কোভিড-১৯ পরবর্তী পৃথিবী



মূল: আন্দ্রে হফম্যান, ভাষান্তর: তোফায়েল আহমেদ
আন্দ্রে হফম্যান, ছবি: সংগৃহীত

আন্দ্রে হফম্যান, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রকৃতি ধ্বংসের ফলেই যে মানবজাতি ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে পড়ছে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে সামান্যই মতভেদ রয়েছে। যেমন কোভিড-১৯, যা পৃথিবীজুড়ে ইতোমধ্যে লাখ লাখ মানুষকে অসুস্থ করার পাশাপাশি অগণিত মানুষের প্রাণহানির কারণ হচ্ছে।

এই মহামারি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমকেও বাধাগ্রস্ত করবে। কারণ পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি জিডিপি কোনো না কোনোভাবে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। কোভিড-১৯ মহামারি কি সবাইকে এ সম্পর্কে জাগ্রত করবে? বা এর ফলে মানুষের সচেতনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কি বর্তমান ব্যবস্থাকে পাল্টানো যাবে?

কিছু সংখ্যক রাজনীতিক বলছেন, এই মহামারি এই সময়ে ভাবনার মধ্যে ছিল না। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিন দিন জোনোটিক রোগের যে বিস্তার হচ্ছিল (ক্ষুদ্র অনুজীব দ্বারা সংগঠিত রোগ যা প্রাণীর দেহ থেকে মানবদেহে প্রবেশ করে) তার ফলাফল হিসেবে এ মহামারি অপরিহার্য ছিল।

এই প্রবাহ মানবসৃষ্ট কাজের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। প্রকৃতির সহ্যক্ষমতা থেকে অধিক চাষাবাদ, বনধ্বংস থেকে শুরু করে মাইনিং, পশু নিধন এসব ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, যাকে আমরা “স্বাভাবিক ব্যবসায়ীক কাজকর্ম” দাবি করছি। ফলাফল হিসেবে জীবজন্তুর সাথে আমাদের মিথস্ক্রিয়া সর্বচ্চো পর্যায়ে পৌঁছেছে। পরিণতি হিসেবে রোগব্যাধি বিস্তারের আদর্শ ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে ইবোলা, এইডস, সেবিয়ের একুইট রেসপেটরি সিনড্রোম বা সার্স এবং মিডল ইস্ট রেসপেটরি সিনড্রোম বা মার্স, সবগুলো রোগই সবাইকে আগাম সতর্কবানী দিয়েছে যাতে বিশ্ব কর্ণপাত করেনি।

কিন্তু কোভিড-১৯ অন্য যে কোনো মহামারি বা ব্যাধি থেকে ভিন্ন হতে পারে। পরিশেষে এটা অন্য যে কোনো সময়ের মহামারি থেকে দৃঢ়ভাবে বিশ্ববাসীর সামনে পরিষ্কার করল যে কীভাবে প্রাণপ্রকৃতির ভালো থাকার সাথে মানবজাতির সুস্থতা ও উন্নতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পরিবেশ সংরক্ষণ অর্থনীতিতে ধ্বংস নামাবে এই দাবি শুধু অদূরদর্শিতাই নয় বরং তা হিতেও বিপরীত। বরং পরিবেশগত ধ্বংসের ফলেই আজ বিশ্ব অর্থনীতি থমকে গেছে।

অধিকন্তু, সাম্প্রতিক কালের অন্য যে কোনো প্রাদুর্ভাবের চেয়ে কোভিড-১৯ এ রাষ্ট্রগুলো নজিরবিহীন এবং ব্যাপকভাবে বৈশ্বিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ও কৌশলপত্র প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে। রাষ্ট্রগুলোর এসব পদক্ষেপ পরিবেশ রক্ষা ও পুনরায় সংরক্ষণের এক সুবর্ণ সুযোগ হাজির করেছে। এসব পুনরুদ্ধার কার্যক্রম দু’টি বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হওয়া উচিত। প্রথমত. ভর্তুকিই একমাত্র সমাধান নয়, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে পরিবেশগত আইন আরও দৃঢ়তর করতে হবে। দ্বিতীয়ত. সরকারি ব্যয় এমনভাবে করা উচিত, যাতে সামাজিক স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি হয়। এর অর্থ হলো সবুজ কলকারখানাগুলোতে বিনিয়োগ করা, বিশেষ করে ওইসব কাজে যা আমাদের টেকসই অর্থনীতির (circular economy) দিকে নিয়ে যাবে।

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং নোবেল লরিয়েট জোসেফ স্টিগলিজ ও নিকোলাস স্টার্ন তাদের গবেষণায় পেয়েছেন, ‘‘সবুজ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্যাকেজ’’ প্রথাগত অর্থনৈতিক উদ্দীপকের (stimulus) চেয়ে উচ্চ হারে লাভ, সাময়িক চাকরির নিশ্চয়তা এবং ভালোমানের দীর্ঘমেয়াদি ব্যয় কমিয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি অবকাঠামো তৈরি, বিশেষ করে শ্রমনিগূঢ় কার্যক্রম জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগের চাইতে প্রতি ডলারে দ্বিগুণ পরিমাণে চাকরির সংস্থান করে।

অন্যান্য অগ্রাধিকারের মধ্যে ‘প্রাকৃতিক পুজি’তে বিনিয়োগের মধ্যে বৃহৎ পরিসরে বাস্তুচক্রের পুনরুদ্ধারও অন্তর্ভুক্ত। এসব কার্যক্রম অনেক মূল্যবান সুবিধা তৈরি করবে, যেমন জৈবচক্রের শক্তিশালীকরণ থেকে শুরু করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ যা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বনডাইঅক্সাইড অপসারণে সহায়তা করবে। এসব প্রচেষ্টা এগিয়ে নিতে প্রকৃতি ও জলবায়ুকে সংকটে ফেলে এমন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানাদি ও ঋণপ্রদানকারী ব্যাংকগুলোকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

কিছু সংখ্যক আইন প্রণেতা এর প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা বা আইএমএফ সবুজ পুনরুদ্ধার কীভাবে করা যায়, সে সম্পর্কিত বৃহৎ পরিসরে নির্দেশনা দিয়েছে। একই সাথে আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিনা জর্জিয়েভা কর্পোরেট বেইলআউটে যাতে পরিবেশগত শর্ত জুড়ে দেয়া হয় সেজন্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ফ্রান্স ইতোমধ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। অধিকন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোভিড-১৯ এর ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সবুজ পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা আঁকছে, যা ইতোমধ্যে নেওয়া ‘ইউরোপীয় গ্রিন ডিল’ এর সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এর প্রধান উদ্দেশ্য জীববৈচিত্র্যের পুনঃসংরক্ষণ এবং শূন্য কার্বন অর্থনীতির দিকে নিজেদের কার্যক্রমকে আরও বেগবান করা।

ইউরোপের রাজনীতিবিদ, কোম্পানি, ট্রেড ইউনিয়ন, প্রচারণা গ্রুপ, থিংক ট্যাংকের ১৮০ জন সদস্য এর সদস্য দেশগুলোকে চিঠি দিয়ে সবুজ উদ্দীপক কার্যক্রম গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু বৈশ্বিক টেকসই পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বহুসংখ্যক রাষ্ট্রকে নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদকে পরিবেশ ধ্বংসকারক কলকারখানা ও কার্যক্রমে কাজে লাগিয়ে এখনো পর্যন্ত অনেক সরকারই এর বিপরীতে কাজ করছে।

উদাহরণ হিসেবে স্টিগলিজ এবং স্টার্ন দেখিয়েছেন- নিঃশর্ত বিমান বেইলআউট অর্থনীতির গতিশীলতা এবং জলবায়ুর স্বাভাবিক ছন্দে সবচেয়ে খারাপ প্রভাব ফেলে। এবং এখনো পর্যন্ত বিলিয়ন ডলার কোনো শর্তারোপ ছাড়াই সরকারি বিমান কোম্পানিগুলোকে দেয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক গ্রিন স্টিমুলাস ইনডেক্স এর রিপোর্ট অনুসারে এসব উদ্দীপকের তৃতিয়াংশেরও বেশি যে বৃহৎ ১৬ অর্থনীতির দেশে ব্যয় করা হয়েছে, তা সম্ভবত বিরূপভাবে পরিবেশের ক্ষতি করবে।

ক্রমবর্ধমানভাবে এই কর্মপন্থার পক্ষে সাফাই গাওয়া কঠিন এবং এটা যাতে ভুলে না যাই যে এই মহামারির কিছুদিন আগেও বিশ্বজুড়ে নজিরবিহীন দাবানল ও বন্যার প্রকোপ ছিল। যেহেতু দিন দিন জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তাই এসব রোগব্যাধির জন্য দায়ী যেসব কারণ, তা প্রায়ই ঘটবে এবং তা আরও তীব্রতর হবে। রাজনৈতিক এবং কায়েমি স্বার্থবাদীরা হয়ত সামনের এসব চ্যালেঞ্জ থেকে মনোযোগ সরাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু এটা ভবিষ্যৎ কোনো সংকটের সমাধান করবে না এবং একই সাথে এটি অবশ্যই তাদের কোভিড-১৯ এর ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষাও করতে দেবে না। অন্যদিকে, প্রথাগত ব্যবসায়ীক কার্যক্রমে প্রত্যাবর্তনও এসব মহামারির আগমনকে ত্বরান্বিত করবে।

এক সংকট থেকে অন্য সংকটে পতিত হওয়ার চেয়ে আমাদের অবশ্যই স্থিতিমাপক কোনো ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

পরিশেষে, কোভিড-১৯ পরবর্তী পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে পরিবেশ সংরক্ষণ ও পুনর্নির্মাণ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্রীয় ইস্যু হিসেবে তুলে ধরার এটাই সুবর্ণ সুযোগ।

অনুবাদক তোফায়েল আহমেদ

তোফায়েল আহমেদ: স্নাতক ও স্নাতকোত্তর, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

মূল: আন্দ্রে হফম্যান, সুইস ধনকুবের।

   

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;