ‘প্রতিরক্ষামূলক আল্ট্রাসাউন্ড’ রেকর্ড করতে সক্ষম হন। 

যখন তারা বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে শব্দ বিশ্লেষণ করেন, তখন তারা দেখতে পান যে, এটির ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ ছিল ৭ কিলোহার্টজ থেকে ৪৪  কিলোহার্টজ। মানুষ ২০ কিলোহার্টজ এর বেশি ফ্রিকোয়েন্সি শুনতে পারে না।

এ গবেষক দলের মতে, ব্যাঙের চিৎকারটি শিকারিদের প্রতিক্রিয়া। শিকারিকে আক্রমণ করার জন্য বা অন্য প্রাণীকে আকৃষ্ট করার জন্য এটি তাদের কৌশল হতে পারে।

দলের একজন গবেষক মারিয়ানা রেতুসি পন্টেস বলেছেন, তিনি ভিন্ন গবেষণা ট্রিপে ব্যাঙকে একই আচরণ প্রদর্শন করতে দেখেছেন, কিন্তু তার কাছে এ শব্দ রেকর্ড করার জন্য সঠিক প্রযুক্তি ছিল না।

বাদুড়, তিমি, গন্ডার, কুকুর, কবুতর, কাটলফিশসহ সব ধরনের প্রাণী যোগাযোগের জন্য ইনফ্রাসোনিক এবং আল্ট্রা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে এবং মানুষ এর কিছুই শুনতে পায় না।

আপনি যখন একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হাঁটা উপভোগ করছেন, তখন হয়তো আপনার চারপাশে একটি কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ থাকতে পারে, যা আপনি শুনছেন না।

;

মাটির নিচে প্রাচীন দুর্গের সন্ধান, অর্থের অভাবে বন্ধ কাজ



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকে ফিরে: গাজীপুরের কাপাসিয়ায় লাল মাটি ও ঝোপ-ঝাড়ের ভেতর ঐতিহাসিক এক একডালা দুর্গের সন্ধান মিলেছে। এর পর নিজস্ব অর্থায়নে শুরু হয় খনন কাজ। কিছুটা দৃশ্যমান হয় দুর্গ। তবে সরকারি অর্থায়ন না পাওয়ায় বন্ধ রয়েছে খনন কাজ। মাটির নিচে চাপা পড়া ইতিহাস খনন করে সামনে আসলে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, রানি ভবানী বানিয়া রাজাদের শেষ বংশধর ছিলেন। তার দরদরিয়া দুর্গ ছিল গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে, বানার নদের পারে। দুই দশক আগেও সেখানে দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ভালোভাবে দৃশ্যমান ছিল। ক্রমান্বয়ে দৃশ্যমান ধ্বংসাবশেষ সব বিলীন হয়ে যায়।

দরদরিয়া দুর্গের ইতিহাসের গল্পগুলো মানুষের মুখে মুখে। তবে সেই ইতিহাসের অস্তিত্ব ছুঁয়ে দেখতে সেখানে শুরু হয় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান খননকাজ শুরু করেন। তার সঙ্গে কাজ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। সামনে আরও অনেকেই এই কাজে যুক্ত হবেন। নিজস্ব অর্থায়নে এই খননকাজ শুরু করেছেন সুফি মোস্তাফিজুর রহমান।

এক সময় লোকমুখে গল্প শোনা যেত, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে রয়েছে ‘রানির বাড়ি’। সেই মধ্যযুগের ইতিহাস এতদিন মানুষের মুখে মুখে ছিল। বাস্তবে তার অস্তিত্বের খোঁজ পাওয়া গেছে। বহুদিনের চেষ্টায় একদল গবেষক ‘রানির বাড়ি’ বা দরদরিয়া দুর্গ আবিষ্কার করেছেন। তাদের এ আবিষ্কার মধ্যযুগের ইতিহাস মানুষের বাস্তবে দেখার বাসনা পূরণ হবে। আংশিক খনন করা দুর্গটি দেখতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজনের ভিড় করেছেন। তবে বর্তমানে অনুদানের অভাবে দুর্গটির খনন কাজ বন্ধ রয়েছে।

