বিয়ানীবাজার ক্যান্সার হাসপাতাল: মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মে
‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।’ মানুষের হৃদয় আছে বলেই সেটা অন্যের জন্য ছটফট করে, সেই হৃদয় নাড়া দেয়; জেগে ওঠে বিবেক। আর বিবেকবান মানুষগুলোই বেঁচে থাকেন তার কর্মে। এমনই এক বিবেকবান মানুষ সিলেটের বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাব উদ্দিন।
সিলেট অঞ্চলের মানুষ বিয়ানীবাজার ক্যান্সার হাসপাতাল সম্পর্কে অবগত। বেশ কয়েক বছর ধরে হাসপাতালটি মানুষের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষের উদারতার কথাও শুনেছি। তবে কখনও বাস্তবে দেখিনি। কিন্তু এবার প্রমাণ পেয়েছি অসহায় মানুষকে কীভাবে সেবা দিচ্ছে হাসপাতালটি।
সম্প্রতি বিয়ানীবাজারের চারখাই ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ইউকের সাধারণ সম্পাদক সুলতান তাপাদার এবং আমি বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাব উদ্দিন ও বাণিজ্যিক পরিচালক ও ট্রাস্টি ফরহাদ হোসেন টিপুর সঙ্গে কনফারেন্সে কথা বলতেছিলাম। এর আগে আমার কাছে খবর ছিলো- চারখাই ইউনিয়নের ফেনগ্রামের মাহের নামের একটি ছেলের ক্যান্সার ধরা পড়েছে। দু:খজনক বিষয় হলো- ছেলেটি অত্যন্ত দরিদ্র পারিবারের। ক্যান্সারের চিকিৎসা করার মতো আর্থিক সক্ষমতা তার পরিবারের নেই। কথার ফাঁকে বিষয়টি আমি এম সাব উদ্দিন ও তার সহকর্মী ফরহাদ হোসেন টিপুকে জানাই। আলহামদুলিল্লাহ, তাৎক্ষণিক তারা ছেলেটির চিকিৎসার সকল দায়িত্বভার গ্রহণ করে। কোনো চিন্তা ভাবনা না করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমি আনন্দিত হওয়ার পাশাপাশি অবাক হই। এই জগতে এমন মহান মানুষ আছেন, যারা পরোপকারের জন্য নিজের সবকিছু বিসর্জন দিতেও বিন্দুমাত্র বিচলিত হন না।
এম সাব উদ্দিন বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের কৃতি সন্তান। তার মা আমার জন্মভূমি চারখাই ইউনিয়নের মেয়ে। ফলে চারখাই তথা গোটা বিয়ানীবাজারবাসী তাদের উদারতা নিয়ে গর্ববোধ করেন। অবশ্য এর আগেও বিভিন্ন সময় আমরা এম সাব উদ্দিনের কাছ থেকে মানবিক আচরণের দৃষ্টান্ত দেখেছি। তার পরোপকারীতার বিষয়েও সম্যক অবগত।
দিন দিন বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল নিয়মিত চিকিৎসা সেবার মান বাড়িয়ে চলছে। তারা তাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীদের সেবা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে এম সাব উদ্দিনের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার পাশাপাশি সহযোগীদের রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম। এ ধরণের কাজের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা না জানানো অবশ্যই কৃপণতা।
এম সাব উদ্দিন তার পরোপকারের জন্য বিয়ানীবাজারের বাইরেও ব্যাপকভাবে সুপরিচিত। তার পরোপকারী আচরণ সবার জন্য অনুকরণীয় এবং শিক্ষনীয়। বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতালের সমস্ত ট্রাস্টিদের নিরন্তর অধ্যবসায়, উদারতা, আত্মত্যাগী মনোভাবের জন্য আন্তরিক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
আমি মনে করি, সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতালের ফান্ড সংগ্রহের জন্য এগিয়ে আসা দরকার। এই হাসপাতাল উন্নত ও আধুনিক হলে, হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা বাড়লে এলাকার নিম্নআয়ের মানুষ, বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণির লোকজন উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা পাবেন। আমরা যত বেশি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবো, সাহায্য করবো; ততবেশি অসহায় মানুষ এই হাসপাতালের সেবা ভোগ করতে পারবেন। শুধু নিজেরা নয়, বরং আমাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনদের অনুদান প্রদানের জন্য বেশি বেশি উৎসাহ দেওয়া দরকার।
আরেকটি কথা, বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমাদের অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে, তাদের অনুসরণ করে অন্যরাও মানুষের সেবায় এগিয়ে আসতে পারেন।
সোহেল আহমেদ চৌধুরী: শিক্ষানুরাগী ও প্রতিষ্ঠাতা, বদরুল হক চৌধুরী কল্যাণ ট্রাস্ট, লন্ডন, যুক্তরাজ্য