করোনার থাবায় কর্মক্ষম মানুষ!



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
করোনার থাবায় কর্মক্ষম মানুষ/ছবি: সংগৃহীত

করোনার থাবায় কর্মক্ষম মানুষ/ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন তথ্য-পরিসংখ্যান প্রতিদিনই দেশবিদেশে প্রকাশ পাচ্ছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার পাশাপাশি জানা যাচ্ছে সুস্থ হওয়া মানুষদের সংখ্যাও। এসবের বাইরে অঞ্চল, শ্রেণি, বয়স, লিঙ্গ ভেদে করোনার গতি-প্রকৃতি শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে তথ্য-পরিসংখ্যানের মাধ্যমে।

প্রথম দিকে প্রাপ্ত পূর্বাভাসে করোনায় শিশু ও বৃদ্ধরা অধিকতর আক্রান্তের ঝুঁকিপূর্ণ, এমন একটি কথা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সমীক্ষায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, বিশ্বে কর্মক্ষম জনসংখ্যার এক বৃহৎ অংশই করোনায় কো-মর্বিডিটির শিকার। এই তথ্যে করোনার গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা আরো জানিয়েছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় কর্মক্ষম জনসংখ্যা অধিক। কর্মক্ষম জনশক্তি বলতে ধরা হয় ২৫ থেকে ৬৫ বছরের বয়সসীমার মানুষদের, যা উৎপাদনশীলতা নিরিখে ইতিবাচক, যারা রয়েছেন করোনার ঝুঁকিতে।

ভয়ের বিষয় হলো, এই কর্মক্ষম মানুষেরা করোনার থাবার বাইরে নেই। কারণ বিশ্বের নানা দেশে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলেতে কর্মক্ষম জনসংখ্যা যে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, এমন বলা চলে না। সকল নাগরিকের মতো কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীও সাধারণ স্বাস্থ্যগত সমস্যার শিকার। করোনা তাদেরকে সুযোগ পেলেই আক্রান্ত করছে।

সর্বসাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অনেকেই ত্রিশের কোঠা পার না হতেই অকালবার্ধক্যের শিকার হয়ে পড়েন। পেশা ও লাইফস্টাইলের কারণে বিভিন্ন অনিয়ম হেতু তাদের শরীরে বাসা বাঁধে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি ও হৃদরোগের মতো নানা অসুখ।

আরেকটি মারাত্মক তথ্যও সবার নজরে এসেছে। তা হলো, কোভিডের কারণে ইউরোপ-আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় সেসব দেশে বসবাসকারী দক্ষিণ এশীয়দের মৃত্যুহার প্রায় ২০ শতাংশ অধিক। কারণ হিসেবে ডায়াবেটিসকেই প্রাথমিক ভাবে দায়ী করা হয়েছে। দেখা গেছে, করোনাক্রান্ত শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় অশ্বেতাঙ্গদের গড় বয়স কম এবং তাদের অন্যান্য জটিল অসুখও কম। কিন্তু তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ অত্যধিক বা তারা কমবেশি ডায়াবেটিস আক্রান্ত।

বিশেষজ্ঞদের তথ্যানুযায়ী, উত্তর গোলার্ধে বসবাসকারী প্রায় ৪০ শতাংশ দক্ষিণ এশীয়ই টাইপ-ওয়ান অথবা টাইপ-টু ডায়াবেটিসের শিকার। করোনার ন্যায় মহামারির ক্ষেত্রে এসব অসুখ মৃত্যুহার অন্তত ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন। করোনায় দক্ষিণ এশিয়া ও অন্যান্য অনুন্নত দেশেও মধ্যবয়সীদের অধিক মৃত্যুহার পরিলক্ষিত হওয়ায় বিশেষজ্ঞদের সতর্কতামূলক পূর্বাভাস বাস্তবেও দেখা যাচ্ছে।

ফলে করোনা প্রতিরোধের পটভূমিতে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত, বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী অনুযায়ী কর্মক্ষম মানুষদের নিয়মিত নজরদারিতে রেখে কো-মর্বিডিটির আশঙ্কা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।

অবশ্য এক্ষেত্রে বাস্তবতা বেশ বিরূপ। কারণ, করোনার তীব্র প্রকোপে সম্পূর্ণ চিকিৎসা পরিকাঠামোই রাতারাতি মহামারি প্রতিরোধ কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। করোনা সংক্রমণ-আতঙ্কে বন্ধ বহু হাসপাতালের বহির্বিভাগ, চিকিৎসকের চেম্বার। গৃহবন্দি রোগীরাও রক্তচাপ, শর্করার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন না।