‘রানির বাড়ি’ বা দরদরিয়ায় সরজমিনে দেখা যায়, বালির বস্তা দিয়ে দুর্গের দুই পাস ঘিরে রাখা হয়েছে। পূর্ব দিকের অংশে খোলা রয়েছে। দুর্গের চারপাশে মলি বাঁশ দিয়ে বেষ্টনী দিয়ে রাখা রয়েছে। পাশের কৃষি জমিতে সেচের পানি দুর্গের ভেতর প্রবেশ করেছে।

পাশের কৃষি জমিতে সেচের পানি দুর্গের ভেতর প্রবেশ করেছে

কয়েকজন এলাকাবাসী জানায়, অনেক দিন ধরে খননকাজ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় রেখে তারা চলে গেছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন দেখতে এসে দুর্গ থেকে ইটের গাঁথুনি থেকে ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় থাকলে দুর্গের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি জরুরি ভিত্তিতে দুর্গের খননের অংশটুকুর নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।

স্থানীয় বাসিন্দা মঈনুদ্দিন (৬০) বলেন, ছোট থেকে শুনে আসছি এই রানির ভিটার কথা৷ কিন্তু এটার সঠিক ইতিহাস জানতাম না। সবটুকু খনন করা হলে ইতিহাস উন্মোচন হবে।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র টোক নগর ভেংগুরদী গ্রামের আশিক রব্বানী জিহান বলেন, এটি আমাদের কাপাসিয়ার জন্য বিশাল এক সম্পদ৷ এটি খনন করা হলে আগে কি ছিলো বা এখন কি আছে সেটা জানা যাবে৷ এটি দৃশ্যমান হলে গাজীপুর তথা বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক এক স্থাপনা হতে পারে৷ পর্যটন কেন্দ্র হলে এলাকার উন্নয়ন হবে।

 লাল মাটি ও ঝোপ-ঝাড়ের ভেতর ঐতিহাসিক একডালা দুর্গের সন্ধান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান নিজ খরচে খননকাজ শুরু করেছেন। এই কাজে যুক্ত আছেন তার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ঐতিহ্য অন্বেষণ’ এর বেশ কয়েকজন প্রত্নতাত্ত্বিক।

অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কাপাসিয়ার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে বানার নদের পূর্ব পাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রানি ভবানীর দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। তিনি ছিলেন বেনীয়া রাজার শেষ বংশধর। তার দুর্গের সবচেয়ে বেশি অবস্থান দরদরিয়া গ্রামের উত্তর অংশে। এই কৃষি জমির পাশে উঁচু অংশ খননের পর বর্তমানে দুর্গের কিছু অংশের নিদর্শন দৃশ্যমান হয়েছে। এখনো পর্যন্ত যতটুকু খনন করা হয়েছে তা নিজস্ব অর্থায়নে করা হয়েছে। ফান্ড পেলে খননকাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

 

;

বৈশাখের প্রথম বৃষ্টিতে সিক্ত রাজধানী



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রুদ্র বৈশাখ তার নিয়ম অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই সূর্যের পূর্ণ তাপে জ্বলছিল। ভরদুপুরে ঘরের বাইর হওয়াই দায়! মাথার উপর প্রচণ্ড উত্তাপ যেন ঘামের জলপ্রপাত সৃষ্টি করে।

‘দুপুরের ভেপসা গরম, ঘেমে শরীর তীর-ঘাম/তবু ধানকাটায় ব্যস্ত কৃষক, নেই কারো বিশ্রাম/এমন ক্ষণে ঈশান কোণে মেঘ-বিজলীর গর্জন/অতঃপর স্বস্তির নিঃশ্বাস নামলো প্রতিক্ষার বর্ষণ।’ অবশেষে মঙ্গলবার দিনভর তীব্র তাপদাহের পর কবিতার এই লাইনগুলোর মতোই দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই রাজধানীর বুকে নামল ঝুম বৃষ্টি। শান্তির বৃষ্টিফোঁটায় সিক্ত হলো রাজধানীর মাটি।     


আর সেই সঙ্গে ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দের প্রথম বৃষ্টিতে উল্লাসে মেতে উঠল নগরবাসী। 

বৃষ্টির ঝুম ঝুম ফোঁটায় যেন এক অনন্য নূপুরধ্বনির তরঙ্গ তুলেছে প্রকৃতি। ঘাম, গরম, অস্বস্তি যে খরায় পুড়ছিল মানুষের মন, তাতে শান্তির অমৃতধারা নেমেছে সূদুর আকাশ থেকে। তবে শুধু বৃষ্টি নয়, সঙ্গে জোড় বেঁধেছে দমকা হাওয়া। বৈশাখের এক অনস্বীকার্য অংশ হলো কাল বৈশাখী ঝড়। বৈশাখে আসন্ন সেই ঝড়ের ইঙ্গিতই বয়ে আনলো পাগলাটে বাতাস।


