নেপাল থেকে চলতি মৌসুমে বিদ্যুৎ আমদানি অনিশ্চিত
নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রফতানি বিলম্বিত হচ্ছে। এর ফলে চলতি শুষ্ক মৌসুমে বিদ্যুৎ রফতানি সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছালেও ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। কারণ প্রক্রিয়াটির জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র প্রয়োজন।
কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎ আমদানিতে ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করতে হবে। এজন্য ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে দিল্লির সম্মতি প্রয়োজন। শুষ্ক মৌসুমে ভারতের সঞ্চালন বিষয়ক অবকাঠামোর মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি শুরু করতে চায় নেপাল। এ বিষয়ে মে মাসে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
আরও বলা হয়, চুক্তি স্বাক্ষরের পর নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল ভারত সফর করেন। তখন ভারত নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রফতানিতে সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির (এনইএ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুল মান ঘিসিং বলেন, আমাদেরকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অবহিত করেছে যে, দুই দেশের কর্মকর্তা পর্যায়ে চুক্তির বিষয়ে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন। শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছি আমরা।
এনইএ কর্মকর্তারা বলেছেন, শুল্কের বিষয়টি বাদে সরকারি কর্মকর্তা পর্যায়ে উভয় পক্ষ ইতিমধ্যে সবকিছু চূড়ান্ত করেছে। ঘিসিং বলেন, তিনি নিশ্চিত নন যে, বাংলাদেশ পক্ষ কখন ক্লিয়ারেন্স পাবে এবং কখন এনইএ’র সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনা করবে। এনইএ’র কর্মকর্তাদের মতে, ট্রান্সমিশন চার্জ ও সার্ভিস ফি পরিশোধ করতে হবে ভারত কর্তৃপক্ষকে- এ বিষয়ে কমবেশি চূড়ান্ত হয়েছে। ভারতের বিদ্যুৎ বিষয়ক কর্তৃপক্ষ বর্তমানে ক্রেতাদের কাছ থেকে যে পরিমাণ চার্জ নিচ্ছে তার সমপরিমাণ হবে ট্রান্সমিশন চার্জ। এটা ধার্য করা হবে ভারতের উন্মুক্ত নিয়ম অনুযায়ী। সরকারি নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদন এনে দেয়ার জন্য ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে সার্ভিস ফি পরিশোধ করতে হতে পারে বাংলাদেশি এনটিটিজকে। এনটিপিসি বিদ্যুত ভাইপার নিগাম লিমিটেড (এনভিভিএন) হলো ভারতের আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যিক এজেন্সি। ফলে ওই ফি আদায়ের জন্য দায়িত্ব পাবে তারা।
এর আগে কাঠমান্ডু পোস্টকে ঘিসিং বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে বিদ্যুৎ রফতানি শুল্কের বিষয়ে নমনীয় হতে পারে এনইএ। তার ভাষায়, আমরা শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে একটি ভালো শুল্ক প্রস্তাবের পরিকল্পনা করেছি। কারণ, এই চুক্তিটি সরকার-টু-সরকারের মধ্যে। বাংলাদেশে বিদ্যুতের বর্তমান মূল্যকে রেফারেন্স হিসেবে নিয়ে এর মূল্য নির্ধারণ হতে পারে।
এনইএ-র পাওয়ার ট্রেড ডিরেক্টর প্রবাল অধিকারী বলেছেন, ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাণিজ্যের জন্য পাঁচ বছরের চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ঐকমত্য হয়েছে। এনইএর কর্মকর্তাদের মতে, নেপাল বাংলাদেশকে ২৫ বছরের চুক্তির প্রস্তাব করেছিল। পরে তা মেয়াদ বাড়ানো সাপেক্ষে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
নেপাল বর্তমানে শুধুমাত্র ভারতে বিদ্যুৎ রফতানি করে। এনইএ-র কর্মকর্তাদের মতে, একবার শুল্কসহ সবকিছু চূড়ান্ত হলে। নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এনইএ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের এনভিভিএনের মধ্যে এমন চুক্তি স্বাক্ষরে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও নেপাল। মে মাসে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত উভয় দেশের জ্বালানি সচিব পর্যায়ের যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির মিটিংয়ে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।