ক্যাপ্টেন শুভমের লকডাউন



পরীক্ষিৎ চৌধুরী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

শুভমের মন খারাপ। তার কাছের বন্ধু দিহান সেদিন ঈদের কেনাকাটা করতে মার্কেটে গিয়েছিলো। কিন্তু শুভম মার্কেটে যেতে পারছে না।  তার মা তাকে নিয়ে যাচ্ছেন না। বাবা পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, 'করোনা যতদিন থাকবে, ততদিন মার্কেটে যাওয়া যাবে না।  ভিড় হয় এমন জায়গায় এসময় যাওয়া উচিত না।' করোনা’র কথা শুভমও শুনেছে। পৃথিবীজুড়ে করোনা নামের এই ভাইরাস নাকি লাখ লাখ মানুষকে মেরে ফেলছে। এই করোনার ওপর তার রাগ হয়েছে বেশ। বাবা-মার ওপরও তার  রাগ অনেক। দিহান যদি পারে, সে কেন  মার্কেটে যেতে পারবে না?

শুভম রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। তার ছোট বোনের নাম শাওলি। শাওলি এখনো স্কুলে যাওয়া শুরু করেনি। তবে অ, আ, ক, খ  পড়া হয়ে গেছে। শুভমই তাকে এসব শিখিয়েছে। তার চাইতে বয়সে ছোটদের তো বটেই, তার চাইতে বেশি বয়সের বাচ্চাগুলোকেও সে সাহায্য করতে চায়। সবাইকে তার ছোটখাটো বুদ্ধিগুলো ভাগ করে দেওয়া চাই। অবশ্য শুভম তার ক্লাসে ক্যাপ্টেন। ক্যাপ্টেন হিসেবেও তাকে সবার দিকে খেয়াল রাখতে হয়।

শুভমের স্কুল গত দুই মাস যাবত বন্ধ।  স্কুল বন্ধের কারণ ঠিক পুরোপুরি বুঝে উঠতে না পারলেও এটুকু সে জেনে গেছে, সারা দুনিয়ায় একটি রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। যার জন্ম হয় করোনা নামের একটি ভাইরাস থেকে। এই রোগ খুবই ভয়াবহ এবং একজন রোগীর ছোঁয়া থেকে তা যে কারো শরীরে ঢুকে যেতে পারে। তাই সব স্কুল কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

তবে এই রোগটি যাতে না হয় তার জন্য কি কি করা উচিত সেগুলো বাবা-মা এবং গণমাধ্যমের বরাতে সে এরই মধ্যে জেনে গেছে । সে শাওলিকেও মাঝে মাঝে বলে, ‘বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। আশেপাশে পড়ে থাকা জিনিসপত্র ধরবে না। হাত লেহন করা যাবে না, নাকে আঙ্গুল না ঢোকানো যাবে না, চোখ ঘষাঘষি না করা যাবেনা।‘  এগুলো শাওলিকে বারবার বলে। শাওলিকে বারবার বলা এবং সে মানছে কিনা সেটা সবসময় খেয়াল করাও যেন শুভমের খেলার অংশ হয়ে গিয়েছে এখন।

অবশ্য তাদের বাবা-মা খুবই সতর্কতার সাথে তাদের  খাবারের থালা-বাটি, ব্যবহারের তোয়ালে এবং অন্যান্য জিনিসপত্র আলাদা রাখছেন যাতে অন্য কেউ ব্যবহার না করে। ভিড় হতে পারে এমন এলাকা বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শুভম ও শাওলির যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। বাসার পাশে মহল্লার ভিতরে একটা ছোট পার্ক আছে। শুভম সেখানে বন্ধুদের সাথো খেলতো। আপাতত তার পার্কেও যাওয়া বন্ধ। ক্যাপ্টেন শুভম তার বন্ধুদেরকে বলে দিয়েছে, এখন থেকে পার্কে আসা যাবে না। ঘরেই থাকতে হবে।

কিছুদিন আগেও শুভমরা যখন বাইরে বের হতো তখন বাবা-মাসহ  সবাই নিজেদের সুরক্ষার নিয়মগুলো মেনে চলতো। সে ও তার বোন চাইল্ড মাস্ক ব্যবহার করতো। বাইরে থেকে ফিরে এসে কাপড় চেঞ্জ  করে সাধে সাথে হাত ও মুখ ভালো করে ধুয়ে নিতো। করোনা ঠেকাতে এই পরিবার খুবই সচেতন।

