মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতেই ইসরায়েলের প্রোপাগান্ডা



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইরানের হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলের সঙ্গে প্রতিরক্ষা জোটে অংশ নিয়েছিল সৌদি আরব ও জর্ডান দাবি করেছে তেল আবিবভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কেএএন নিউজ। তবে, এই দাবি অস্বীকার করেছে দেশ দুটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতেই ইচ্ছে করেই সৌদি-জর্ডানের নাম জড়িয়েছে ইসরায়েল।

সৌদি সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দেশটির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদপত্র আল-আরাবিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ইরানের হামলা ঠেকানোর সঙ্গে সৌদি আরব জড়িত নয়। একই দাবি করেছে জর্ডানও।

আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সংবাদ মাধ্যমে সৌদি আরবের সরকারি একটি ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে একদিন আগে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ইরানের আক্রমণ থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরক্ষা জোটে অংশ নিয়েছে সৌদি আরব। কিন্তু সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সূত্রগুলো এই তথ্য অস্বীকার করেছে।

এর আগে, ওই ওয়েবসাইটে বলা হয়, ইরানের ছোড়া ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সৌদি আরব নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহারের পাশাপাশি ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডান, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সমন্বয়ে গঠিত সামরিক জোটকে সহযোগিতা করেছে।

সহযোগিতার নেপথ্যে কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরব মনে করে, গাজায় সংঘাত শুরুর পর থেকে ইরান এই সংঘাতে ফায়দা তোলার পরিকল্পনা করছে এবং সম্প্রতি যে হামলা তেহরান পরিচালনা করেছে, তা সেই পরিকল্পনার অংশ।

সৌদির একাধিক সূত্র আল-আরাবিয়াকে জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের চালানো হামলা ঠেকাতে সৌদির অংশগ্রহণ সম্পর্কে যে ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, আসলে সৌদি আরবের এমন কোনো সরকারি ওয়েবসাইটের অস্তিত্বই নেই।

এদিকে জর্ডান সহায়তা করেছে বলে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে খুশির খবর প্রকাশ সম্পর্কে আম্মানের সামরিক বিশ্লেষক মাহমুদ রিদাসাদ বলেন, এটা ইসরায়েলের প্রোপাগান্ডা ছাড়া কিছু নয়।

উল্লেখ্য, গত ১৩ এপ্রিল ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তার আগে ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে হামলা চালায় ইসরায়েল। এই হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য আরেকটি যুদ্ধ সহ্য করার সক্ষমতা রাখে না। তাই এখানে উত্তেজনা প্রশমন করাই হবে সবার অগ্রাধিকার।

ইসলামাবাদ সফরের প্রাক্কালে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

এদিকে, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেনসহ ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা সংযত থাকতে বললেও ইরানের হামলার জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হেরজি হালেভি।

আর ইরান বলছে, তাদের ওপর যেকোনো রকম হামলার ভয়াবহ জবাব দেওয়া হবে। দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাগেরি কানি বলেছেন, জবাব দেওয়া হবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। এক্ষেত্রে ইরান এমন অস্ত্র ব্যবহার করবে, যা আগে কখনো ব্যবহার হয়নি।

   

ভারতীয় গুপ্তচর বহিষ্কার করেছিল অস্ট্রেলিয়া



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রতিরক্ষা প্রকল্প, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও বাণিজ্য সম্পর্ক বিষয়ক নথি চুরির চেষ্টা করায় ২০২০ সালে একাধিক ভারতীয় গুপ্তচর বহিষ্কার করেছিল অস্ট্রেলিয়া। চলতি সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে এ খবর প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন।

ভারতীয় গুপ্তচর বহিষ্কারের বিষয়টি ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা অস্ট্রেলিয়ান সিকিউরিটি ইনটেলিজেন্স অর্গানাইজেশন (এএসআইও) প্রধান মাইক বুরগিসের বার্ষিক প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছিল বলেও খবরে বলা হয়েছে।

