হযরত মোবারক আলী (রহ.) ফকিরের আজান



মোহাম্মদ আলম চৌধুরী
হযরত মোবারক আলী (রহ.) ফকির, ছবি: সংগৃহীত

হযরত মোবারক আলী (রহ.) ফকির, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হযরত মোবারক আলী ফকির (রহ.) কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন ও পেশ-ইমাম ছিলেন। তাঁর বাবাও বুজুর্গ ছিলেন। কেরামতিওয়ালা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। এ কথা সর্বজনবিদিত। তাঁর অলৌকিক কাহিনী নিয়ে বহু বয়ান আমি উখিয়ায় বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনেছি। চারজন সাক্ষীর কথা এখানে উল্লেখ করছি। যদিও তাঁরা সকলেই প্রয়াত। সাক্ষীরা হলেন- মরহুম মীর আহমদ সিকদার, মরহুম ফয়েজ আহমদ চৌধুরী (ওরফে ফয়েজ কোম্পানি), মরহুমা ছলেমা খাতুন (আমার নানী) ও স্বগীয় ডা. মুকুন্দবিহারী ধর (সাধু)।

একে তো বুজুর্গ পিতার সন্তান আবার তাঁর ব্যক্তিগত সততা ও ধর্মকাজে নিজের জীবন উৎসর্গ- করা নিয়ে সকলের কাছেই তিনি গ্রহণযোগ্য ছিলেন। তাঁকে নিয়ে আমার কিছু স্মৃতি রোমন্থন করার অভিপ্রায়ে অল্প কিছু লেখার চেষ্টা করেছি।

শৈশবে আমার নানার হাত ধরে উখিয়া স্টেশনে যেতাম। উখিয়ায় আমার নানার বাড়ি। সেহেতু নানা আর মামাতে ভরপুর উখিয়া স্টেশন। সবাইকে দেখে সিনার ছাতি আরও প্রসারিত হয়ে যেতো। নানা স্টেশনে বের হলেই আমি আসতাম। সকালে আর বিকেলে স্টেশনে আসা রুটিনকাজ ছিলো। আসহাব মিয়া সওদাগরের দোকান থেকে কেরোসিন নিতাম। পাশেই ছিল ইউসুফ আলী সওদাগরের পানের আড়ত। বাদশা মিয়া সওদাগরের দোকান থেকে পরোটা আর ডাল-ভাজি, কখনও চা-পরোটা খেয়ে ভোলাবাবুর দোকান থেকে পেঁয়াজ, রসুন আর নানীর জন্য শঙ্খমার্কা সরিষার তেল কিনে চলে আসতাম।

নানার সাথে স্টেশনে যাওয়ার সময় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে একটি মাটির গুদামঘর দেখলাম। আমি নানাকে এ ঘরটির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলাম। তখন নানার মুখেই শুনলাম অজানা বহু কাহিনী। এ দরগাহটি এখন নেই। নোংরা মোল্লা-রাজনীতির যাঁতাকলে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ফলে নতুন প্রজন্মের কাছে একজন বুজুর্গের কেরামত অজানা থেকে যাবে।

হযরত মোবারক আলী (রহ.) ফকিরের কণ্ঠে ধ্বণিত আজানে স্বর্গীয়সুধার মিশ্রণ ছিল। প্রাণের ভেতর আনচান করে উঠত। অধীর আগ্রহে থাকতাম কখন আজান ধ্বণিত হবে। চম্বুকাকর্ষণে ছুটে যেতাম মসজিদ পানে। যথাসময়ে তিনি আজান দিতেন। সাদা-জোব্বা আর মাথায় সাদা-পাগড়ি। মাটিতে এতো আস্তে কদম ফেলে হাঁটতেন যে দেখে মনে হতো তিনি যেন মাটির ব্যথা বুঝতে পারছেন। এতো মোলায়েম ব্যবহার আর সাধারণ জীবনযাপন তাঁর অসাধারণত্বের পরিচয় বহন করতো। দুনিয়ার প্রতি বিশেষ নিয়ামত হিসেবেই আল্লাহপাক এমন সজ্জন ব্যক্তিদের পাঠান।

