জম্মু ও কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানীদের পরামর্শদান



মজিদ মকবুল
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

#গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান JKScientists এক দশক ধরে জম্মু ও কাশ্মীরের বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করতে সহায়তা করে আসছে

কাশ্মীরের মুন্ডজি গ্রামের ২৩ বছর বয়সী তুলাইব আজম সম্প্রতি সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অফ কাশ্মীর থেকে বায়োটেকনোলজিতে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। গত পাঁচ বছর ধরে, তিনি JKScientists (JKS) এর পরামর্শদাতাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। এটি কাশ্মীরি তরুণ গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে আসছে।

তারা তাকে ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় দিকনির্দেশনা দিয়েছিল, এমনকি তাকে তার সিভি এবং উদ্দেশ্য বিবৃতির খসড়া তৈরিতে সহায়তা করেছিল। এ বছরের শুরুর দিকে, আজম সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি, হায়দ্রাবাদের একটি প্রকল্পে গবেষণা সহকারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। "পরামর্শদাতারা নকল সাক্ষাৎকারও নিয়েছিলেন, যা আমাকে সিসিএমবি-তে সত্যিকারের পরীক্ষায় মুখোমুখি হতে ভালভাবে প্রস্তুত করেছিল," তিনি বললেন।

বছর দশেক আগে ২০১১ সালে, মোবারক হোসেন সৈয়দ (এখন ৩৯ বছর বয়স) JKS শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে JKS চার হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে পরামর্শ দিয়েছে এবং তাদের উচ্চশিক্ষা অর্জনে ও নির্বাচিত ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে সহায়তা করেছে। JKS এর বছরব্যাপী মেন্টরশিপ প্রোগ্রামগুলিতে রয়েছে শিক্ষার্থীদের গবেষণাগারে যোগদান করার পাশাপাশি স্নাতকদের জন্য গ্রীষ্মকালীন স্কুলে প্রবেশের জন্য সহায়তার উদ্যোগ। প্রধান পরামর্শদাতারা জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দা হলেও সারা দেশের বিজ্ঞানীরা গবেষণার সুযোগে সাহায্য করেন।

সৈয়দ বলেন, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরসহ দুইশ’রও বেশি শিক্ষার্থী তাদের প্রোগ্রাম থেকে প্রতি বছর উপকৃত হয়। এখন পর্যন্ত তারা তহবিল সংগ্রহ থেকে দূরে থেকেছে, শুধুমাত্র ২০১৯ সালের আগস্ট মাসব্যাপী অবরোধের সময় এবং গত বছর কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় অভিভাবকদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ছাত্রদের সাহায্য করা ছাড়া।

মহামারী স্কুল এবং কলেজগুলিকে অনলাইনে ঠেলে দেওয়ার পর থেকে এই গ্রুপের প্রভাব আরও স্পষ্ট হয়েছে। JKS ও একটি ডিজিটাল, ওয়ান অন ওয়ান মেন্টরশিপ প্রোগ্রামের দিকে মনোনিবেশ করেছে।

উমর সেলিম ভাট, যিনি বর্তমানে পাঞ্জাবের মোহালিতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন এন্ড রিসার্চে নিউরোসায়েন্সে পিএইচডি করছেন, তিনিও ২০১৮ সালে শুরু হওয়া JKS- এর স্প্রাউট মেন্টরশিপ প্রোগ্রামের অন্যতম সুবিধাভোগী। তিনি কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলজিতে এমএসসি ছাত্র হিসেবে পড়ার সময় এখানে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি একজন পরামর্শদাতা এবং JKS- এর জার্নাল ক্লাবগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ভাট বলেন, "আমি যখন কাশ্মীরের বাইরে পিএইচডি পদের সন্ধান করছিলাম তখন JKS-এ আমার নিজের পরামর্শদাতারা আমার প্রচেষ্টাকে আরও ভালোভাবে পরিচালিত করতে সাহায্য করেছিলেন।" তিনি মনে করেন জম্মু ও কাশ্মীরের তরুণ ও উচ্চাভিলাষী বিজ্ঞানীদের দক্ষতাকে তীক্ষ্ণ করার ক্ষেত্রে মেন্টরশিপ প্রোগ্রামের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