ঠিক কতজন গুপ্তচর বহিষ্কার করা হয়েছিল, তা অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। তবে গত সোমবার (২৯ এপ্রিল) ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে ভারতীয় দুজন গুপ্তরচরকে বহিষ্কার করেছিল অস্ট্রেলিয়া। যদিও ওই ঘটনার পরও দিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা বলে আসছে ক্যানবেরা।

অ্যানুয়াল থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট নামে ওই বার্ষিক প্রতিবেদনে অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দাপ্রধান জানিয়েছিলেন, দুই বিদেশি গুপ্তচর কয়েক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজ করছিলেন। তবে সেই সময় তিনি দুই গুপ্তচরের জাতীয়তা প্রকাশ করেননি।

বুরগিস আরও বলেছিলেন, ২০২০ সালে বিদেশি গুপ্তচরেরা বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন রাজনীতিবিদ, একটি বিদেশি দূতাবাস এবং রাজ্য পর্যায়ের পুলিশ পরিষেবাকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছিল। এছাড়া তারা নিজ দেশের প্রবাসীদের ওপরও নজর রাখছিল।

ওয়াশিংটন পোস্টের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের পর অনেক সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে। এসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই দুজন ভারতীয় গুপ্তচর ছিলেন।

অস্ট্রেলিয়া সরকার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের এমন দাবি স্বীকার কিংবা অস্বীকার কোনোটাই করেনি। তবে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়া সরকার বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ করতে আগ্রহী। বুধবার (১ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার অর্থমন্ত্রী জিম চালমার্স বলেন,  আমি এসব গালগল্পে ঢোকার কথা কখনোই বলব না।

ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে জিম আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পর্ক। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উভয় পক্ষের প্রচেষ্টার ফলে দুই দেশ অনেকটা কাছাকাছি এসেছে।

 

;

বিলিয়নিয়ার হওয়ার পথে গুগলের সিইও



Asma Islam
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিলিয়নিয়ার হচ্ছেন অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেড বা গুগলের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) সুন্দর পিচাই। তিনিই প্রথম কোনো ব্যক্তি যিনি গুগলের প্রতিষ্ঠাতা না হয়েও এই বিরল মাইলফলক অর্জনের পথে রয়েছেন।

বর্তমানে ৫১ বছর বয়সী পিচাই ২০১৫ সালে গুগলের নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়ার পর থেকে কোম্পানি স্টক বা শেয়ার ৪০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। একই সময়ে এসঅ্যান্ডপি ও নাসদাককেও ছাড়িয়ে গেছে।

কোম্পানির ক্লাউড কম্পিউটিং ইউনিটে এআই-চালিত প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে কোম্পানির প্রথম-ত্রৈমাসিক আয় প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গত সপ্তাহে নতুন রেকর্ডে গড়েছে। এটি প্রথমবারের মতো লভ্যাংশও চালু করেছে।

ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে, চাঙ্গা স্টক মূল্যের পাশাপাশি গুগলের এই রমরমা অবস্থাই এর প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাইকে বিশ্বের সর্বোচ্চ বেতনভোগী নির্বাহীদের অন্যতম করে তুলেছে। যার জোরে তার সম্পদ প্রায় ১ বিলিয়নের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে খুব অল্পদিনের মধ্যে বিলিয়নিয়ার মর্যাদা পেয়ে যাবেন পিচাই।

ভারতের চেন্নাইয়ে জন্ম নেয়া সুন্দর পিচাইয়ের মূল নাম পিচাই সুন্দরারাজন। তিনি একটি দুই কক্ষের অ্যাপার্টমেন্টে বড় হয়েছেন যেখানে তিনি ও তার ছোট ভাই বসার ঘরের মেঝেতে ঘুমাতেন। শৈশবের বেশিরভাগ সময় পিচাইদের কোনো টেলিভিশন বা গাড়ি ছিল না। যা তিনি সাক্ষাত্কারে বলেছেন।