এর আগে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ২টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া এবং কুমিল্লা অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

;

কুরচি ফুল, দেশি হয়েও আজ ভিনদেশি



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সন্ধ্যার আবছা আলোয় ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তীব্র একটা সুগন্ধে মনটা ভাল হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম এটি একটি ফুলের গন্ধ, যারা রাত্রে সুগন্ধ ছড়ায়। অন্যান্য ফুলের গন্ধের চেয়ে এর গন্ধটা একটু যেন বেশি তীব্র। খুঁজতে লাগলাম গাছটিকে। অবশেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে কোর্টস গার্ডেনে গাছটিকে খুঁজে পেলাম। গাছটিকে চিনে রাখলাম।

পরদিন দিনের আলোয় গাছটিকে ভাল করে লক্ষ্য করলাম। একটু অপরিচিত ঠেকলো। ভাবলাম বিদেশি কোনো ফুল গাছ হবে হয়তো। গাছটি সনাক্ত করতে গাছ, ফুল আর পাতার ছবি তুলে পাঠালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনকে। তিনি দেখে সাথে সাথেই জানালেন গাছটির নাম কুরচি। আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ।

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে কোর্টস গার্ডেনে কুরচি গাছ

উইকিপিডিয়াতে গাছটির আদি বাসস্থান মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ, ইন্দোচীন এবং চীনের কিছু অংশের নাম লেখা রয়েছে।

ড. জসীম বলেন, কুরচি আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। আমরা এটি রিপোর্ট করার আগেই হয়তো আফ্রিকা কিংবা অন্য কোনো স্থান হতে রিপোর্টিং হয়ে গেলে সেটি ওই স্থানের আদি উদ্ভিদ হয়ে যায়। শুধু কুরচি নয় এমনিভাবে আমাদের অনেক দেশীয় উদ্ভিদ বিদেশি হয়ে গেছে। অথচ আমাদের প্রাচীন আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্রে ও সাহিত্যে কুরচির উল্লেখ আছে।

তিনি আরও বলেন, কুরচি গাছের স্বাভাবিক উচ্চতা ১০ থেকে ২০ ফুট। ফুল অনেকটা রঙ্গন ফুলের মতো, নিচের অংশ নলাকৃতি এবং উপরের অংশ মুক্ত পাপড়িতে ছড়ানো। পাঁচটি পাপড়ির মুক্ত অংশ ঈষৎ বাঁকানো, বর্ণ দুধসাদা এবং তীব্র সুগন্ধি কিন্তু মধুর।

ড. জসীম আক্ষেপ করে বলেন, দেখতে সুন্দর ও তীব্র সুগন্ধিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও বাগানীদের কাছে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে তেমন কদর পায়নি। ফলে একসময় এ গাছ যত্রতত্র চোখে পড়লেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মধুপুরের শালবনে প্রচুর কুরচি গাছের দেখা মেলে। ঢাকায় রমনা উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানেও কুরচি গাছ আছে।

সুগন্ধে ভরা কুরচি ফুল গাছ

কুরচির ঔষধিগুণ সমন্ধে তিনি বলেন, পুরো কুরচি গাছটিই ঔষধি গুণে ভরা। কুরচি গাছের বাকল ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানার মহৌষধ। হাঁপানি রোগে শিকড়ের রস দারুণ উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, কৃমি রোগ ও মুখের ঘায়ে এর শিকড়, পাতা ও বাকল খুব কার্যকর। তবে এটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার উপদেশ দেন তিনি।

কুরচি অ্যাপোসাইনেসি পরিবারের একটি ক্ষুদ্র পত্রমোচী মাঝারী বৃক্ষ। পাহাড়-পর্বতে এই গাছ হরহামেশাই দেখা যায় বলে হয়তো এর অন্য নাম গিরিমল্লিকা। এ ছাড়া কুরচি গাছটি কুটজ, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, মহাগন্ধ, কোটিশ্বর নামেও পরিচিত। এর নরম কাঠ থেকে পুতুল ও খেলনা তৈরি হয়।

;