চীনের নিরাপত্তা আইনে হংকংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে: অ্যামনেস্টি
হংকংয়ের চীন-সমর্থিত কর্তৃপক্ষ নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইনটিকে ভিন্নমতাবলম্বীদের নিশানা করে এবং সেন্সরশিপ, হয়রানি, গ্রেপ্তার ও নিপীড়নকে যৌক্তিক প্রমাণ করতে ব্যবহার করছে; যা মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বেইজিংয়ের চাপিয়ে দেওয়া এ আইন কার্যকর হওয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার একটি প্রতিবেদনে এই মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি।
হংকংয়ে গত বছরের জুনে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কার্যকর করে বেইজিং। চীনের দাবি, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা, বিদেশি শক্তির সঙ্গে আঁতাত ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় এ আইন কার্যকর করা হয়। এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয় আইনটিতে। ফলে শহরটিতে আরও কর্তৃত্বপরায়ণ শাসন প্রতিষ্ঠার পথ উন্মোচিত হয়েছে।
হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ বলছে, শহরটির খুবই অল্পসংখ্যক মানুষের ওপর এ আইনের প্রভাব পড়বে। তা ছাড়া এটি প্রয়োগ করার কারণে সেখানে স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে কয়েক মাস ধরে শহরটিতে সহিংস বিক্ষোভ চলে। কর্তৃপক্ষের আরও দাবি, সাবেক ব্রিটিশ এই উপনিবেশটিতে মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত রয়েছে; যদিও এ অধিকার ও স্বাধীনতা চূড়ান্ত নয়।
নতুন আইনটির অধীনে বা বিক্ষোভ-সংশ্লিষ্ট অভিযোগে হংকংয়ের শীর্ষস্থানীয় অনেক গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিবিদ ও কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন কিংবা স্বেচ্ছানির্বাসনে রয়েছেন।
তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক ইয়ামিনি মিশ্র বলেন, ‘এক বছরে জাতীয় নিরাপত্তা আইন হংকংকে একটি পুলিশি রাজ্যে পরিণত করার পথ দ্রুত উন্মোচিত করেছে। সেই সঙ্গে মানুষের বসবাসের জন্য শহরটিতে এক মানবাধিকার জরুরি পরিস্থিতি তৈরি করেছে এ আইন।’
এই অভিযোগের বিষয়ে হংকং কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। অবশ্য তারা বলেছে, আইনসম্মতভাবেই লোকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি তার ৪৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলেছে, আদালতের রায়, আদালতে অনুষ্ঠিত শুনানি ও গ্রেপ্তারকৃত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তারা এই উপসংহারে এসেছে, ব্যাপকভিত্তিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করতেই প্রয়োগ করা হচ্ছে নতুন আইনটি।
বেইজিংয়ের কাছ থেকে যথেষ্ট স্বায়ত্তশাসন প্রদান এবং অন্তত অর্ধশত বছর সেখানকার মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ১৯৯৭ সালে চীনের কাছে হংকংকে ফিরিয়ে দেয় যুক্তরাজ্য।
ইয়ামিনি মিশ্র বলেন, ‘এ আইন হংকংয়ের সমাজের প্রতিটি অংশে প্রভাব ফেলেছে। তৈরি করেছে আতঙ্কের পরিবেশ। তা এমনই যে স্থানীয় বাসিন্দারা কথা বলা, টুইট করা ও কীভাবে জীবন যাপন করবেন, তা প্রকাশ করার আগে দুবার সেসব বিষয়ে চিন্তা করেন।’