মসজিদের উঠানে একটি গাবফল গাছ ছিলো। নিকসন মামা আমাকে নিয়ে যেতেন গাবফল খাওয়ার জন্য। নিকসন মামা বলতেন উঠানে ‘যেনো পাতা না পড়ে সেভাবেই নেবো জেঠা’। সেখান থেকে গাবফল নিয়ে আমরা চলে যেতাম। মসজিদ সম্প্রসারণের কারণে এখন গাবফল গাছ নেই।

সমবয়সী অনেকেই আমরা তখন মসজিদে পাঁচওয়াক্ত নামাজ আদায় করতাম। এতো যান্ত্রিক কোলাহলও তখন উখিয়ায় ছিলো না। প্রজন্মও এতো বিভ্রান্ত ও বৈষয়িক ছিলোনা। নীরব ঘুমন্ত আকাশ-বাতাসের বুক ভেদ করে মোবারক আলী ফকিরের আজান অনেক দূর পর্যন্ত পৌঁছে যেতো। মনের ভেতর আজানের স্বরে আনন্দের ফল্গুধারা বয়ে যেতো। এক অবর্ণনীয় আনন্দে ছুটে আসতাম মসজিদে।

আমি তখন উখিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। রমজান মাস। তারাবির নামাজ আদায়ের জন্য আগেভাগেই ছুটে আসতাম। বড় নামাজ- দীর্ঘক্ষণ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। পায়ে ব্যথা অনুভব করলে অস্থির হয়ে উঠতাম। তখন পেছনে এককোণে বসে বসে কয়েক রাকাআত আদায় করতাম। আর ভাবতাম, এ বুড়ো মানুষটি (মোবারক আলী ফকির) কিভাবে টানা নামায শেষ করেন। পুরো রমজান মাসে এভাবেই তারাবির নামাজ আদায় করতাম। শুধু তাই নয় সেহরি খাওয়ার পর ফলিয়াপাড়া রাস্তার ব্রিজের গোড়া পর্যন্ত সালাত সালাত বলে লোক ডাকতাম। কনকনে শীতের রাত। আবদুর রহমান মামাকেও দেখতাম মসজিদে চলে আসতে।

মসজিদের পাশেই দু’চালা একটি টিনের ছাউনিওয়ালা গুদামঘর ছিল। সেখানে তিনি বিশ্রাম নিতেন। একদিন যোহরের আজানের আগেভাগে গিয়ে আমি মসজিদের উঠান ঝাঁড়ু দিলাম। মূলত উঠানের গাবফল গাছের পাতা আর পুকুরপাড় সংলগ্ন কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছের পাতা পড়েই ময়লা হতো। সেদিন মসজিদে আগেভাগে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল সরাসরি তাঁর আজান দেওয়ার মুহূর্তগুলো অবলোকন করা। আমার আশা পূরণ হয়েছিল। তিনি যথাসময়ে দাঁড়িয়ে দু’হাত কর্ণগতরে দিয়ে আজান শুরু করলেন। আল্লাহু আকবর ধ্বনির সময় তাঁর চেহারা মোবারক পরিবর্তন হয়ে গেলো। তাঁর পুরো শরীরে কম্পন দেখে আমি হতবাক। বুড়ো মানুষ। কণ্ঠস্বরে যে তেজ! এতো  শক্তির উৎস কোথায়? আমি এখনও ভাবি, আমৃত্যু ভাববো সেই মাহেন্দ্র ক্ষণগুলো।

