২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয় বিশ্ব

  • জাকারিয়া রোকন নিউজরুম এডিটর বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

এক দশকে বিশ্ব যে মানবিক বিপর্যয় বা দুর্যোগ দেখেছে তার থেকেও রেকর্ড সংখ্যক জরুরি পরিস্থিতির ঘটনা ঘটেছে সদ্য বিদায়ী বছর ২০২৩ সালে। মূলত প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় বিশ্ববাসীকে।

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা’র (ইউএনএইচসিআর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা।

বিজ্ঞাপন

ইউএনএইচসিআর’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ২৯টি দেশ প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে ৪৩ বার জরুরি অবস্থার ঘোষণা দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া চলমান হামাস-ইসরায়েলের বিভীষিকাময় অধ্যায়ের কথা। এছাড়াও গত ফেব্রুয়ারিতে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্প, মে মাসে মায়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা ঘূর্ণিঝড় মোখা এবং এপ্রিলের মাঝামাঝি উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাতের ঘটনা।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বব্যাপী ২০২৩ সালে রেকর্ড ১১৪ মিলিয়ন (১১ কোটি ৪০ লাখ) মানুষ বাস্তুচ্যুত ও শরণার্থী হয়েছে। যা এ যাবত কালের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুধু তাই নয় চলতি বছর এ সংখ্যাটি ১৩০ মিলিয়নে (১৩ কোটিতে) পৌঁছাবে বলেও সংস্থাটি সর্তক করে।

ইউএনএইচসিআর আরও বলছে, জরুরি পরিস্থিতি এবং দীর্ঘস্থায়ী সংকটের জন্য ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারসহ গত বছর ৫ বিলিয়নের বেশি অর্থ সংগ্রহ করা সত্ত্বেও বছরের শেষ নাগাদ ৪০০ মিলিয়নের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যা ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় পৌঁছাতে বাধা দেয়।

ইউএনএইচসিআরের এক্সটার্নাল রিলেশনস বিভাগের পরিচালক ডমিনিক হাইড, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈরী আবহাওয়ার পাশাপাশি সংঘাত ও মানবাধিকার লঙ্ঘন কোটি কোটি পরিবারকে বাস্তুচ্যুত করার পাশাপাশি ত্রাণ ও মানবিক সহায়তার জন্য হাত পাততে বাধ্য করেছে। বস্তুত ২০২৩ সালে দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বের অজস্র মানুষকে যে ভয়াবহ ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে— তা এক কথায় অবর্ণনীয়।’

সংস্থাটির দেয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ভূমিকম্পের কারণে তুরস্ক এবং সিরিয়ায় প্রায় ২ কোটি ৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। হঠাৎ বন্যায় লিবিয়ার পাঁচটি প্রদেশের অন্তত ৯ লাখ মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

বাংলাদেশ ও মায়ানমারে ‘মোখার’ তাণ্ডবে প্রায় ১ কোটিরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর ওই সময়েই সুদানে সশস্ত্র বাহিনী এসএএফ ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ এর মধ্যে লড়াইয়ের প্রভাবে ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

এছাড়াও সদ্য বিদায়ী বছরে আফগানরা এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। অক্টোবরে দেশটির হেরাত প্রদেশে শক্তিশালী দুটি ভূমিকম্পের আঘাতে ১ লাখেরও বেশি মানুষের মানবিক সহায়তার দিকে পড়তে হয়েছে।

একই মাসে পাকিস্তানের সরকার অবৈধ আফগান নাগরিকদের নিজ দেশে বিতারিত করার ঘোষণা দিয়েছিল। এদের মধ্যে কেউ কেউ কয়েক দশক ধরে সেখানে ছিলেন।

ইউএনএইচসিআর বলছে, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের শেষের মধ্যে প্রায় ৪ লাখ ৭৯ হাজার মানুষ আফগানিস্তানে ফিরে এসেছেন, এদের মধ্যে ২৯ হাজার আফগানিকে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ নির্বাসিত করেছে।

এই পরস্থিতি থেকে বাদ যায়নি মধ্য আমেরিকার দেশ পানামা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া। এ দুটি দেশ থেকে দারিদ্র্য, অপরাধ, বৈষম্যের কারণে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ বিপজ্জনক দারিয়েন পথ ধরে উত্তর আমেরিকার দিকে রওনা ছুটে যায়।

এছাড়াও আর্মেনিয়ান-আজারবাইজানের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল থেকে ১ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

অন্যদিকে মধ্য আফ্রিকার দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (ডি আর) কঙ্গোতে সামরিক এবং সশস্ত্র গ্রুপগুলির মধ্যে লড়াইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ।

এসব সংকট দ্রুতই কাটিয়ে উঠার জন্য কাজ করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর বিভিন্ন দেশে ইউএনএইচসিআর পরিচালিত শরণার্থী শিবিরের প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো হয়েছে বলেও সংস্থাটির প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।