তদুপরি লকডাউন বা সামাজিক দূরত্বের কারণে অত্যাবশ্যক ওষুধের সরবরাহেও বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘ লকডাউনে নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো প্রাত্যহিক খরচ বাঁচাতে রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের পরীক্ষা ও ওষুধ ক্রয় কমিয়ে দিতেও বাধ্য হচ্ছে। এমনই আত্মঘাতী পরিস্থিতিতে নীরব ঘাতক রূপে কিছু কিছু রোগ মানুষের শরীরে বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা করোনায় আক্রান্তের ক্ষেত্রে অধিকতর বিপদের সম্মুখীন।

এসব মানুষের মধ্যে পেশাজীবী ও কর্মক্ষম মানুষই বেশি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া বিশেষজ্ঞরা অল্পবয়সীদের মধ্যে ‘ক্রনিক মর্বিডিটি’-র অত্যধিক বৃদ্ধির আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। এসব রোগ যে নিঃশব্দ ঘাতক, তা সবার জানা। জাতিসংঘের ইএসসিএপি-র গবেষণাপত্রেও তেমনই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। অথচ চলমান মহামারির সময় এসব বিষয়ে বাড়তি স্বাস্থ্য বিষয়ক সতর্কতা গৃহীত হয়নি।

এ কথা সবার জানা, করোনার মধ্যে ক্রমে ক্রমে পেশাগত ও আর্থিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মক্ষম মানুষদের কাজের প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতেই হবে। তখন সংক্রমণের আশঙ্কাও তাদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পাবে, মৃত্যুহার ও আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়বে, এমনই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

ফলে করোনার বিরুদ্ধে চলমান অতি জরুরি স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য নীরবঘাতক রূপী রোগ, যথা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যার ব্যাপারে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। ঘরে-বসা চিকিৎসকদের পেশায় তৎপর করে সাধারণ ক্লিনিক-হাসপাতালের নৈমিত্তিক কাজ পুনরায় সচল করতে হবে। ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো বড় বড় শহর এবং মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে এসব নীরব ঘাতক নামে চিহ্নিত রোগের চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা-পর্যবেক্ষণকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এজন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী, টেকনিশিয়ান না থাকলে নতুন নিয়োগের ব্যবস্থাও করতে হবে।

বাস্তবতা হলো এই যে, স্বাস্থ্যখাতের সবাই করোনাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ও উত্তেজিত বলে অপরাপর রোগের জন্য স্বাস্থ্যসেবার হাল নাজুক, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়ানক জটিল করবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তখন করোনার মতোই অন্যান্য রোগে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যেতে পারে।

বিশেষত কর্মক্ষম জনসংখ্যা সকল দেশের জন্যেই অমূল্য সম্পদ। তারা অধিকহারে আক্রান্ত হলে দেশের চালিকা শক্তির কাঠামো ভেঙে পড়বে। এতে যে আর্থিক-সামাজিক প্রভাব পড়বে, তা হবে অতি ভয়াবহ। ফলে এদেরকে অন্যান্য রোগের নিয়মিত চিকিৎসা সুযোগ দিয়ে সুস্থ-সবল এবং করোনার বিপদমুক্ত রাখাও বিদ্যমান স্বাস্থ্য-চিকিৎসা কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ বলে বিবেচনা করা কর্তব্য।

৫৫ বছর পর ডুবে যাওয়া জাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৫৫ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬৯ সালের ২৫ আগস্ট একটি দুর্যোগ বার্তা দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডুবে যায় অস্ট্রেলিয়ার 'এমভি নুনগাহ' জাহাজ। পরে তাৎক্ষণিক উদ্ধার তৎপরতায়ও জাহাজে থাকা মানুষদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তখন থেকেই জাহাজটির নিখোঁজ হওয়া দেশটির নাগরিকদের কাছে রহস্য হয়ে ছিল। 

এবার সেই রহস্যের উদঘাটনের দ্বারপ্রান্তে দেশটির বিজ্ঞান সংস্থা কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও)। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, ডুবে যাওয়া জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে।

ওই ঘটনায় জাহাজে থাকা ২৬ জনের মধ্যে ক্রুসহ ২১ জনের মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে উঠে এসেছিল।  

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার তথ্য জানায়।

বিবিসি জানায়, ৭১ মিটার (২৩৩ ফুট) দৈর্ঘ্যের ওই মালবাহী জাহাজটি নিউ সাউথ ওয়েলসের উপকূল থেকে ইস্পাত নিয়ে যাচ্ছিল। পরে ঝড়ের কবলে পরে জাহাজটি ডুবে যায়। এমন ঘটনা তখন অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। 