দুই সপ্তাহ আগে শুভমের মামাতো বোন শুক্তিকার টিকা দেওয়ার সময় হয়েছিল। শুভম তার মাকে শুক্তিকার মার সাথে কথা বলতে বললো। তার মা জানেন, এক্ষেত্রে কি করতে হবে। তার মা শুক্তিকার মাকে ফোন করে জানিয়ে দিলেন, মহামারী চলাকালে শিশুর টিকার সময় চলে এলে টেলিফোনের মাধ্যমে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে টিকা দানের সময়কাল ঠিক করে নেওয়া যায়। তবে যথাযথ সুরক্ষা নিয়ে বাচ্চাকে টিকাদান কেন্দ্রে নিয়ে যেয়ে টিকা দেওয়া উচিত। যদি টিকার  সময় পরিবর্তন করা যায় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই তা করতে হবে, এটাও জানিয়ে রাখলেন তিনি।

শুভমরা রাজধানীতে থাকে। তারা স্বাস্থ্য সচেতনতার অনেক খুঁটিনাটি জানলেও মফস্বলে বা গ্রামে বাস করা সব অভিভাবক কি এতো কিছু জানেন? সব জায়গায় কি সচেতনতার প্রচারণা যথাযথভাবে হয়েছে? তাঁদের অনেকেই জানেন না, শিশুর যে দেখাশোনা করে, তার হাত সব সময় পরিষ্কার রাখতে হয়। শিশুর সামনে কখনো হাঁচি কাশি দেওয়া অথবা ফুঁ দেওয়া উচিত না। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শিশুকে চুমু খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে।  বেশির ভাগ বাবা মা কি জানেন, খাওয়ানোর সময় ফুঁ দিয়ে গরম খাবার ঠান্ডা করা উচিত না। তাঁদেরকে জানতে হবে, আগে থেকে খাওয়া কোন কিছু শিশুর মুখে দেওয়া স্বাস্থ্যকর না। শিশুর পরিচর্যার সময় বাবা মা অথবা শিশুর তত্বাবধায়ককে মাস্ক পরতে হবে। বাবা-মা, অভিভাবক অথবা শিশুর তত্ত্বাবধায়কের যদি জ্বর, ঠান্ডা, শুকনো কাশি, গলাব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয় তবে সাথে সাথেই শিশুর পরিচর্যা ছেড়ে দিয়ে অন্য কারো হাতে সেই দায়িত্ব দিয়ে দিতে হবে এবং নিজেকে হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় নিয়ে নিতে হবে।

 

৩.

দুই মাস হলো  দেশের স্কুলগুলো বন্ধ। প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী সেপ্টেম্বরের আগে স্কুল খুলবে না। এসময় শিশুদের পড়াশোনার ওপর যেন কোনভাবেই  নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। সরকারও এক্ষেত্রে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে দূরশিক্ষণ অনুষ্ঠান চালু করা হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যবই অনুযায়ী শিক্ষাদান শুরু করা হয়েছে। অনলাইন শিক্ষার কৌশল ও শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়কে গণমাধ্যমে সম্প্রচারের মতো দূরবর্তী শিক্ষণ পদ্ধতিসহ শিক্ষার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা, এবং সকল শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সেবাসমূহের সুযোগ নিশ্চিত করতে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করাই এর মূল লক্ষ্য। সারাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে এই শিক্ষণ পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ বেতারকেও ব্যবহার করার চিন্তা করছে সরকার। স্কুল বন্ধ থাকাকালে  দূরবর্তী শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার জন্য অভিভাবকদেরকেই মূল দায়িত্ব নিতে হবে।  এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে স্কুলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। শুভমের মতো দেশের সব শিক্ষার্থী এখন সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে নিয়মিত দুরশিক্ষণে ক্লাস করছে। বাবা মা এই ক্লাস করার জন্য তাকে সাহায্য করছেন। তাঁরা শাওলিকেও টেলিভিশনে প্রাক-প্রাথমিক ক্লাস করতে উৎসাহ দিচ্ছেন।

কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমন থেকে শিশুরক্ষায় সহায়তা করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি), ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর  বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে যা বাড়িতে যেমন পালন করা আবশ্যক, তেমনি স্কুল খোলার সময়ও স্মরণে রাখতে হবে। যেমন- সর্বোত্তম পদ্ধতিতে হাত ধোয়া ও স্বাস্থ্যবিধি বা হাইজিন চর্চার পদ্ধতি শিশুদের মধ্যে নিয়মিত প্রচার করতে হবে। বাড়িতে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাইজিন পণ্য সরবরাহ করা; স্কুল ভবনগুলো, বিশেষতঃ পানীয় এবং স্যানিটেশন সুবিধাসমূহ পরিস্কার ও জীবাণুমুক্ত করা; এবং বাতাসের প্রবাহ এবং অবাধ চলাচল বৃদ্ধি নিশ্চিত করতেও তারা নির্দেশনায় বলেছে। ইতিমধ্যে যেসব দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে, সেসব দেশ ছাড়াও অন্যান্য সকল ক্ষেত্রেই এই নির্দেশিকা প্রাসঙ্গিক হবে।

