নিজেরা বাঁচতে এখন রোহিঙ্গাদের দ্বারস্থ মিয়ানমারের জান্তা

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

প্রায় সাত বছর আগে জাতিগত নিধনের শিকার মুসলিম রোহিঙ্গাদের কাছেই এখন নিজেরা বাঁচতে সাহায্য চাচ্ছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন বছর আগে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসকরা বিদ্রোহীদের সঙ্গে টিকতে না পেরে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর হারাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে রোহিঙ্গাদের কাছে সাহায্য চাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি সংঘাতপূর্ণ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে এমন তথ্য। বিবিসিকে রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, যুদ্ধরত জান্তার পক্ষে লড়াইয়ের জন্য সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় অন্তত ১০০ জন রোহিঙ্গাকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাদলে নিযুক্ত করা হয়েছে।

নিরাপত্তার স্বার্থে সাক্ষাৎকার দেওয়া রোহিঙ্গাদের নাম বদল করে এ প্রতিবেদনে ব্যবহার করেছে বিবিসি।

বিজ্ঞাপন

৩১ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মোহাম্মদ। সেনাদলে নাম লেখানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ভীত ছিলাম। আমার তিনটি ছোট বাচ্চা থাকা সত্ত্বেও আমাকে যোগ দিতে হয়েছিল।

রাখাইনের রাজধানী সিত্তওয়ের কাছের একটি শিবিরে (ক্যাম্প) থাকেন মোহাম্মদ। এক দশক ধরে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা এ ধরনের শিবিরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ের কথা। একদিন গভীর রাতে মোহাম্মদের কাছে আসেন শিবিরনেতা। তিনি মোহাম্মদকে বলেন, তাকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তাকে বলা হয়, এটা সেনাবাহিনীর আদেশ, অমান্য করলে পরিবারের ক্ষতি করবে সেনাবাহিনী।

বিবিসি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছে। তারা নিশ্চিত করেছেন, সেনা কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশে ঘোরাফেরা করছেন। তারা তরুণ রোহিঙ্গাদের সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য হাজিরার নির্দেশ দিচ্ছেন।

মোহাম্মদের মতো রোহিঙ্গা পুরুষদের জন্য চরম পরিহাসের বিষয় হলো, মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা এখনো নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত। তারা নানা ধরনের বৈষম্যমূলক বিধিনিষেধের শিকার। এই যেমন তারা নিজ সম্প্রদায়ভুক্ত এলাকার বাইরে যাওয়া-আসা করতে পারেন না।

২০১২ সালে রাখাইন রাজ্য থেকে লাখো রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। এবং তাদের শিবিরে বসবাস করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এ ঘটনার ৫ বছর পর ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস নিধন অভিযান শুরু করে। এ অভিযানের মুখে সাত লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। সে সময় মিয়ানমারে হাজারো রোহিঙ্গা হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হন। রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

রাখাইন রাজ্যে এখনো ৬ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

রোহিঙ্গাদের গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বিচারের মুখোমুখি এখন মিয়ানমার।

সম্প্রতি আরাকান আর্মি নামের একটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে রাখাইনে বিশাল এলাকা হারায় জান্তা। এঘটনার পর রোহিঙ্গাদের এখন জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত করছে জান্তা।

জান্তাবিরোধী চলমান সংঘাতে রাখাইনে সেনাবাহিনীর কামানের গোলা ও বিমান হামলায় কয়েক ডজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন।

দেশের অন্যান্য অংশে বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হামলায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। গত শনিবার থাইল্যান্ড সীমান্তের একটি শহর মায়াওয়াদির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা। দেশের অধিকাংশ ওভারল্যান্ড বাণিজ্য এই গুরুত্বপূর্ণ পথে হয়ে থাকে।

সংঘাতে মিয়ানমার জান্তার বিপুলসংখ্যক সেনা নিহত ও আহত হয়েছেন। অনেক সেনা আত্মসমর্পণ করেছেন। অনেকে দলত্যাগ করেছেন। এই ক্ষতি, এই ঘাটতি পূরণ করা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জন্য কঠিন। পরিস্থিতি এমনই যে মিয়ানমারে এখন খুব কম লোকই খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা দেশটির অজনপ্রিয় জান্তা সরকারের জন্য নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিতে আগ্রহী।

রোহিঙ্গাদের আশঙ্কা, এ কারণেই তাদের আবার লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। যে যুদ্ধে জান্তা হেরে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, সেই যুদ্ধে রোহিঙ্গাদের বলি বানানো হচ্ছে।

মোহাম্মদ বলেন, তাকে সিত্তওয়েতে ২৭০তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় বসতি থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গাদের শহরে বসবাস করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মোহাম্মদ বলেন, কীভাবে গুলি ভরতে হয়, চালাতে হয়, তা আমাদের শেখানো হয়েছিল।

সেনাবাহিনীতে নাম লেখাতে বাধ্য করা আরেক দল রোহিঙ্গার একটি ভিডিও দেখেছে বিবিসি। ভিডিওতে দেখা যায়, রোহিঙ্গাদের বিএ–৬৩ রাইফেল চালানো শেখানো হচ্ছে।