পিচাইয়ের বাবা রঘুনাথ তড়িৎ প্রকৌশলী ছিলেন, মা লক্ষ্মী ছিলেন স্টেনোগ্রাফার। উচ্চবিত্ত পরিবার ছিল না তাদের। ছোটবেলায় দুই ঘরের অ্যাপার্টমেন্টের বসার ঘরে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ঘুমাতেন সুন্দর। ১২ বছর বয়সে তাদের পরিবারে প্রথমেএকটা রোটারি টেলিফোন আসে। যেটা তাকে প্রযুক্তির সুবিধার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় বলে তিনি জানান।

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) খড়গপুর থেকে মেটালারজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েন তিনি। এরপর বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পান।

তথ্যপ্রযুক্তিতে বরাবরই আগ্রহী ছিলেন পিচাই। প্রথম প্রোগ্রাম হিসেবে তৈরি করেন দাবা খেলার সফটওয়্যার। ভারতের দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে ২০১৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে পিচাই বলেছিলেন, প্রযুক্তি আমার সব সময়ের পছন্দের বিষয় ছিল। আর সিলিকন ভ্যালি ছিল আমার স্বপ্ন, আমি এ নিয়ে লেখা পড়তাম, চাচার কাছ থেকে শুনতাম।

১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান সুন্দর পিচাই। স্ট্যানফোর্ড থেকে এমএস শেষে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার হোয়ার্টন স্কুলে এমবিএ করেন। গুগলে যোগ দেওয়ার আগে অ্যাপ্লায়েড ম্যাটেরিয়ালস এবং ম্যাককিনসি অ্যান্ড কোম্পানি নামের দুটি প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন কাজ করেছেন।

গুগলের মূল কার্যালয় গুগলপ্লেক্সে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য গিয়েছিলেন তিনি। এপ্রিল ফুলের সেই দিনেই জি–মেইল চালু করে গুগল। পিচাইসহ সবাই ভেবেছিলেন বিনা মূল্যের ই-মেইল সেবাটি নিশ্চয় মজা করার জন্য করা।

গুগলের সার্চ টুলবার দিয়ে শুরু হয় পিচাইয়ের কাজ। তবে ২০০৬ সালে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় মাইক্রোসফট। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজে ওয়েব ব্রাউজার ‘ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার’-এর ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ‘বিং’ ঠিক করে দেয় মাইক্রোসফট।

পিচাই সে সময় কম্পিউটার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বিক্রি করা কম্পিউটারে গুগলের সার্চ টুলবার যুক্ত করার ব্যাপারে বোঝাতে সক্ষম হন। মাইক্রোসফটের সে উদ্যোগে যে ক্ষতির মুখে পড়েছিল গুগল, পিচাইয়ের কাজে তা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।

ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের ফাঁড়াটি পিচাইয়ের জীবনে আশীর্বাদ হয়েই আসে। সে সময় গুগলের নিজস্ব ওয়েব ব্রাউজার তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানের দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিনকে রাজি করাতে সক্ষম হন তিনি। ফলাফল? ক্রোম এখন বিশ্বের জনপ্রিয়তম ব্রাউজার।

নেতা হিসেবে পিচাইকে সবাই পছন্দ করতেন। অনন্য হওয়ার চেয়ে বরং ভালো ফলাফলে গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। ক্রমেই তার কাঁধে দায়িত্ব বাড়তে থাকে। ২০১৩ সালে অ্যান্ড্রয়েড বিভাগের নেতৃত্বও দেওয়া শুরু করেন তিনি।

সুন্দর পিচাইয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প হলো ‘অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান’। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কম দামের অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বাজারে ছেড়ে ৫০০ কোটি নতুন মানুষকে অনলাইনে যুক্ত করতে চেয়েছেন তিনি।

অ্যান্ড্রয়েড যেন গুগলের সেবাগুলোর সঙ্গে চমৎকারভাবে মানিয়ে নিতে পারে, তা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন পিচাই। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগে অ্যান্ড্রয়েড সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবসা হিসেবে পরিচালিত হতো।

গুগলে পিচাইয়ের উত্থানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হলো, ২০১৪ সালে ৩২০ কোটি ডলারে নেস্ট অধিগ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। কম খরচের ক্রোমবুক ল্যাপটপ কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম ‘ক্রোম ওএস’-এর পেছনেও আছেন পিচাই।

বেশ কয়েকবার টুইটারের উচ্চপদে কাজের জন্য ডাক পেলেও গুগল ছেড়ে যাননি তিনি। পিচাই প্রায়ই ল্যারি পেজের ‘অনুবাদকের’ ভূমিকা নিতেন। অর্থাৎ পেজের লক্ষ্য নিজে বুঝে বাকি কর্মীদের কাছে তা পৌঁছে দিতেন। ল্যারি পেজ লিখেছিলেন, ‘এ কাজের জন্য তিনিই (পিচাই) সেরা।’

সেই দক্ষতা এবং ক্রোম, অ্যাপ ও অ্যান্ড্রয়েডে সাফল্যের ফলে ২০১৪ সালের শেষের দিকে কর্মজীবনের পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পদোন্নতি পান তিনি। সার্চ, ম্যাপস, গুগল প্লাস, বিজ্ঞাপন, অবকাঠামোসহ প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সব পণ্যের দায়িত্ব আসে পিচাইয়ের কাঁধে। পেজের ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’-এর ভূমিকায় দেখা যায় তাকে।

পিচাইয়ের পদোন্নতির ঘোষণা দিয়ে কর্মীদের কাছে পাঠানো বার্তায় পেজ লিখেছিলেন, ভবিষ্যৎ দেখতে পারা এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজে কর্মীদের কাজে লাগানোয় পিচাইয়ের অসাধারণ দক্ষতা। পণ্যের ব্যাপারে আমাদের দেখার চোখ প্রায় একই। এ কাজের জন্য তিনিই সেরা।

২০১৫ সালে গুগলের করপোরেট কাঠামোয় বড়সড় পরিবর্তন আনা হয়। প্রতিষ্ঠানের মূল বিভাগগুলোকে আলাদা প্রতিষ্ঠানে রূপ দেয়া হয়। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হলো গুগল, যার অধীনে আছে সার্চ, ম্যাপস, বিজ্ঞাপন, ইউটিউবসহ মূল সেবগুলো। আর ‘অ্যালফাবেট’ নামে মূল প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে সব কটি বিভাগ সেটির অধীনে আনা হয়। গুগলের মূল পণ্যগুলোর দায়িত্বে ছিলেন পিচাই। স্বাভাবিক কারণেই তাকে গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) করা হয়।

;

তাপ বাড়ছে লন্ডনে, জনগণকে ‘নতুন বাস্তবতা’ মেনে নেওয়ার আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

লন্ডনে গ্রীষ্মকালে স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়র্নমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলেপমেন্ট (আইআইইডি)। এমন অবস্থায় শহরের মানুষদেরকে 'নতুন বাস্তবতার' সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বুধবার (১ মে) আইআইইডির প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, লন্ডনের মানুষ গত তিন দশকে (১৯৯৩-২০২৩) ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা ছিল এমন ১১৬ দিন পার করছে। এর মধ্যে ৫৯ দিন ছিল গত ১০ বছরে। আর ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা দেখছে ৭ দিন। যার ৫ দিন ছিল গত পাঁচ বছরের মধ্যে। 

১৯৯০ থেকে ২০০০— এই দশ বছরের প্রতি বছরই গ্রীষ্মকালে অস্বাভাবিক উষ্ণ দিনের সংখ্যা বেড়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রবন্ধে। কিন্তু এ সময়সীমায় টানা উষ্ণতা বা তাপপ্রবাহের তেমন কোনো রেকর্ড পাওয়িা যায়নি। কিন্তু ২০১৭ সাল থেকে গ্রীষ্মকালগুলোতে টানা তিন বা তারও বেশি দিন ধরে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা দেখছে লন্ডনবাসী।

গবেষণা প্রবন্ধে আরও বলা হয়, এমন তাপমাত্রায় মানুষের স্বাস্থ্যের অবনতির পাশাপাশি হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনাও রয়েছে। এমনকি কাজের ক্ষেত্রে মানুষ বাধার সম্মুখীন হতে পারে।