জাহাজটি ডুবে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচজনকে জীবিত ও ২০ জনের মরদেহ তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একঝনের লাশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ডেরওয়েন্ট নদীতে ১৯৫৬ সালে তোলা 'এমভি নুনগাহ'
 

গণমাধ্যমটি জানায়, অস্ট্রেলিয়া তাদের উচ্চ রেজোলিউশন সমুদ্রতল ম্যাপিং এবং ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে ধ্বংসাবশেষের অবস্থান নিশ্চিত করেছে।

তবে সিডনি থেকে প্রায় ৪৬০ কি.মি (২৮৬ মাইল) উত্তরে সাউথ ওয়েস্ট রকসের উপকূলের গভীর জলে স্থানীয়রা এক বছর আগে একটি ধ্বংসাবশেষ দেখেছিল। পরে তারা এ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবগত করার পর বিজ্ঞানীরা সন্ধান চালিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। 

স্থানীয়দের তথ্যের পর বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করেছিল এটি ডুবে যাওয়া জাহাজটি হতে পারে। তবে প্রয়োজনীয় কোন প্রযুক্তি বা ডাইভিং জ্ঞান না থাকার কারণে সেটিই যে ডুবে যাওয়া জাহাজ নুনগাহ তা নিশ্চিত করতে পারেনি তারা।

গত মাসে সিএসআইআরও উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে শুরু করে।

পরে তারা ওই স্থানের ১৭০ মিটার নিচে এর ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

সিএসআইআরও'র কর্মকর্তা ম্যাট কিম্বার বলেন, এই ট্র্যাজেডি এখনও অনেকের স্মৃতিতে রয়েছে। তবে ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের বিষয়টি জানার ফলে সবার জন্যই কিছুটা স্বস্তির কারণ হবে। 

নিহত ক্রুদের পরিবারের সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে জানিয়েছেন, আবিষ্কারটি একটি স্বস্তির বিষয়।

;

বিশ্বের সবচেয়ে ‘কুৎসিত কুকুর’ এটি!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর কুকুরের তথ্য যেমন রয়েছে তেমনি এবার সবচেয়ে কুৎসিত আকৃতির কুকুরেরও তথ্য মিলেছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।

স্কাই নিউজ বলছে, চলতি বছরের ২১ জুন (শুক্রবার) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত কুকু্রের প্রতিযোগিতা বসেছে। ওই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা ওয়াইল্ড থাং নামে আট বছর বয়সী একটি কুকুর এ তকমা পেয়েছে।

তবে এবারই ওয়াইল্ড থাং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি। এর আগেও ৫ বার এমন প্রতিযোগিতায় প্রাণীটি অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু প্রতিবারই নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।

ওয়াইল্ড থাং এবং তার মালিক অ্যান লুইস। ছবি: সুমিকো মুটস / এনবিসি নিউজ

ওয়াইল্ড থাং এর মালিক অ্যান লুইস বলেন, ওয়াইল্ড থাং কুকুরছানা হিসাবে একটি ভয়ানক রোগ ক্যানাইন ডিস্টেম্পারে সংক্রমিত হয়েছিল। কোন ক্ষতি ছাড়াই অনেক চিকিৎসার পর বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তার দাঁত বেশি বৃদ্ধি না পাওয়ায় জিহ্বা বাইরে থাকে এবং তার সামনের ডান পা ২৪/৭ প্যাডেল আকারে থাকে।

পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে ৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৫১১ টাকা) দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত কুকুর প্রতিযোগিতা প্রায় ৫০ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিযোগিতাটি আকর্ষণীয় করার জন্য কুকুরগুলোকে বিশেষ এবং অনন্য করে সাজিয়ে তোলা হয়।

;

ট্যাক্সি চালকের অনর্গল ইংরেজি বলার দক্ষতা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এই সংবাদটি পড়তে হলে আপনাকে ভুলে যেতে হবে শুধু শিক্ষিতরাই সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারেন! কারণ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় এক ট্যাক্সি চালক তার যাত্রীর সাথে অনর্গল ইংরজিতে কথা বলছেন।

ঘটনাটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্রে ঘটেছে। দেশটির গণমাধ্যম এনডিতিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এনডিটিভি বলছে, ওই ট্যাক্সি চালক তার যাত্রীদের সাথে ইংরেজি কথা বলার পাশাপাশি কিভাবে আরও দক্ষ হওয়া যায় সে বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।

মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে ধারণ করা ভিডিওটি ভূষণ নামে একজন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন। ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, "এমন ঘটনা দেখে আমি কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। পরে তার সাথে কথা বলার সময় কিছুটা তোতলা হয়েছিলাম। তার ইংরেজিতে সাবলীলতা দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম।"

পরে তার সাথে এ নিয়ে কিছুক্ষণ আলাপ হলো।

ট্যাক্সি চালক বলেন, ইংরেজি শেখা থাকলে আপনি লন্ডন এবং প্যারিসের মতো উন্নত দেশে যেতে পারবেন। এটা বিশ্বব্যাপী ভাষা। এ কারণে ইংরেজি শেখা গুরুত্বপূর্ণ।

ভিডিওটিতে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, "তার কথা বলার ধরণ ডক্টর এপিজে আবদুল কালামের মতো শোনাচ্ছেন"।

অপর একজন লিখেছেন, "১৬ বছরের শিক্ষার পর তার ইংরেজি আমার চেয়ে অনেক ভালো।"

;

‘প্রিয় স্বাধীনতা’ কবিতার মেঘনা নদীর দেখা মেলে চুনা নদীতে



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরের জীবন

ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরের জীবন

  • Font increase
  • Font Decrease

মেঘনা নদী দেব পাড়ি
কল-অলা এক নায়ে।

আবার আমি যাব আমার
পাড়াতলী গাঁয়ে।

গাছ-ঘেরা ঐ পুকুরপাড়ে
বসব বিকাল বেলা।

দু-চোখ ভরে দেখব কত
আলো-ছায়ার খেলা।

বাঁশবাগানে আধখানা চাঁদ
থাকবে ঝুলে একা।


ঝোপে ঝাড়ে বাতির মতো
জোনাক যাবে দেখা।

ধানের গন্ধ আনবে ডেকে
আমার ছেলেবেলা।

বসবে আবার দুচোখে জুড়ে
প্রজাপতির মেলা।

হঠাৎ আমি চমকে উঠি
হলদে পাখির ডাকে।

ইচ্ছে করে ছুটে বেড়াই
মেঘনা নদীর বাঁকে।

শত যুগের ঘন আঁধার
গাঁয়ে আজো আছে।

সেই আঁধারে মানুষগুলো
লড়াই করে বাঁচে।

মনে আমার ঝলসে ওঠে
একাত্তরের কথা,

পাখির ডানায় লিখেছিলাম-
প্রিয় স্বাধীনতা।

কবি শামসুর রাহমানের প্রিয় স্বাধীনতা কবিতার লাইনের সঙ্গে মিল রেখে বলতে হয়-

শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরে থাকা মানুষগুলোর কথা।
চুনা নদী পাড়ি দেবো, ডিঙ্গি নৌকা দিয়া।

আবার আমি যাবো আমার উপকূলের গাঁয়ে।
কাজের জন্য ছুটে বেড়াই, চুনা নদীর বাঁকে।

বনে বাঘ, জলে কুমির আর ডাঙ্গায় লোনা পানির ক্ষত।
সেই চরের মানুষগুলো, এখনো লড়াই করে বাঁচে।

বর্ষাকালের দুপুর বেলা। আকাশে কালো মেঘ খেলা করছে! নদীতে পানি ঢেউ খেলছে! ভেসে আসছে, গেট থেকে জল আসার শব্দ। নদীর এপার ওপার হচ্ছেন ডিঙা নৌকা দিয়ে পাড়ে থাকা মানুষগুলো। ছুটে চলেছেন নারী-পুরুষ একে একে চুনা নদীর তীরে কাজের সন্ধানে। সন্ধ্যা হলেই দেখা মেলে বাড়ি ফেরার তাড়া। রাতের আঁধারে পশুপাখি, জীবজন্তু, পোকামাকড়ের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচেন এই চুনা নদীর পাড়ের মানুষগুলো।

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরে বসবাস নিত্যসংগ্রামী মানুষদের, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪.কম


এখানকার মানুষজন লড়াই সংগ্রাম করে এখনো টিকে আছেন। টিকে থেকে তাদের রোজ কাজের সন্ধানে অবিরাম ছুটে চলতে হয়। বর্তমানে ভাঙাগড়ার জীবনে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যত নিয়ে বসবাস করছেন তারা। শ্যামনগর উপজেলার কলবাড়ি এলাকায় অবস্থিত চুনা নদীর চরটি। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারানো ২০-২৫টি জেলে পরিবারের ঠাঁই হয়েছে এখানে। বছরের পর বছর এই চরকে আগলে বসবাস করলেও সব সময় লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের।

