কার্তিকের কান্নার আওয়াজ কতদূর পৌঁছাবে?



রফিকুল ইসলাম মন্টু, স্পেশালিস্ট রাইটার,বার্তা২৪.কম
কাঁদছেন কার্তিক, পেছনে ডুবন্ত গ্রাম/ ছবি: র, ই, মন্টু

কাঁদছেন কার্তিক, পেছনে ডুবন্ত গ্রাম/ ছবি: র, ই, মন্টু

  • Font increase
  • Font Decrease

ছায়া সুনিবিড় হাজতখালী গ্রামের ঐখানে তার বাড়ি ছিল। দিনমজুর বাবার সারাজীবনের জমানো অর্থ আর নিজের শ্রমে গড়ে উঠেছিল সে দালান বাড়ি। মাত্র একমাস ঘরে বসবাস করতে পেরেছেন। গুছিয়ে নিয়েছিলেন সবকিছু। বুড়ো বাবা-মা, বউ, ছেলেপুলে, সকলেই ছিল একসঙ্গে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রলয়ে প্রবল স্রোতের তোড়ে ভেসে গেল সব। বাঁধ ভাঙা পানির স্রোত হাজতখালীর খালে বাড়িয়ে তুলেছিল ভাঙন। আর সেই ভাঙনে আম্পানের পরের দিন ভোরে চোখের সামনেই আছড়ে পড়লো বাড়িটি।

কার্তিক এখন নিঃস্ব। তার বসত হয়েছে হাজতখালী বাঁধের ঝুপড়ি ঘরে। শহুরে লোকজন আর ক্যামেরা ফ্ল্যাশ লাইটের আলোর ঝলকানি কার্তিকের কান্না বাড়িয়ে দেয়। কাঁদছিলেন তার মা উষারাণী, বউ সুষমারাণী। বাঁধের ওপরে ঝুপড়ি ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বার বার হাত তুলে দেখাচ্ছিলেন বাড়ির স্থানটি। যেখানে তার বাড়ি ছিল, সেখানে এখন অন্তত ৩০ হাত পানি। জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় সবকিছু। আম্পানের পরের সকালে বাড়ির মালামাল গোছাতে গিয়ে স্রোতের তোড়ে নিজেরাই পড়েছিলেন ঝুঁকিতে। শেষে নিজেরা প্রাণে বাঁচলেও ঘরখানা পড়ে গেল দুমড়ে মুচড়ে।  

নির্বাক কার্তিকের মা ঊষারাণী/ ছবি: র, ই, মন্টু

তার পুরো নাম কার্তিক মন্ডল। বাবা খোকন মন্ডল। বাড়িটা খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের হাজতখালী গ্রামে। কার্তিক একা নন, গোটা হাজতখালী গ্রামটাই উঠে এসেছে বেড়িবাঁধের ওপরে। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। যে যেখানে পারছে ঘর বানিয়ে বসতি গড়েছে। কোথায় খাবার পানি, কোথায় টয়লেট, কোথায় রান্না কিংবা থাকার জায়গা, কোথায় গরু-ছাগল রাখার জায়গা! সবকিছুই যেন এলোমেলো। সবার চোখে দু:স্বপ্ন। এগুলো কী বাস্তবে; নাকি স্বপ্নে! মিলাতে পারেন না মানুষগুলো। হাজতখালী স্লুইজগেট থেকে কাশির হাটেখোলা অবধি মাত্র আধা কিলোমিটার বাঁধ ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে। এখানেই উঠেছে কয়েকশ’ পরিবার।

কার্তিক মন্ডল জানালেন, মাত্র এক মাস আগে এই বাড়ির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাড়ি করার জন্য দিনমজুর বাবা অনেক কষ্টে ডিপিএস-এ কিছু টাকা জমিয়েছিলেন। সেই টাকাতেই অল্প খরচের দালান করেছিলেন। আম্পান প্রলয়ের মাত্র একমাস আগে উঠেছিলেন সেই ঘরে। কার্তিক শ্রমিকের কাজে ছিলেন খুলনায়। ঘূর্ণিঝড়ের সিগন্যাল পেয়ে বাড়ি চলে আসেন। কিন্তু এলে কী হবে? শেষ রক্ষা হলো না। যেখানে হাজতখালী গ্রামটাই নেই, সেখানে কার্তিকের ঘর থাকে কী করে! কথা বলার সময় তার আশপাশে ঘুরছিল তার পাঁচ ছেলেমেয়ে- দেব, অরুণ, পুজা, আশা, সুপ্রিয়া। পাশে দাঁড়িয়েছিল বউ সুষমা মন্ডল। বড়দের চোখ ভিজে আছে কষ্টের জলে। ছোটদের চোখে জল না থাকলেও ওদের বুকেও হয়তো বইছে হৃদয়ভাঙা হাহাকার। কেননা, এই প্রাকৃতিক বিপদে বড়দের সঙ্গে ছোটরাও কম ভ‚গছে না।