কাশ্মীরের বুদগাম জেলার ওয়াহাবপুরা এলাকা থেকে আসা JKS এর প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক সৈয়দ বলেন, JKS প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল এই অঞ্চলে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার ঘটানো, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত এবং কম উপস্থাপিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ বলেন, "আমরা মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাছাই করে তাদের মেধার বিকাশ  এবং লক্ষ্য অর্জন নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিয়েছি।" এই বছরের শুরুর দিকে তিনি নিউরাল আইডেন্টিটি, কানেক্টিভিটি এবং ফাংশন নিয়ন্ত্রণকারী পদ্ধতি বিষয়ে তার বর্তমান গবেষণা প্রকল্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন কর্তৃক ক্যারিয়ার পুরস্কারে ভূষিত হন।

২০০৫ সালে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর করার পর সৈয়দ বেঙ্গালুরুতে ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস-এ জুনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেন। ২০০৮ সালে, তিনি জার্মানির মুনস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাক্স প্লাঙ্ক ফেলোশিপের মাধ্যমে জীববিজ্ঞানে পিএইচডি করতে যান। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপ করেন।

সৈয়দ সমাজের জন্য কিছু করার প্রচেষ্টা শুরু করেন ২০১১ সালে, যখন তিনি পিএইচডি শেষ করার কাছাকাছি পর্যায়ে ছিলেন। কাশ্মীরের সমমনা বন্ধু এবং তরুণ বিজ্ঞানীদের সাথে, তিনি একটি শিক্ষামূলক উদ্যোগ শুরু করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। তাই তারা কাশ্মীর, জম্মু ও লাদাখ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য কাশ্মীর সাইন্টিস্টস নামে একটি ফেসবুক পেজ শুরু করেন এবং পরে এর নামকরণ করা হয় JKScientists। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি অলাভজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিবন্ধিত, JKS এর সদস্য সংখ্যা ১১ হাজারের বেশি রয়েছে, যার মধ্যে ছাত্র, শিক্ষক, বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা রয়েছেন।

সৈয়দ লকডাউন থেকে শুরু করে কারফিউ এবং ইন্টারনেট শাটডাউন ইত্যাদি চ্যালেঞ্জগুলি বুঝতে পারেন, যা এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদেরকে মুখোমুখি হতে হয়। তিনি বলেন, “সীমিত অবকাঠামো এবং সম্পদের পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থাও পুরনো। প্রতিশ্রুতিশীল প্রতিভাকে প্রচার করা হয় না। বেশিরভাগ শিক্ষক আলাদা করে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত প্রচেষ্টা নেন না।”

সৈয়দ বলেন, “শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করতে এবং নতুন ধারণা নিয়ে আসতে উৎসাহিত হয় না। ফলস্বরূপ, যখন তারা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে, তাদের একটি ডিগ্রি থাকে কিন্তু সঠিকভাবে এবং পেশাগতভাবে যোগাযোগ করার দক্ষতার অভাব থেকে যায়।"

সৈয়দ বলেন, জেকেএস নারী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, "আমরা নারীদের জন্য একটি সহায়তা গ্রুপ তৈরি করেছি এবং সম্প্রতি একটি অনুপ্রেরণামূলক নারী সিরিজ শুরু করেছি যেখানে সফল নারী উদ্যোক্তা এবং গবেষকরা তরুণদের সঙ্গে, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।"

২০১৯ সাল পর্যন্ত, JKS স্বেচ্ছাসেবকরা বছরে একবার স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের মেন্টরিং প্রয়োজন এমন শিক্ষার্থীদের পরিদর্শন করত। কিন্তু সে বছর আগস্টে লকডাউন, তারপরে ২০২০ সালে কোভিড -১৯ এর প্রাদুর্ভাব, JKS এর অফলাইন কার্যক্রমকে সীমাবদ্ধ করেছে। তবে তারা অনলাইন ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং, মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম, লেকচার এবং সচেতনতা সেশন অব্যাহত রেখেছে – যার মধ্যে কিছু কাশ্মীরের স্থানীয় টিভি চ্যানেলেও প্রচারিত হয়। JKS সদস্যরা উপত্যকা জুড়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী দান এবং সরবরাহ করার জন্য তাদের সাধ্যমত কাজ করেছে।

সৈয়দ এবং JKS- এর পরামর্শদাতারা অদূর ভবিষ্যতে স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার আশা প্রকাশ করেন। "আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হল দূরবর্তী স্থান থেকে শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের সাথে সংযোগ স্থাপন করা (যেখানে তারা এখনও ছাত্রকেন্দ্রিক কর্মসূচি করেনি) যাদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এবং প্রচারের সুবিধার অভাব রয়েছে," তিনি বলেন।

এই বছর, JKS জম্মু ও কাশ্মীরে একটি বেসরকারি সংস্থা হিসেবে নিজেদের নিবন্ধন করার পাশাপাশি আলোচনা, দক্ষতা বিকাশ এবং পরামর্শের জন্য কাশ্মীরে একটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত কেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা করেছে।