তাদের একজন ৩৫ বছর বয়েসি রমেশ চন্দ্র মণ্ডল। দুর্যোগে সহায়-সম্পদ হারিয়ে আশ্রয় নেন চরের এক কোণে। সেখানে মাটির ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস তার। শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও ভর করে থাকতে হয়, স্ত্রীর ওপর। তার কষ্টের বিনিময়ে জোটে তাদের একমুঠো ভাত। স্ত্রী একাই লড়াই সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন তাদের নিয়ে এই চরে।

বনে পশুপাখির, জলে কুমির আর স্থলে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে এভাবে তাদের জীবন প্রবহমান। তাদের জীবন চলার পথে নেই কোনো বিরাম। সংগ্রাম করে টিকে থাকেন সবাই। একে একে সব কিছু হারিয়েও এখানো টিকে থাকতে হয় তাদের।

রমেশের মতো একই অবস্থা ষাটোর্ধ্ব ফকির বিশ্বাসের। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়লেও পেটের দায়ে কাজ করতে হয় তাকে। একবেলা কাজ করলে অপর বেলা কাটে অসুস্থতায়!

ফকির বিশ্বাস বার্তা২৪কমকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারিয়ে এই চরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আশ্রয়ের দুই যুগ লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকলেও ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারিনি। বরং প্রতিবছর ছোটবড় দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি। লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়েছে বারংবার!

জীবন কাটে যুদ্ধ করে, ঝড়-ঝঞ্ঝা মাথায় পেতে...চুনা নদীর তীরের মানুষের জীবন, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪.কম

চুনা নদীর চরে মাছের পোনা গুনতে দেখা যায় নমিতা রাণী রায়কে। নমিতা রাণী রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্বামী-সন্তান নিয়ে সবসময় চিন্তার ভেতরে থাকতে হয় আমাকে। নদীতে কুমির আর বনে বাঘের আতঙ্ক! তারপর ডাঙায় লোনা পানির ক্ষত। লবণাক্ততায় ভরা জীবনকাল। তারপর চরটি নদীর ধারে হওয়াতে একটু জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বসতবাড়ি। এই লড়াই-সংগ্রাম করেই বেঁচে আছি সেই প্রথম থেকে। মাছের পোনা বিক্রি করে চলে আমাদের সংসার। আমরা সবাই এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম করে টিকে আছি।

নমিতা রাণী রায় বলেন, যখন বসতবাড়ি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়, তখন স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ওই সময় অনেক কষ্টে চর এলাকার সবার দিন কাটে। শিশু সন্তানদের সবসময় নজরে রাখতে হয়। অন্যথায় নদীতে পড়ে গিয়ে ঘটতে পারে ছোট-বড় দুর্ঘটনা!

নিত্যদিনের লড়াই-সংগ্রাম

লড়াই সংগ্রামের শেষ নেই উপকূলে থাকা মানুষজনের। সর্বশেষ, ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর আঘাতে নদীর জোয়ারের জলে তলিয়ে যায় তাদের বসতঘর। ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ বলে কথা না! যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জোয়ারের পানিতে তাদের বসতঘর তলিয়ে যায়। তখন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না তাদের। এমনও অনেক সময় গেছে যে, দিনের পর দিন উনুনে আগুন দিতে পারেননি তারা। ওই সময় শুকনো খাবার খেয়ে থাকতে হয়েছে তাদের। এমনও দিন গেছে, যেদিন তাদের শুধুমাত্র পানি পান করে বেঁচে থাকার জন্য লড়তে হয়েছে।

ঘরছোঁয়া জলের বানের দিকে তাকিয়ে থাকেন চুনা নদীর তীরের মানুষজন আর ভাবেন আর কত সংগ্রাম, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়,বার্তা২৪.কম

সত্যি, তাদের ভাষ্যের সঙ্গে বড়ই মিল কবি শামসুর রাহমানের ‘প্রিয় স্বাধীনতা’ কবিতার! ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকাটা একটা বড় প্রশ্নেরই বটে! জঙ্গল, বন্যা, নদীভাঙনের সঙ্গে অবিরাম সংগ্রাম করে টিকে থাকা একটা অকল্পনীয় ব্যাপার। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট আর অভাবে চরের মানুষদের দৈনন্দিন জীবন। তাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঁধ ভাঙন, জলোচ্ছ্বাসসহ ঘূর্ণিঝড়। প্রতিবছর এসব দুর্যোগে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে প্রতিনিয়ত সর্বস্বান্ত হচ্ছেন তারা। আবারও লড়াই-সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার তাগিদে ঘুরেও দাঁড়ান তারা।

;