নিঃস্ব অনিতা রাণী বাকরুদ্ধ/ ছবি: র, ই, মন্টু

হাজতখালী গ্রামের ভাঙা স্লুইজ গেট, যেখান থেকে হু হু করে আম্পানের পানি ঢুকেছিল গ্রামে, সেই গেটের কাছেই বেড়িবাঁধের ওপরে কার্তিকের ঘর। কার্তিক স্থান পেয়েছেন বাঁধের উপরের দিকে। কিন্তু ৮৬ বছর বয়সী জগদীশ মন্ডল আর ৭৫ বছর বয়সী অনিতা রাণী দম্পতির ঠাঁই হয়েছে বাঁধের খানিকটা নিচের দিকে। বাঁধের বাইরে, যেখান থেকে জোয়ারের পানি সামান্য দূরে, সেখানেই তাদের এলোমেলো ঘর। পানি বাড়লে এ ঘরখানাও ভাসবে। চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি অনিতা রাণীও। বললেন, সব শেষ হয়ে গেল। এখন কই থাকবো, কী খাবো। পাশে দাঁড়ানো জগদীশ মন্ডলও হাতে থাকা গামছা দিয়ে বার বার চোখ মুছছিলেন।

পাশেই ঘরের সঙ্গে লাগানো আরেক ঘর। এ ঘরখানা পরিতোষ মন্ডলের। উদোম শরীরে নির্বাক দাঁড়িয়ে। কিছু বলতে চান তিনিও। তার কাছেও আছে আরেকখানা হৃদয়বিদারক গল্প। পরিতোষ কৃষিকাজ করতেন। নিজের সামান্য জমি আর বর্গা নেওয়া জমিতে বেশ চলে যাচ্ছিল দিনকাল। দু’ছেলেমেয়ে বন্ধনা মন্ডল আর প্রকাশ মন্ডল পড়ালেখা করে উত্তর বেদকাশী কলেজিয়েটে। কিন্তু আম্পান সব এলোমেলো করে দিল। ঝড়ের পরে তাদের বইপত্র নিয়ে এসেছে বটে; কিন্তু সেগুলো সব ভেজা। তপ্ত রোদে ঝুপড়ি ঘরের চালায় সেই ভেজা বইগুলো শুকাচ্ছিল বন্ধনা। পরিতোষ মন্ডল বলেন, মাত্র বছর চারেক আগে প্রায় চার লাখ টাকা খরচে বাড়ি করেছিলেন। ভালোই চলছিলেন। কিন্তু মাত্র এক রাতেই পথে হলো ঠাঁই। আবার কবে ফিরবে স্বাভাবিক জীবন; জানেন না পরিতোষ।

হাজতখালী গ্রাম এখন বেড়িবাঁধে/ ছবি: র, ই, মন্টু

ঘর কিংবা মালামাল বাঁচানো তো দূরের কথা; আম্পানের রাতে এই এলাকার মানুষের জীবন বাঁচানোই ছিল কঠিন। আশ্রয় নেওয়ার মত একমাত্র ভরসা ছিল হাজতখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একতলা ভবনটি। কিন্তু সে ভবনটিও প্রবল পানির চাপে অর্ধেকটা ডুবে যায়। এক-দেড়শ’ মানুষ যারা আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারা পরে ছাদে উঠে প্রাণ রক্ষা করেন। মানুষের ভিড়ে এই স্কুল ভবনটিতে যেতে না পেরে অনেকে বাঁধে উঠে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আম্পান প্রলয়ের ২৩দিন পরেও বিদ্যালয় ভবনটির অর্ধেকটা ডুবেছিল পানির নিচে। একদিকে বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ, অন্যদিকে নেই আশ্রয়ের ব্যবস্থা। উত্তর বেদকাশীর কপোতাক্ষ তীর ধরে সব এলাকার অবস্থাই প্রায় একই রকম। স্কুল ভবন ব্যতীত সাইক্লোন শেলটার খুব একটা চোখে পড়েনি। যেখানে বাঁধ নাজুক, সেখানে আশ্রয়কেন্দ্র না থাকলে মানুষজন কতটা অসহায় হয়ে পড়ে; তা কথা না বললে বোঝা যায় না। 

