ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যরা একটি বিতর্কিত প্রস্তাব অনুমোদন করে স্বেচ্ছামৃত্যুকে বৈধতা দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এর ফলে ব্রিটেন একটি ছোট মুষ্টিমেয় দেশগুলির মধ্যে একটি হবে, যারা অসুস্থ ব্যক্তিদের তাদের জীবন শেষ করার অনুমতি দেয়।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) স্বেচ্ছামৃত্যু সংক্রান্ত বিলের পক্ষে-বিপক্ষে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিতর্কের পর এটি পাস হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তথা ভোট দেবেন আইনপ্রণেতারা।
হাউস অফ কমন্সে আইনপ্রণেতারা বিলটিকে সমর্থন করার জন্য ৩৩০ থেকে ২৭৫টি ভোট দিয়েছেন। বর্তমানে বিলটি নিয়ে ব্রিটেনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিলটি পাস হলে অস্ট্রেলিয়া, কানাডার মতো ব্রিটেনেও অসুস্থ ব্যক্তির স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেওয়ার পথে আর কোনো বাধা থাকবে না।
টার্মিনালি ইল অ্যাডাল্টস (এন্ড অব লাইফ) নামের এই বিল অনুযায়ী, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে মানসিকভাবে সুস্থ তবে অসহনীয় ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এবং যার আর ছয় মাসও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই, এমন কেউ চিকিৎসকের সহায়তায় স্বেচ্ছায় মৃত্যুর পথ বেছে নিতে পারবেন।
বিলটির সমর্থনকারীদের যুক্তি হলো- এটি অসুস্থ ব্যক্তির কাছে তার অসুস্থতার যন্ত্রণা থেকে বাঁচার এবং শান্তিতে মৃত্যুবরণে সহায়ক। সেইসঙ্গে এটি ওই অসুস্থ ব্যক্তি কখন ও কীভাবে মারা যেতে চান, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ারও ক্ষমতা প্রদান করছে।
তবে বিলটির বিরোধিতাকারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এই ভেবে যে, নিজেদের ভালোর জন্য নয়, বরং বিলটি পাস হলে অসুস্থ ও দুর্বল ব্যক্তিরা পরিবার এবং সমাজের জন্য বোঝা হওয়ার ভয়ে তাদের জীবন শেষ করতে এক ধরনের চাপ অনুভব করতে পারেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ভেতরে যখন বিলটি নিয়ে যুক্তিতর্ক চলছিল, তখন বাইরে নিজের বাবার ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৫৪ বছর বয়সি সাবেক নার্স ইমা হবস। তিনি জানান, তার বাবাকে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।
বিলটির বিষয়ে তিনি বলেন, 'এর অর্থ এই নয় যে সমাজে যাদের প্রয়োজন নেই তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। এটি হলো আপনার প্রিয়জনকে তার নিজের ইচ্ছা পূরণের সুযোগ করে দেওয়া।'
বেশিরভাগ দেশেই স্বেচ্ছামৃত্যু অবৈধ হলেও বেশ কয়েকটি দেশে এটি বৈধ। আর এমন দেশগুলোতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যাও কম নয়, ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটিরও বেশি।
কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, স্পেন ও অস্ট্রিয়ায় ২০১৫ সালে স্বেচ্ছামৃত্যুকে বৈধতা দিয়ে আইন পাস করা হয়। ওই সময়ও যুক্তরাজ্যের এমপিরা এই ইস্যুতে ভোট দিয়েছিলেন।