এই বিষয়ে স্কুলে, নিজেদের বাড়িতে এবং তাদের কমিউনিটিতে ভাইরাসটির বিস্তার রোধ ও নিয়ন্ত্রণে উৎসাহ যোগাতে শিশুদের দূত হিসাবে শিশুরাই এগিয়ে আসতে পারে বলে অভিমত দিয়েছে ইউনিসেফ। রোগটির প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অন্যদের সাথে কথা বলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একাজটি করতে পারে। যে কাজটি আমাদের ক্যাপ্টেন শুভম স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করছে ।

উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইবোলা ভাইরাসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবের সময় গিনি, লাইবেরিয়া এবং সিয়েরালিওনে নিরাপদ স্কুল নির্দেশিকাগুলো এভাবেই কার্যকর করা হয়েছিল যা ভাইরাসের স্কুল-ভিত্তিক সংক্রমণ রোধে সহায়তা করেছিল।

শিশুদেরকে এবং পরিবারকে রক্ষার জন্য হাত ধোয়া ও অন্যান্য পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সঠিকভাবে জানাতে অভিভাবকদের পাশাপাশি শিশুদেরকেও সচেতন থাকতে হবে। এছাড়াও, অভিভাবকদের  উচিত শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান করা; বাড়িতে থাকাকালে যেন শিশুরা সকলের সাথে সদয় আচরণ করে সে পরামর্শ দেওয়া এবং ভাইরাসটি সম্পর্কে নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় গৎবাঁধা চিন্তা এড়াতে কুসংস্কার ও বৈষম্য রোধে তাদের উৎসাহিত করা বড়োদের দায়িত্ব। শিশুদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে এবং তাদের উদ্বেগগুলো প্রকাশ করতে উৎসাহ যোগানো উচিত। শিশুদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম নিশ্চিত করে তাদেরকে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ সুষম খাবার খাওয়াতে হবে।

৪.

স্কুল বন্ধের দিনগুলোয় শুভম-শাওলির দিন খুব আনন্দে কাটছে। অফিস বন্ধ বলে তাদের বাবা-মা

বাসায় যথেষ্ট সময় দিতে পারছে। স্কুল বন্ধ থাকলেও তাদের বাসায় বসে পড়ালেখা থেমে থাকেনি।  বাবা-মা তাদের পাঠ্যবই পড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন গল্পের বইও পড়তে দিচ্ছেন। শুভমের ছবি আঁকার শখ আছে, তার ছবি আঁকার চর্চাও চলছে পুরোদমে। শাওলির গান শেখাও নিয়মিত চলছে। লকডাউনের সময়গুলো যেন তারা গুনগতভাবে  কাটাতে পারে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখছেন বাবা-মা।  তাদের নানি থাকেন তাদের সাথে। তাঁর সাথে নানান গল্প করে, নানান ঘরোয়া খেলা খেলে তাঁদের সময় কেটে যায়। শুভমের মোবাইল ফোন আর আইপ্যাডে গেইম খেলার ঝোঁক আছে। এই দীর্ঘ বন্ধের সময়  একটানা দীর্ঘক্ষণ যে কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে চোখ রাখা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই শুভমের বাবা-মা এ বিষয়ে খুব সাবধানী। তাঁরা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাচ্চাদেরকে মোবাইলে গেইম  খেলার সুযোগ করে দেন।

আজ সকাল থেকে শুভম ছবি আঁকছে। তার ছবির বিষয় হলো যুদ্ধ। সে আঁকছে একদল মানুষ একটা ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করছে। কিন্তু সে ভাইরাসের ছবি আঁকতে পারছে না। সে তো ভাইরাসকে দেখেই নাই। তবুও সে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাবের ছবি আঁকার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

হঠাৎ তার মা এসে জানালো দিহানের সেই চাচার করোনা রোগ হয়েছে। শুভম চিন্তায় পড়ে গেলো। সে শুনেছে, এই রোগের কাউকে ছুঁলে তারও রোগ হতে পারে। ছবি আঁকা বাদ দিয়ে সে ভাবতে লাগলো, দিহানকে তো ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হবে। সে জানে, এসময় ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হয়। দিহানের উচিত বিষয়টা জানিয়ে প্রতিবেশী ও আশেপাশের মানুষদেরকে সচেতন করে দেওয়া। স্কুল খোলা থাকলে শিক্ষক  বন্ধুদেরকেও জানিয়ে রাখতে হতো এটাও সে এতদিনে জেনে গেছে।

ক্যাপ্টেন শুভম বসে থাকতে পারলো না। চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লো। দিহানকে একটা ফোন করতে হবে।

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;