লেখক: মজিদ মকবুল একজন শ্রীনগর ভিত্তিক সাংবাদিক।

   

তাপ বাড়ছে লন্ডনে, জনগণকে ‘নতুন বাস্তবতা’ মেনে নেওয়ার আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

লন্ডনে গ্রীষ্মকালে স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়র্নমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলেপমেন্ট (আইআইইডি)। এমন অবস্থায় শহরের মানুষদেরকে 'নতুন বাস্তবতার' সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বুধবার (১ মে) আইআইইডির প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, লন্ডনের মানুষ গত তিন দশকে (১৯৯৩-২০২৩) ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা ছিল এমন ১১৬ দিন পার করছে। এর মধ্যে ৫৯ দিন ছিল গত ১০ বছরে। আর ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা দেখছে ৭ দিন। যার ৫ দিন ছিল গত পাঁচ বছরের মধ্যে। 

১৯৯০ থেকে ২০০০— এই দশ বছরের প্রতি বছরই গ্রীষ্মকালে অস্বাভাবিক উষ্ণ দিনের সংখ্যা বেড়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রবন্ধে। কিন্তু এ সময়সীমায় টানা উষ্ণতা বা তাপপ্রবাহের তেমন কোনো রেকর্ড পাওয়িা যায়নি। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে গ্রীষ্মকালগুলোতে টানা তিন বা তারও বেশি দিন ধরে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা দেখছে লন্ডনবাসী।

গবেষণা প্রবন্ধে আরও বলা হয়, এমন তাপমাত্রায় মানুষের স্বাস্থ্যের অবনতির পাশাপাশি হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনাও রয়েছে। এমনকি কাজের ক্ষেত্রে মানুষ বাধার সম্মুখীন হতে পারে।

আইআইইডির জ্যেষ্ঠ গবেষক টাকার ল্যান্ডসমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘লন্ডনের জলবায়ু দিন দিন অধিকতর উষ্ণ হয়ে উঠেছে এবং জনগণ যেন পরিবর্তিত তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে, সেজন্য সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’

এমন পরিস্থিতিতে পরিবর্তিত সেই ‘নতুন বাস্তবতার’ সঙ্গে জনগণকে খাপ খাইয়ে নিতে আহ্বান জানিয়েছে তিনি।

;

গাজা গণহত্যায় মার্কিন সমাজে প্রতিবাদের জাগৃতি



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
গাজা গণহত্যায় মার্কিন সমাজে প্রতিবাদের জাগৃতি

গাজা গণহত্যায় মার্কিন সমাজে প্রতিবাদের জাগৃতি

  • Font increase
  • Font Decrease

ক্যাপিটালিজমের কেন্দ্রস্থল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বব্যাপী শোষণ, যুদ্ধবাজী ও দাদাগিরির জন্য অভিযুক্ত করা হলেও সে দেশের সমাজে মানবাধিকার, মুক্তচিন্তা ও প্রতিবাদের বহু স্মৃতি বিদ্যমান। গাজা গণহত্যায় মার্কিন সমাজে প্রতিবাদের সেই স্মৃতি আবার জাগ্রত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে।

দৃশ্যত মার্কিন প্রশাসনের মদদে ও ছত্রছায়ায় আগ্রাসী ইসরায়েল চলমান-একতরফা আক্রমণে গাজায় প্রায় ৩৫ হাজার সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, যাদের অধিকাংশই নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ ও নিন্দার মুখেও মার্কিন প্রকাশন হন্তারক ইসরায়েলের অব্যাহত গণহত্যার বিষয়ে ‘মানবিক অবস্থান‘ গ্রহণ করেনি। এই যখন পরিস্থিতি, ঠিক তখনই গর্জে উঠে মার্কিন যুব প্রজন্ম। অগ্নিগর্ভ আকার ধারণ করে সেখানকার নামজাদা বিশ্ববিদ্রালয়গুলো, যা বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মানিরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রআন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোকে মনে করিয়ে দেয়।

প্রধান প্রধান মার্কিন গণমাধ্যমসহ বিশ্বমিডিয়া মার্কিন ক্যাম্পাসগুলোর প্রতিবাদমুখর পরিস্থিতি তুলে ধরছে। মার্কিন সিভিল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীগণ ছাত্রআন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে। তারা বলছেন, ছাত্রআন্দোলন অহিংস বিধায় তাতে কোনরূপ বাধা দেওয়া যাবে না। তবে কোথাও কোথাও ছাত্রদের বিরুদ্ধে কঠোরতা প্রদর্শন করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ও গাজা-গণহত্যার প্রতিবাদে সূচিত মার্কিন ছাত্রআন্দোলনের কয়েকটি দিক অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

