চীন-ভিয়েতনাম সম্পর্কের নতুন মোড়!
ভিয়েতনাম থেকে সেনা প্রত্যাহারের ৫০ বছরেরও বেশি সময় পরে দেশটিতে কুটনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যা দেশ দুটির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ঘনিষ্ঠ করবে। তবে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব কমাতে যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনামের এ কূটনৈতিক সম্পর্ক গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি ভারত সফর শেষে ভিয়েতনামের হ্যানয়ে দুই দেশের মধ্যে 'দি কমপ্রিহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ' চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিটি এশিয়ায় চীনা প্রভাব প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, আধিপত্য বিস্তারে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এ চুক্তি বিরাট এক সাফল্য বয়ে আনতে পারে।
ধারণা করা হচ্ছে, এশিয়া অঞ্চলের সবচেয়ে ক্ষমতাধর চীনের ক্ষমতাবলয়কে দুর্বল করার জন্য চীনের সবচেয়ে পুরনো এবং বিশ্বস্ত বন্ধু ভিয়েতনামের সঙ্গে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা চীনের হাত থেকে সরিয়ে আনা এবং এশিয়া- প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্ষমতাবলয় হ্রাস করার জন্য ভিয়েতনামের ভূমিকাকে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন সমর্থিত উত্তর ভিয়েতনাম এবং পুঁজিবাদী মার্কিন সমর্থিত দক্ষিণ ভিয়েতনামের মধ্যকার দশকব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ৫০ বছর পর ভিয়েতনাম সফরে যান বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই ভিয়েতনামকে কৌশলগত অংশীদার হওয়ার জন্য চাপ দিলেও ভিয়েতনাম এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করছিল না। দেশটি কোনোভাবেই চীনের মতো বন্ধু ও বৃহৎ প্রতিবেশীকে এবং ক্ষমতাধর রাশিয়াকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখতে চায় না। কারণ ভিয়েতনাম অধিকাংশ রফতানি পণ্যের কাঁচামাল সরবরাহের জন্যে দেশ দুটির ওপর নির্ভরশীল। তবে ২০২২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত করেছে ভিয়েতনাম।
করোনা পরবর্তী ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভিয়েতনামের বাণিজ্য ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে এবং ভিয়েতনাম ১০৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রফতানি করেছে দেশটিতে। অন্যদিকে দক্ষিণ চীন সাগরকে কেন্দ্র করে চীন-ভিয়েতনাম সম্পর্কেরও অবনতি হয়েছে।
চীনের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সুসম্পর্ক স্থাপনের প্রয়াস চালাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। মাত্র পাঁচ মাস আগে চীনের আরেক প্রতিবেশী রাষ্ট্র ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানায় বাইডেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও পূর্ব এশিয়ার আরও দুই দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের প্রেসিডেন্টকেও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প ডেভিডে আপ্যায়ন করান তিনি। তাই বাইডেনের ভিয়েতনাম সফর এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক বাস্তবায়নের বিষয়টিকে চীনকে নাজেহাল করার কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছে বিশ্লেষকরা। এ ঘটনায় পাল্টে যেতে পারে চীন- ভিয়েতনাম সম্পর্ক।
ভিয়েতনামের সঙ্গে নতুন ঐতিহাসিক চুক্তি সই করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনের আন্তর্জাতিক প্রভাব প্রতিরোধ করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, এ কূটনৈতিক পদক্ষেপ চীনকে বিচ্ছিন্ন করা বা থামিয়ে দেওয়ার জন্য নয়। এটি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বিষয়। নিয়মের মধ্যে থেকে চীন যেন অর্থনৈতিকভাবে সফল হয় সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বাইডেন।