বহু মসজিদ থেকেই আজানের স্বর ধ্বণিত হতো কিন্তু মোবারক আলী ফকিরের কণ্ঠ আলাদা। স্বতন্ত্র স্বর। দ্বীপান্বিত অবয়ব থেকে এ যেনো জ্যোর্তিময় ডাক। এ যেনো স্বর্গলোক থেকে ভেসে আসা অমৃতসুধাময় কন্ঠস্বর, যা মনকে আনচানকে করে। মসজিদের সাথে মানবমনের সংযুক্তির এ ছান্দসিক আহ্বান- উপেক্ষা করা সেদিনের এ-কিশোরের পক্ষেও অসম্ভব ছিল।

আমি এখনও উখিয়া গেলে প্রথমেই যাই কেন্দ্রীয় মসজিদে। সালাত আদায়ের পর কবরস্থানের পাশে দাঁড়াই। আমার প্রিয়জনেরা সেখানে চিরশয্যায় শায়িত। জিয়ারত যেনো শেষ হয় না। আপনজনদের চেহারাগুলো ভেসে উঠে মনের ভেতর। স্মৃতিগুলো তরতাজা হয়ে আমাকে আবেগাপ্লুত করে। মন তাঁদের একনজর দেখার অভিপ্রায়ে ব্যাকুল হয়। দুরত্ব মাত্র তিনহাত। চর্মচক্ষু অক্ষম। মনশ্চক্ষুতে সারি আমার আত্মীয়-দর্শন। ফিরে আসি ক্ষতবিক্ষত মন নিয়ে।

উখিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে থেকে তিনি ৪৮ বছর আল্লাহর রাহে মানুষকে ডাক দিয়েছিলেন। ১০৫ বছর বয়সে তিনি এ ধরাধাম ত্যাগ করেন। এ বছর (২০২০) তাঁর ১৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। তিনি উখিয়ার ঘিলাতলীপাড়া নিবাসী হযরত ফজর রহমান শাহ (রহ.) একমাত্র পুত্র ছিলেন।  

দেশে-বিদেশে বহু মসজিদে আল্লাহর রহমতে নামাজ পড়ার সুযোগ পেয়েছি। বহু আজান শুনেছি। কিন্তু মোবারক আলী ফকিরের আজানই আমার হৃদয়ে ধ্বণিত হয়। কলিজা ধরে টানমারা এমন স্বর আমার কর্ণকুহরে আর কোথাও থেকে আসেনি। ‘আজান’ কবিতাটি মহাকবি কায়কোবাদ রচনা করেছেন।

কে ওই শোনাল মোরে আজানের ধ্বনি।

মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর

আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।

কি মধুর আজানের ধ্বনি!

আমি তো পাগল হয়ে সে মধুর তানে,

কি যে এক আকর্ষণে, ছুটে যাই মুগ্ধমনে

কি নিশীথে, কি দিবসে মসজিদের পানে।

হৃদয়ের তারে তারে, প্রাণের শোণিত-ধারে,

কি যে এক ঢেউ উঠে ভক্তির তুফানে-

কত সুধা আছে সেই মধুর আজানে।

নদী ও পাখির গানে তারই প্রতিধ্বনি।

ভ্রমরের গুণ-গানে সেই সুর আসে কানে

কি এক আবেশে মুগ্ধ নিখিল ধরণী।

ভূধরে, সাগরে জলে নির্ঝরণী কলকলে,

আমি যেন শুনি সেই আজানের ধ্বনি।

আহা যবে সেই সুর সুমধুর স্বরে,

ভাসে দূরে সায়াহ্নের নিথর অম্বরে,

প্রাণ করে আনচান, কি মধুর সে আজান,

তারি প্রতিধ্বনি শুনি আত্মার ভিতরে।

নীরব নিঝুম ধরা, বিশ্বে যেন সবই মরা,

এতটুকু শব্দ যবে নাহি কোন স্থানে,

মুয়াজ্জিন উচ্চৈঃস্বরে দাঁড়ায়ে মিনার ‘পরে

কি সুধা ছড়িয়ে দেয় উষার আজানে!

জাগাইতে মোহমুদ্ধ মানব সন্তানে।

আহা কি মধুর ওই আজানের ধ্বনি।

মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সমধুর

আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।

লেখক: শিক্ষক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;