দূষণে বাড়ছে শিশুমৃত্যু, কমছে মানুষের আয়ু!
বৈশ্বিক দূষণের নানামুখী প্রকোপের কুপ্রভাব দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলেও দৃশ্যমান। বিশেষত, ভারতে দূষণের মাত্রার নিরিখে রাজধানী দিল্লি থেকে পিছিয়ে থাকলেও ক্রমশ আশঙ্কাজনক হয়ে উঠছে পাশের শহর কলকাতার পরিস্থিতি। সে দেশের জাতীয় রিপোর্টের পাশাপশি আন্তর্জাতিক সংস্থা সি৪০-এর সমীক্ষায় সামনে এসেছে কলকাতার ভয়াবহ বাস্তবতার চিত্র। তাপবিদ্যুৎ থেকে উৎপন্ন কয়লাজাত বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে অপরিণত শিশুমৃত্যুর ঘটনায় বিশ্বের মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে কলকাতা।
এমনিতেই ভারতে দূষণ প্রবণতা ব্যাপক। দিল্লি তো বটেই, প্রতিবছর শীত পড়লেই কলকাতা, মুম্বাই, এলাহাবাদ-সহ ভারতের একাধিক শহরের অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। বায়ুদূষণে হাঁসফাঁস করে ভারতের অন্যতম মেট্রোসিটিগুলো। এর আগে বিশ্বের সবথেকে দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম ১০০-র মধ্যে জায়গা পেয়েছিল কলকাতা-সহ ভারতের ১৫টির বেশি শহর। এবার দূষণ সম্পর্কে ভারতকে আরও একবার কড়া সতর্কতা দিলেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণা জানাচ্ছে, বায়ু দূষণের জেরে ৪০ শতাংশ ভারতীয়দের গড় আয়ু কমতে চলেছে প্রায় ৯ বছর। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত বিস্তারিত রিপোর্টে ফুটে উঠছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জলবায়ু পরিবর্তনের নিরিখে বিশ্বের ৬১টি মেগাসিটির ওপর একটি বিশেষ সমীক্ষা চালিয়েছিল সি৪০ (C40)। বছর দুয়েক আগে ২০১৯ সালে শুরু হয়েছিল তথ্য সংগ্রহের কাজ। তারপর প্রকাশ্যে আসে সেই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট। তাতে জানা যাচ্ছে, তাপবিদ্যুৎজনিত কারণে কলকাতাতে দূষণের হার সবচেয়ে বেশি। আর সেই কারণেই অপরিণত অবস্থাতেই মৃত্যু হচ্ছে বহু শিশুর। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেই তালিকায় শীর্ষস্থানেই রয়েছে কলকাতা। উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ২০৩০ সালের মধ্যে সংখ্যাটা ১০ হাজার স্পর্শ করবে বলে সতর্ক করছেন সি৪০-এর গবেষকরা।
কয়লাজনিত দূষণে কলকাতার এমন শোচনীয় অবস্থার কারণ কী, তা নিয়েও গবেষকরা চিন্তিত। সমীক্ষকদের মতে, কলকাতার ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত ভারতের ২০ শতাংশ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লা থেকে উৎপন্ন দূষিত ধোঁয়া এবং উড়ন্ত ছাই বা ফ্লাইং অ্যাশ বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ার কারণে, তার সরাসরি প্রভাব পড়ে তিলোত্তমা কলকাতায়। গবেষণার তথ্যানুযায়ী, শুধু কলকাতাই নয়, কয়লাজনিত দূষণে জর্জরিত গোটা পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পাশাপাশি, ভৌগোলিক দিক থেকে দেখতে গেলে, পশ্চিমবঙ্গের একটা বড়ো অংশের অবস্থান কোল-বেল্টে। ফলত কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রেও দূষণ ছড়াচ্ছে সমানভাবে।
বর্তমানে কলকাতায় কয়লাজনিত বায়ু দূষণের মাত্রা ২.৫ পিএম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী, যা স্বাভাবিক মাত্রার সাত গুণ। কিন্তু তারপরেও জাতীয় কিংবা রাজ্যস্তরে সেইভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেই অভিমত সি৪০-এর। অন্যদিকে ২০২০ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে তাপবিদ্যুৎ এবং কয়লার উৎপাদন ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি করার কর্মসূচি নিয়েছে ভারতের কেন্দ্র সরকার। যা আগামীতে দূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলবে বলেই আশঙ্কা গবেষকদের।
এতে ভয়াবহ প্রভাব পড়তে চলেছে কলকাতায়। কেবলমাত্র কলকাতাতেই অপরিণত অবস্থায় মৃত্যুর হার বাড়বে ৫০ শতাংশ। গোটা ভারতের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ছাড়িয়ে যাবে ৩১ হাজার। শিশুদের পাশাপাশি গর্ভবতী মহিলা, প্রবীণ নাগরিক এবং যুবকরাও শ্বাসজনিত কঠিন রোগের শিকার হবেন বলেই অভিমত সি৪০-এর গবেষকদের। পাশাপাশি বায়ু দূষণের জেরে ৪০ শতাংশ ভারতীয়দের গড় আয়ু প্রায় ৯ বছর কমার ঝুঁকিও রয়েছে।