চলমান ইসরায়েলি বিমান হামলার কারণে গাজা উপত্যকায় ১৫ হাজার গর্ভবতী নারী অনাহারের মুখে পড়েছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা উপত্যকায় ভারী বর্ষণ ও সীমিত মানবিক সহায়তার কারণে গৃহহারা মানুষের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
ইউএনআরডব্লিউএ তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা এক পোস্টে জানিয়েছে, গাজায় প্রায় ৫০ হাজার গর্ভবতী নারী রয়েছেন। এরমধ্যে ডিসেম্বর মাসেই ৪ হাজারেরও বেশি শিশু জন্ম নেবে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার নারী তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছেন।
চলতি মাসের শুরুতে জাতিসংঘের সহায়তায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছিল যে, উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ আসন্ন। তীব্র বোমা হামলা ও সংঘর্ষের কারণে খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ইউএনআরডব্লিউএ আরও জানায়, ২০২৪ সাল মানবিক সহায়তাকারী কর্মীদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর ছিল। এই বছর বিশ্বজুড়ে ২৮১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ কর্মী।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করেছে, গাজায়, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে ওষুধ, খাদ্য, জ্বালানি ও আশ্রয়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ডব্লিউএইচও ইসরায়েলকে আরও মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং মানবিক সহায়তা সহজ করার আহ্বান জানিয়েছে।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ড. তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস শুক্রবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গৃহহারা প্রায় সবাই সরকারি ভবন বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এখন ৯০ শতাংশ মানুষ তাঁবুতে বসবাস করছে।
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি তাদের শ্বাসযন্ত্রের রোগসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে ফেলছে। বিশেষ করে শীতকাল, বৃষ্টি এবং সম্ভাব্য বন্যার কারণে খাদ্যসংকট ও অপুষ্টির অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। তবে তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, উত্তর গাজার পরিস্থিতি খুবই সংকটময়। সেখানে ইসরায়েলি বাহিনী অক্টোবরে বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে।
ইসরায়েল টানা ৪১৯তম দিনের মতো গাজার বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে গণহত্যার চলমান অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ ও গুলিবর্ষণ চলছে। গৃহহারা মানুষ এবং নিরীহ নাগরিকেরা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে। উত্তর গাজা ৫৩ দিন ধরে অবরুদ্ধ। সেখানে গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর কেন্দ্রীয় এবং উত্তর গাজা উপত্যকায় অভিযান চলাকালে ১২ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা (ওয়াফা) জানায়, গাজা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমের তেল আল-হাওয়া এলাকার শিল্পাঞ্চলসংলগ্ন স্থানে দখলদার বাহিনীর বোমা হামলায় তিনজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছে। গাজা শহরের আল-ওয়াহদা স্ট্রিটে দখলদার বাহিনীর হামলায় আরও তিনজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে এখন ৪৪ হাজার ৩৬৩তে পৌঁছেছে, আহত এক লাখ ৫ হাজার ৭০ জন। যাদের বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু।