নীতিশদের দাবির চাপে নরেন্দ্র মোদি
ভারতের দিল্লিতে এসেই সমর্থনের বিনিময়ে নরেন্দ্র মোদির কাছে এক গুচ্ছ দাবি জানান এনডিএ-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই শরিক- নীতিশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডু।
এনডিটিভি জানিয়েছে, রাজ্যের জন্য বিশেষ প্যাকেজের পাশাপাশি নীতিশ বৃহস্পতিবার (৬ জুন) চার পূর্ণমন্ত্রী ও একটি প্রতিমন্ত্রী পদ এবং চন্দ্রবাবু তিনটি পূর্ণমন্ত্রী ও দুটি প্রতিমন্ত্রীর পদ চেয়েছেন। শুধু তাই নয়, স্পিকার পদও চাইছেন চন্দ্রবাবু।
এদিকে, বিজেপির সমস্যা বাড়িয়ে বিহারের চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি, জিতনরাম মাঁঝির হাম, উত্তর প্রদেশের আপনা দল, মহারাষ্ট্রের একনাথ শিন্দের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা নিজেদের প্রাপ্য বুঝে নিতে আস্তিন গোটাতে শুরু করেছে। তাদেরও লক্ষ্য বিজেপিকে চাপে রেখে বেশি সংখ্যক মন্ত্রিত্ব আদায় করে নেওয়া।
ভোটের আগে নীতিশের সঙ্গে বিজেপির যে সমঝোতা হয়েছিল, তাতে এনডিএ ক্ষমতায় এলে নীতিশকে তিনটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে হাঁসফাঁস করা বিজেপির কাছে চারটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ চেয়েছেন নীতিশ। বিশ্বস্ত সূত্রের মতে, মূলত পরিকাঠামো সংক্রান্ত মন্ত্রকগুলির দিকে নজর নীতিশের। যার মধ্যে রয়েছে রেল, গ্রামোন্নয়ন, জলসম্পদের মতো মন্ত্রণালয়।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের পাশাপাশি ২০২৩ সালে বিহারে নীতিশ আর্থ-সামাজিক সমীক্ষার পরে রাজ্যের প্রায় ৯৫ লাখ পিছিয়ে থাকা পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করার কথা ঘোষণা করেছেন।
অন্যদিকে, আগামী বছর বিহারে নির্বাচন। তাই পাঁচ বছরের ওই প্রকল্পে কেন্দ্র যাতে চলতি অর্থবছরে নিজেদের অংশের টাকা বাড়ায়, সেই দাবিও জানিয়েছেন নীতিশ। এ ছাড়াও, ইউপিএ’র ধাঁচে ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচি আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এক্ষেত্রে চন্দ্রবাবুর দাবি তিনটি পূর্ণমন্ত্রী ও দুটি প্রতিমন্ত্রী পদ। নীতিশের মতোই জলসম্পদ, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে নিজেদের সাংসদের দেখতে চান চন্দ্রবাবু। তালিকায় রয়েছে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়ও।
এ ছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলঙ্গানা হওয়ায় রাজ্যের আর্থিক চাপ সামলাতে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবিতে প্রায় এক দশক ধরে সরব নাইডু। সূত্রের মতে, এই মুহূর্তে রাজ্যের মাথায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার দেনা, যা মেটাতে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ছোট দলগুলির মধ্যে বিহারে চিরাগ পাসোয়ানের পেয়েছে ৫টি আসন। তাদের দাবি, একটি পূর্ণ ও একটি প্রতিমন্ত্রী পদ। ওই রাজ্যেই একটি আসন পেয়েছে জিতনরাম মাঁঝির হাম। তাদেরও দাবি, একটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ।
মহারাষ্ট্রে সাতটি আসন পেয়েছে একনাথ শিন্দের শিবসেনা। তারাও একজন পূর্ণ ও একজন প্রতিমন্ত্রীর দাবি জানিয়েছে। মন্ত্রিত্ব পেতে মুখিয়ে রয়েছেন উত্তর প্রদেশের আরএলডি দলের জয়ন্ত চৌধরী, আপনা দলের অনুপ্রিয়া পাটেল, জেডিএসের এইচ ডি কুমারস্বামীরাও।
অতীতে মোদি সরকারের যখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল, তখন এই সব ছোট দলকে গুরুত্ব দিতে দেখা যায়নি বিজেপিকে। পরিস্থিতির ফেরে এখন ছোট দলের দাবি মানা ছাড়া রাস্তা নেই বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
দাবি না মানা হলে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ভয় রয়েছে। যদিও বিজেপির এক নেতার ভাষ্যমতে, ‘যদি নীতিশ বা নাইডুর একজন বেরিয়ে যান, তা হলে সরকার পড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে দুজন যদি এনডিএ পরিত্যাগ করেন, তাহলে সমস্যা তৈরি হবে।’