১. মার্কিনসহ ইউরোপের দেশগুলোতে অন্যায় করার পরেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কিছুই না বলার আইনগত ও সংস্কৃতিগত প্রতিরোধ ভেঙে দিয়েছে ছাত্রআন্দোলন।

২. মার্কিন গণতান্ত্রিক সমাজের মর্মমূলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের যে ধ্বনি, তাকে পুনরায় প্রতিধ্বনিত করেছে ছাত্রসমাজ।

৩. মুসলমানদের পক্ষে ন্যায়সঙ্গত কারণে কথা বললেও তাকে ইসলামফেবিয়া লেবেল দেওয়ার পাশ্চাত্য কৌশল প্রত্যাখ্যাত হয়েছে ছাত্রআন্দোলনের মাধ্যমে।

৪. ক্রমশ কর্তৃত্ববাদী হওয়ার পক্ষে ক্রমঅগ্রসরমান মার্কিন নীতি, নেতৃত্ব ও রাজনীতিকে চপোটাঘাত করেছে এই প্রতিবাদ।

৫. বিশ্বের মানবিক বিবেক যে অবলুপ্ত হয়নি, তা প্রমাণ করেছে মার্কিন দেশের এই তীব্র ছাত্রআন্দোলন।

৬. ছাত্র-যুব সমাজের প্রতিবাদের শক্তি ও অন্যায়ের বিরোধিতার স্পৃহা আবার ফিরিয়ে এনেছে এই আন্দোলন।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ও গাজা-গণহত্যার প্রতিবাদে সূচিত মার্কিন ছাত্রআন্দোলনের ফলে মার্কিন নেতৃত্ব ও প্রশাসন আগের মতো অন্ধভাবে ইসরায়েলের গণহত্যার সমর্থন করতে, অস্ত্র সাহায্য করতে বা জাতিসংঘে ইসরায়েলের নারকীয়তার পক্ষে দাঁড়াতে দুইবার ভাববে। কারণ, সামনেই মার্কিন নির্বাচন। জনমত প্রো-ইসরায়েল থেকে অ্যান্টি-ইসরায়েলের দিকে চলে গেলে এককভাবে নেতাদের পক্ষে ইসরায়েলের জন্য কাজ করা সহজ হবে না। এই আন্দোলন ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন নীতি তথা বৃহত্তর অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে নিশ্চয় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির পথ অনেকটা মসৃণ হবে বলেও আশা করা যায়।

অতীতে তীব্র ছাত্রআন্দোলনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভিয়েতনামে বর্বরতা প্রদর্শনের নীতি থেকে ফিরিয়ে এনেছিল। মার্কিন আক্রমণে ভিয়েতমান যখন মৃতদের এক ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশে পরিণত হতে চলেছিল, ঠিক তখনই ফুঁসে উঠে মার্কিন ছাত্রসমাজ। তীব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলনে মার্কিন প্রশাসন কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পরাজয় ও ভুল স্বীকার করে ভিয়েতনাম থেকে নত মুখে ফিরে আসতে বাধ্য হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

শুধু ভিয়েতনাম নয়, মার্কিন ছাত্রআন্দোলন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনের অবসানে ও নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তির জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বর্ণবাদ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে এবং অভিবাসী মানুষের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রেও ছাত্রআন্দোলনের দৃশ্যমান অবদান মার্কিন দেশের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অতীতের নানা পর্যায়ে ইউরোপের দেশে দেশে ছাত্রআন্দোলন ইতিহাসের বদল ঘটিয়েছে। এবং ছাত্রআন্দোলন কখনোই পরাজিত হয় নি। শেষ বিজয় তাদেরই হয়েছে।

মার্কিন দেশেও তেমনই হবে। কারণ, সেখানকার বর্তমান আন্দোলন দাবানলের মতো এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। প্রশাসন যেখানে দমন করার চেষ্টা করছে, সেখানেই আন্দোলন আরো তীব্র হচ্ছে। ছাত্রদের পাশে শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজ এসে দাঁড়াচ্ছে। বলা যায়, ক্রমেই এই আন্দোলন বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনের চরিত্র ধারণ করছে।

