ভিয়েতনামে কুকুর খাওয়ার অভ্যাস বদলাচ্ছে মানুষ
ভিয়েতনামে একটি কসাইখানা থেকে একসঙ্গে ৪০টি কুকুরকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। কসাইখানার মালিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি আর কুকুরের মাংসের ব্যবসা করবেন না। তবে ৪০টি কুুকুরের সঙ্গে ১০ দিন বয়সী একটি বাচ্চা কুকুরকেও মুক্ত করে দিয়ে মানসিক প্রশান্তিতে রয়েছেন তিনি বলে জানান।
বছরে আনুমানিক ৫০ লাখ কুকুর জবাই করা হয় ভিয়েতনামে। যেটা চীনের পর সংখ্যায় দ্বিতীয়। এই অঞ্চলে প্রাচীন ধারণায় অনেকেই বিশ্বাস করেন কুকুরের মাংস বিভিন্ন অসুস্থতা থেকে নিরাময়ের কাজে দেয়। আবার অনেকেই সুস্বাদু এবং অভিজাত খাবার হিসেবে এটিকে বিবেচনা করে।
তবে ভিয়েতনামে এই অভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে, বিশেষত শহর এলাকায় প্রায় বন্ধ হয়ে আসছে কুকুরের মাংস খাওয়া এবং অনেকেই এখন শুধু পোষা ও বিশ্বস্ত প্রাণী হিসেবে যত্ন নিচ্ছেন কুকুরের। এতে কুকুরের মাংস শিল্পে প্রায় ধস নেমেছে। ব্যবসায়ীরা তাদের আয়ের জন্য ভিন্ন খাতে ঝুঁকছেন।
দেশটির রাজধানী হ্যানয়ের লং বিন জেলায় কুকুরের মাংস ব্যাবসায়ী নুয়েন ভ্যন তুং এমনই একজন মাংস বিক্রেতা। যিনি তার ব্যবসা পরিবর্তনের কথা ভাবছেন।
তিনি বলেন, যখন আমি এই দোকান চালু করি দিনে ৫ থেকে ৭টি পর্যন্তু কুকুর বিক্রি হতো। কিন্তু এখন এমনও দিন যায় যেদিন একটিও বিক্রি করতে পারি না। পুরো এলাকায় এখন মাত্র দুটি কুকুরের মাংসের দোকান রয়েছে। এই এলাকায় আরেকজন ব্যবসায়ী আছে, তারও ব্যবসায় মন্দা। আমরা দুজন প্রায়ই বলি, কিভাবে এই ব্যবসা বন্ধ করা যায়!
নুয়েন বলেন, যখন আমাদের ব্যবসা ভাল ছিল, তখন আমি এবং আমার স্ত্রী ছাড়াও দুইজন কর্মচারী ছিল। তখন আমরা বিশ্রামের সময় পেতাম না। সবসময় ক্রেতা থাকতো। তবে কোভিডের পর থেকেই ধীরে ধীরে ব্যবসা প্রায় শূন্যে নেমে যাচ্ছে। গত ৩ বছর ধরেই নিজের অর্থে ব্যবসা চালাতে হচ্ছে লাভ ছাড়া। এখন ভাবছি, সময় হয়েছে এই ব্যবসাকে বিদায় জানানোর। ভাবছি মুরগির মাংস বা হটপটের ব্যবসা করবো।
ইতিমধ্যে কুকুরের মাংস বিক্রির জন্য ভিয়েতনামের বেশ কিছু প্রসিদ্ধ স্থানের দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, হা ডং জেলার লে ট্রং তান স্ট্রিট, হোয়াং মাই জেলার তাম ত্রিন স্ট্রিট এবং তায় হো জেলার নাহট তান স্ট্রিট।
হ্যানয়ের পশু স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী সরকারের বিভিন্ন প্রচারণা এবং উৎসাহের কারণে ২০১৮ সালেই হ্যানয়তে কুকুর ও বিড়ালের মাংস বিক্রির দোকান এগারশো থেকে ৮০০তে নেমে আসে।
অ্যানিম্যাল হাজবেনড্রি অ্যাসোসিয়েশন অব ভিয়েতনামের ভাইস প্রেসিডেন্ট নুয়েন গক সন বলেন, এখন এই সংখ্যা হয়তো আরও কমে এসেছে।
কুকুরের মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে পারিবারিক সংস্কৃতিরও পরিবর্তন হয়েছে ভিয়েতনামে। যেমন ডাক হাংয়ের পরিবার পুরো এক রাত সময় নিয়েছে তাদের ১২ কেজি ওজনের পোষা কুকুরের মাংসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে।
ডাক হং বলেন, আমাদের একজন আত্মীয় বিদেশ খেকে এসেছিল সেই সময় এবং আমরা অতিথির জন্য কুকুরের মাংস রান্নার কথা ভাবছিলাম। আমাদের হাই প্রং জেলার কুকুরের মাংস রান্নায় কিছু বিশেষ স্বাদ রয়েছে৷
সিদ্ধান্ত নিতে আমরা পরিবারের মধ্যে ভোট নেই। তবে ২০ জনের মধ্যে ১২ জনই ভোট দেন যে, তাদের পোষা কুকুরকে জবাই করতে দেওয়া হবে না। বিষয়টিতে কষ্ট পেলেও পরে চুপ হয়ে যান ৪৭ বছর বয়সী ডাক হং। কুকুরের মাংস ছাড়া অতিথিকে আপ্যায়ন মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি।
গত কয়েক বছর ধরেই, বিশেষত কোভিডের সময় থেকে কুকুরের মাংসের প্রতি অনীহা বাড়ে। এছাড়াও নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগই কুকুরকে বাসার পোষা প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করছে। একই সঙ্গে সরকারের সচেতনতামূলক কার্যক্রমও বড় ভূমিকা রাখছে এক্ষেত্রে।