ব্রেকআপ পরবর্তী একাকিত্বের সময়গুলোতে যা করণীয়-
‘একা বেঁচে থাকতে শিখো প্রিয়’ দিন শেষে প্রত্যেক মানুষই একা। তাই আমাদের একা পথ চলতে শেখাটা জরুরি। পৃথিবীতে আমাদের যাত্রাটা যেমন একা, শেষ যাত্রাটাও একার। এর মাঝে যে সময়টা আমরা অতিবাহিত করি তা হলো বন্ধনের। যখন আমরা কোনো বন্ধনে জড়িয়ে যাই, সেটা বন্ধু, প্রেম-ভালোবাসা, সমকামিতা, বিবাহিত জীবন কিংবা আত্মিক যে কোনো সম্পর্ক হতে পারে। বিশেষত তরুণ সমাজের প্রেমের সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের যেমন গড়ন আছে, তেমন ভাঙনও আছে। পৃথিবীতে কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। এই সম্পর্কের ভাঙা-গড়া খেলার কারণেই বর্তমান সময়ের হতাশাব্যঞ্জক সমস্যাগুলোর একটি হলো ব্রেকআপ ও একাকিত্ব।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ছেলেরই একটা মেয়ের সঙ্গে রিলেশনে যাওয়া উচিত না। হাত যত শক্ত করেই ধরুন না কেন নিচের মাটিটা ঠিক না থাকলে আপনার পতন কেউ ঠেকিয় রাখতে পারবে না। মেয়ে যদি রানি ক্লিওপেট্রা হয় তবুও তাকে যথার্থ সম্মানপূর্বক বিনয়ের সাথে এড়িয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমান মানুষের কাজ। অন্যথায় বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী। কাউকে ভালোবাসাটা যতো সহজ, সেই ভালোবাসা ধরে রাখা আরও বেশি কঠিন। বেকার প্রেমিকের প্রতি নারীর সহানুভূতি একসময় বিরক্তিতে পরিণত হয়। সহানুভূতি নিয়ে হয়তো ভালোবাসার মানুষের পাশে থাকা সম্ভব। কিন্তু বিরক্তি নিয়ে কোনো রিলেশন কন্টিনিউ করা যায় না।
৫ বছর ধরে রিলেশনে আছেন! যখন সময় মতো চাকরি হবে না তখন বুঝবেন চাপ কি জিনিস। বলাই বাহুল্য, দুঃসময়ে ভালোবাসার মানুষটাও পাশে থাকে না। কাকে দোষ দেবেন?
ফেসবুকের নীল সাদার জগতে একজন আরেকজনকে ডেডিকেট করে লেখা পংক্তিগুলো ব্যাঙ্গের হাসি দেবে। প্রেয়সী হয়ে যাবে অন্য কারো। বিরক্তিকর হ্যান্ডসাম বেকার প্রেমিক থেকে সুপ্রতিষ্ঠিত ভুঁড়িওয়ালা মোটা পকেটের ব্যাংকার হাজারগুণ ভালো।
সাবধান! ইথিকসের কথা বলে আঙুল তুলবেন না। বাস্তবতা আপনার বেঁধে দেওয়া ইথিকস মেনে চলে না। পৃথিবীর যোগ্যতম মানুষটিই সুন্দরীর বক্ষে মাথা রেখে ঘুমানোর অধিকার রাখে। বাকিরা খরচের খাতায়। সময় থাকতে নিজের মাটিটা শক্ত করে নিন। এরপর ক্লিওপেট্রাকে জয় করে নিন।
দিন শেষে ভালোবাসাটাই শেষ কথা। কিন্তু সেই ভালোবাসাটাকে ধরে রাখতে হলে কঠিন একটা ভিত্তির প্রয়োজন। বেকারের ভালোবাসা চোখের পানিতেই শেষ হয়। এটাই জীবনের সব থেকে বড় সত্যি!
জীবন হল প্রবাহমান নদীর মত, যেদিন পৃথিবীতে আগমন করেছি সেদিন থেকে প্রবাহ শুরু, কতজনকে পাশে পেয়েছি, কতজনকে সাথে নিয়ে চলছি, আবার কতজনকে বিসর্জন দিয়েছি ঠিক নদীতে জেগে উঠা চরের মত, তার হিসেব করে কখনও দেখা হয়ে উঠেনি! যাকে হারিয়েছি, পিছনে ফেলে এসেছি, যা মিস করছি কিন্তু তাই বলে জীবনতো থেমে থাকেনি।
হয়ত এক সময় জীবনের এই প্রবাহ সাঙ্গ হবে ঠিক নদী যেমন সাগরে যেয়ে বিলিন হয়, কিন্ত করেছি কি নিজের জীবনের জন্য কিছু পাথেয় কামাই? নাকি শুধুই বয়েই চলছি অজানার উদ্দেশ্যে...। নিজের জন্য কিছু করুন, নিজের আশেপাশের মানুষের জন্য বাঁচুন।
তাই ব্রেকআপ পরবর্তী একাকিত্ব ও হতাশার সময়গুলোতে কি করবেন-
১.নিজেকে ভালোবাসুন
২.নিজের কাজকে সম্মান করুন
৩.যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করুন, নতুন নতুন ক্ষেত্রে সম্পর্ক গড়ে তুলুন
৪.সকলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে
৫.পরিবারকে সময় দেওয়া বড় দায়িত্ব
৬.বন্ধুমহলে সময় দিবেন
৭.ভ্রমণ মনকে প্রশস্ত করে, ভ্রমণে, ক্যাম্পিংয়ে যাবেন
৮.জ্ঞানের দ্বার বই,বই পড়তে হবে আনন্দ নিয়ে
৭.আত্মার প্রশান্তি ধর্মীয় প্রার্থনা, যে ধর্মেরই হোন আপনি নিয়মিত মঙ্গলের প্রার্থনা করুন
৮.সামাজিক, কর্মীক বিভিন্ন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন
৯.কাজ খুঁজুন
১০.অপরের জন্য কাজ করুন
১১.সমাজের ও দেশের কাজে এগিয়ে আসতে হবে
১২.নিজের অন্তর্নিহিত শক্তিকে বের করে আনা, এটা আত্মদর্শনের মাঝেই সম্ভব
১৩.সৃজনশীলতা বৃদ্ধি, প্রত্যেক মানুষের মাঝে সৃষ্টিশীলতা রয়েছে একে জাগ্রত করুন। নিজের সৃষ্টিকে সম্মান করুন
১৪.স্কিল ডেভেলপমেন্ট করুন, অজানা বিষয় সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা অর্জন।
১৫. ছবি আঁকা, গান শোনা, খেলা ইত্যাদি অর্থাৎ নিজের শখের কাজগুলো করবেন।
নিজেকে তৈরি করুন, এমনভাবে তৈরি করুন যেন আপনাকে ভালোবাসার পেছনে দৌঁড়াতে না হয়, ভালোবাসা নিজে ধরা দিবে আপনার দুয়ারে। সময় কিভাবে যাচ্ছে বুঝতেও পারবেন না। হতাশা নয়, হতাশার গল্প থেকে শুরু হোক এক নতুন শুরুর গল্প।