আইআইইডির জ্যেষ্ঠ গবেষক টাকার ল্যান্ডসমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘লন্ডনের জলবায়ু দিন দিন অধিকতর উষ্ণ হয়ে উঠেছে এবং জনগণ যেন পরিবর্তিত তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে, সেজন্য সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’

এমন পরিস্থিতিতে পরিবর্তিত সেই ‘নতুন বাস্তবতার’ সঙ্গে জনগণকে খাপ খাইয়ে নিতে আহ্বান জানিয়েছে তিনি।

;

গাজা গণহত্যায় মার্কিন সমাজে প্রতিবাদের জাগৃতি



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
গাজা গণহত্যায় মার্কিন সমাজে প্রতিবাদের জাগৃতি

গাজা গণহত্যায় মার্কিন সমাজে প্রতিবাদের জাগৃতি

  • Font increase
  • Font Decrease

ক্যাপিটালিজমের কেন্দ্রস্থল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বব্যাপী শোষণ, যুদ্ধবাজী ও দাদাগিরির জন্য অভিযুক্ত করা হলেও সে দেশের সমাজে মানবাধিকার, মুক্তচিন্তা ও প্রতিবাদের বহু স্মৃতি বিদ্যমান। গাজা গণহত্যায় মার্কিন সমাজে প্রতিবাদের সেই স্মৃতি আবার জাগ্রত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে।

দৃশ্যত মার্কিন প্রশাসনের মদদে ও ছত্রছায়ায় আগ্রাসী ইসরায়েল চলমান-একতরফা আক্রমণে গাজায় প্রায় ৩৫ হাজার সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, যাদের অধিকাংশই নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ ও নিন্দার মুখেও মার্কিন প্রকাশন হন্তারক ইসরায়েলের অব্যাহত গণহত্যার বিষয়ে ‘মানবিক অবস্থান‘ গ্রহণ করেনি। এই যখন পরিস্থিতি, ঠিক তখনই গর্জে উঠে মার্কিন যুব প্রজন্ম। অগ্নিগর্ভ আকার ধারণ করে সেখানকার নামজাদা বিশ্ববিদ্রালয়গুলো, যা বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মানিরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রআন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোকে মনে করিয়ে দেয়।

প্রধান প্রধান মার্কিন গণমাধ্যমসহ বিশ্বমিডিয়া মার্কিন ক্যাম্পাসগুলোর প্রতিবাদমুখর পরিস্থিতি তুলে ধরছে। মার্কিন সিভিল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীগণ ছাত্রআন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে। তারা বলছেন, ছাত্রআন্দোলন অহিংস বিধায় তাতে কোনরূপ বাধা দেওয়া যাবে না। তবে কোথাও কোথাও ছাত্রদের বিরুদ্ধে কঠোরতা প্রদর্শন করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ও গাজা-গণহত্যার প্রতিবাদে সূচিত মার্কিন ছাত্রআন্দোলনের কয়েকটি দিক অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

১. মার্কিনসহ ইউরোপের দেশগুলোতে অন্যায় করার পরেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কিছুই না বলার আইনগত ও সংস্কৃতিগত প্রতিরোধ ভেঙে দিয়েছে ছাত্রআন্দোলন।

২. মার্কিন গণতান্ত্রিক সমাজের মর্মমূলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের যে ধ্বনি, তাকে পুনরায় প্রতিধ্বনিত করেছে ছাত্রসমাজ।

৩. মুসলমানদের পক্ষে ন্যায়সঙ্গত কারণে কথা বললেও তাকে ইসলামফেবিয়া লেবেল দেওয়ার পাশ্চাত্য কৌশল প্রত্যাখ্যাত হয়েছে ছাত্রআন্দোলনের মাধ্যমে।

৪. ক্রমশ কর্তৃত্ববাদী হওয়ার পক্ষে ক্রমঅগ্রসরমান মার্কিন নীতি, নেতৃত্ব ও রাজনীতিকে চপোটাঘাত করেছে এই প্রতিবাদ।

৫. বিশ্বের মানবিক বিবেক যে অবলুপ্ত হয়নি, তা প্রমাণ করেছে মার্কিন দেশের এই তীব্র ছাত্রআন্দোলন।