সেদিনের ভয়াবহতার ছবিটা চোখের সামনে তুলে ধরে রীতা রাণী মন্ডল বলছিলেন, তিনি এবং তার ১২ বছর বয়সী ছেলে দ্বীপ মন্ডল বাঁধের উপরে বাবলা গাছ ধরে বেঁচেছিলেন। রাত দশটার দিকে বাঁধ উপচে গিয়েছিল পানি। রীতা রাণীর স্বামী পরিমল মন্ডল বউ-ছেলেকে বাঁধে নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে নিজে চলে যান বাড়িতে। নিজের দালান ঘরেই ছিলেন। ঝড়ে বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হলেও ঘরখানা দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু শেষ অবধি সেটিও রক্ষা হয়নি। আম্পান প্রলয়ের তিনদিন পরে দালানটি ধ্বসে পড়ে। তার ঘরটি যেখানে ছিল; সেখানে এখন হাজতখালী খালের স্রোতধারা বইছে।

ঘূর্ণিঝড়ের আম্পানের সিগন্যাল পেয়েও ঘর ছাড়েননি হাজতখালী গ্রামের সরোজিনী মন্ডল। বাড়ির সামনে রাস্তায় এসে উঠেছিলেন। পানির তোড় বাড়লে একটি বকুল গাছের ডাল ধরে প্রাণ রক্ষা করেন। স্বামী স্বপন মন্ডল আর ছেলেমেয়ে হৃদয়, গৌরী সেখানেই ছিল রাতভর। একই গ্রামের বাবুলাল সরকারের বউ ঊষারাণী সরকার বাড়িতেই ছিলেন। পরে ভয় বাড়ে। রাত দশটার দিকে গ্রামের একমাত্র আশ্রয়ের স্থান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে যান। নিচতলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে পানি বাড়তে থাকলে প্রথমে সিঁড়িতে এবং শেষে ভবনের ছাদে আশ্রয় নেন। আম্পানের প্রলয়ের রাতে হাজতখালীর মানুষেরা এক বিভিষীকার অতিক্রম করেছে। গ্রামের মানুষজন প্রাণে রক্ষা পেলেও সম্পদ কিছুই বাঁচেনি।

ভাঙা স্লুইজ গেটের পাশে বেড়িবাঁধের ওপরে দাঁড়িয়ে দেখা যায় পানির নিচে হাজতখালী গ্রাম। দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি বড় গাছ ছাড়া গ্রামের আর কিছুই দেখা যায় না। সবই পানির স্রোতে ভেসে গেছে। স্লুইজ গেট ভেঙে পানি ঢুকে গ্রামের সরু খালটি ভাঙনে অনেক বড় হয়ে গেছে। অথচ এই গ্রামের মানুষদের সব ছিল। ধান ক্ষেত, সবজি ক্ষেত, পুকুর, ফলের গাছ, সাজানো গোছানো বাড়িঘর, সবই ছিল। খালের ধার দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছিল সরু রাস্তা। এখন সে সবের কোন নিশানা খুঁজে পাওয়া মুস্কিল। মানুষগুলো বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে শুধু হাহাকার করছেন। আর ভাবছেন কীভাবে আবার শুরু করবেন।

টুম্পারাণী মন্ডল গ্রামের দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন, ওই যে দেখছেন তরঙ্গময়, ওখানেই ছিল আমার সবজির বাগান। বেশ আনাজপাতি হতো। প্রায় বাড়িতেই ছিল বাগান। অনেকে তো সপ্তাহে চার হাজার টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত আনাজপাতি বিক্রি করতো। সে টাকা সংসার চালাতে সাহায্য করতো। কিন্তু সেসব এক নিমিষে হারিয়ে গেল। কবে যে বাড়ি ফিরতে পারবো, তারও কোন হিসেব নেই। অনেকে আম্পানের এই প্রলয়কে আইলার চেয়েও ভয়াবহ বলে আখ্যা দিলেন। বললেন, আইলার পরে পানি নেমে গিয়েছিল, কিন্তু আম্পানে যে পানি রেখে গেল গ্রামজুড়ে; তা তো আর সরছে না। নদীতে মাছ নেই, মাঠে ঘাটে কাজ নেই, চলবে কীভাবে? কার্তিক, অনিতা, জগদীশ, পরিতোষদের কান্নার আওয়াজই বা কতদূর পৌঁছাবে? এইসব প্রশ্নের জবাব মিলে না।   

   

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;