বিশেষ করে, মার্কিন দেশের মিডিয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসনে প্রবল শক্তিশালী ইসরায়েলি লবি সব সময়ই আরব ও মুসলিমদের চরিত্রহনন করে আসছে। এমনকি, হাজার হাজার গাজাবাসীকে হত্যা করার মতো নৃশংস গণহত্যাকেও বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে তারা। তাদের কারসাজিতে মার্কিন তথা পশ্চিমা জনমনে ইসরায়েলের প্রতি অন্ধ সহানুভূতি ও আরব-মুসলিমদের প্রতি অহেতুক বিদ্বেষ বিরাজমান। এমন একটি পরিস্থিতি ভেঙে মার্কিন ছাত্রসমাজ মানবিকতা ও সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর ঘটনা প্রমাণ করে, কোনো ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারই প্রকৃত সত্যকে আড়াল করতে পারে না। প্রায় ৩৫ হাজার নিরীহ মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও মার্কিন ছাত্রসমাজের চোখ খুলে দিয়েছে এবং তাদেরকে মানবিক সত্যের মিছিলে সমবেত ও আন্দোলন মুখর করেছে।

;

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের আশ্রয় দেবে যুক্তরাষ্ট্র



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রায় সাত মাস চলমান। এ অবস্থায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন গাজার ১৭ লাখেরও বেশি বাসিন্দা। মানবিক সংকটে অনেকেই গাজা থেকে পালিয়ে জীবন রক্ষা করতে চাইছেন। এ পরিস্থিতিতে বাইডেন প্রশাসন জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চাইলে তাদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছে তারা।

বুধবার (১ মে) সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন সরকারের অভ্যন্তরীণ নথিগুলোতে দেখা গেছে, মার্কিন নাগরিকদের সঙ্গে সংযুক্ত গাজা থেকে পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিদের ‘মার্কিন রিফিউজি অ্যাডমিশন প্রোগ্রাম’র মাধ্যমে আশ্রয় দেয়ার সম্ভাব্য বিকল্প উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সংক্রান্ত প্রস্তাবও পেশ করেছেন।

নথি অনুসারে, মার্কিন কর্মকর্তারা গাজা থেকে অতিরিক্ত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দেয়ার কথাও বিবেচনা করছেন। তবে প্রস্তাবটি মিশরের সঙ্গে সমন্বয়ের ওপর নির্ভর করবে। কারণ দেশটি এতদিন ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দিতে রাজি ছিল না।

মঙ্গলবার রাতে সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৮শ' টিরও বেশি আমেরিকান নাগরিক এবং তাদের পরিবারকে গাজা ছেড়ে যেতে সহায়তা করেছে। যাদের মধ্যে অনেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্দেশে আমরা এ সহায়তা করেছি। এছাড়াও কিছু বিশেষভাবে দুর্বল ব্যক্তিদের, যেমন গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন এবং ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছে এমন শিশুদের এই অঞ্চলের নিকটবর্তী হাসপাতালে যত্ন নেওয়ার মতো সহায়তা আমরা করেছি এবং এটি অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। প্রায় সাত মাস ধরে চলা এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

;

ই-মেইলে বোমার হুমকি, দিল্লির ১০০ স্কুল বন্ধ



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ই-মেইলের মাধ্যমে বোমার হুমকি পাওয়ায় ভারতের রাজধানী দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী নয়ডা শহরের প্রায় ১০০ স্কুল খালি করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তল্লাশি শুরু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।

বুধবার (১ মে) ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

দেশটির বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সন্তানদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য দিল্লি ও নয়ডাজুড়ে স্কুলগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে অপক্ষো করছেন অভিভাবকরা। স্কুলগুলোতে পুলিশের বিশেষ দল, ডগ স্কোয়াড ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট তল্লাশি পরিচালনা করেছে।

দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র সুমন নালওয়া এনডিটিভিকে বলেন, যেসব স্কুলে বোমা হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে সেখানে আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমি অভিভাবকদের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। এখন পর্যন্ত সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।

আরেক পুলিশ অফিসার বলেন, এটা ভুয়া বলে মনে হচ্ছে। আতঙ্ক ছড়াতে এত বড় পরিসরে সব স্কুলে মেল পাঠানো হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী অতিশী লোকজনকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন অনুযায়ী অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করবে।

দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা বলেন, পুলিশ বোমার হুমকি ই-মেলের উত্স খুঁজে পেয়েছে। এটি একটি প্রতারণা বলে মনে হচ্ছে। আমি দিল্লির নাগরিকদের আশ্বস্ত করছি এই বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দিল্লি ও নয়ডার স্কুলে বোমার হুমকি দিয়ে করা ই-মেইলের উৎস রাশিয়া বলে জানিয়েছেন দিল্লির এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ভিপিএন ব্যবহার করে রাশিয়া থেকে ই-মেইল করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ। 

 

;