৬. ছাত্র-যুব সমাজের প্রতিবাদের শক্তি ও অন্যায়ের বিরোধিতার স্পৃহা আবার ফিরিয়ে এনেছে এই আন্দোলন।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ও গাজা-গণহত্যার প্রতিবাদে সূচিত মার্কিন ছাত্রআন্দোলনের ফলে মার্কিন নেতৃত্ব ও প্রশাসন আগের মতো অন্ধভাবে ইসরায়েলের গণহত্যার সমর্থন করতে, অস্ত্র সাহায্য করতে বা জাতিসংঘে ইসরায়েলের নারকীয়তার পক্ষে দাঁড়াতে দুইবার ভাববে। কারণ, সামনেই মার্কিন নির্বাচন। জনমত প্রো-ইসরায়েল থেকে অ্যান্টি-ইসরায়েলের দিকে চলে গেলে এককভাবে নেতাদের পক্ষে ইসরায়েলের জন্য কাজ করা সহজ হবে না। এই আন্দোলন ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন নীতি তথা বৃহত্তর অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে নিশ্চয় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির পথ অনেকটা মসৃণ হবে বলেও আশা করা যায়।

অতীতে তীব্র ছাত্রআন্দোলনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভিয়েতনামে বর্বরতা প্রদর্শনের নীতি থেকে ফিরিয়ে এনেছিল। মার্কিন আক্রমণে ভিয়েতমান যখন মৃতদের এক ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশে পরিণত হতে চলেছিল, ঠিক তখনই ফুঁসে উঠে মার্কিন ছাত্রসমাজ। তীব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলনে মার্কিন প্রশাসন কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পরাজয় ও ভুল স্বীকার করে ভিয়েতনাম থেকে নত মুখে ফিরে আসতে বাধ্য হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

শুধু ভিয়েতনাম নয়, মার্কিন ছাত্রআন্দোলন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনের অবসানে ও নেলসন ম্যান্ডেলার মুক্তির জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বর্ণবাদ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে এবং অভিবাসী মানুষের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রেও ছাত্রআন্দোলনের দৃশ্যমান অবদান মার্কিন দেশের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অতীতের নানা পর্যায়ে ইউরোপের দেশে দেশে ছাত্রআন্দোলন ইতিহাসের বদল ঘটিয়েছে। এবং ছাত্রআন্দোলন কখনোই পরাজিত হয় নি। শেষ বিজয় তাদেরই হয়েছে।

মার্কিন দেশেও তেমনই হবে। কারণ, সেখানকার বর্তমান আন্দোলন দাবানলের মতো এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। প্রশাসন যেখানে দমন করার চেষ্টা করছে, সেখানেই আন্দোলন আরো তীব্র হচ্ছে। ছাত্রদের পাশে শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও নাগরিক সমাজ এসে দাঁড়াচ্ছে। বলা যায়, ক্রমেই এই আন্দোলন বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনের চরিত্র ধারণ করছে।

বিশেষ করে, মার্কিন দেশের মিডিয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসনে প্রবল শক্তিশালী ইসরায়েলি লবি সব সময়ই আরব ও মুসলিমদের চরিত্রহনন করে আসছে। এমনকি, হাজার হাজার গাজাবাসীকে হত্যা করার মতো নৃশংস গণহত্যাকেও বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে তারা। তাদের কারসাজিতে মার্কিন তথা পশ্চিমা জনমনে ইসরায়েলের প্রতি অন্ধ সহানুভূতি ও আরব-মুসলিমদের প্রতি অহেতুক বিদ্বেষ বিরাজমান। এমন একটি পরিস্থিতি ভেঙে মার্কিন ছাত্রসমাজ মানবিকতা ও সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর ঘটনা প্রমাণ করে, কোনো ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারই প্রকৃত সত্যকে আড়াল করতে পারে না। প্রায় ৩৫ হাজার নিরীহ মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও মার্কিন ছাত্রসমাজের চোখ খুলে দিয়েছে এবং তাদেরকে মানবিক সত্যের মিছিলে সমবেত ও আন্দোলন মুখর করেছে।

;