ভারতের সর্বকনিষ্ঠ এমপি হলেন ২৫ বছরের সঞ্জনা জাটভ

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সবথেকে কম বয়সী সংসদ সদস্য হিসেবে খুবই সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন ভরতপুর লোকসভা আসন থেকে সদ্য নির্বাচিত কংগ্রেস প্রার্থী সঞ্জনা জাটভ। মাত্র ২৫ বছর বয়সে লোকসভার আসন পেয়ে রীতিমতো বিভিন্ন শিরোনামে উঠে এসেছেন তিনি। এর আগে বিধানসভার নির্বাচনে পরাজিত হলেও এবার লোকসভার আসন জয় করেন সঞ্জনা।

১৯৯৮ সালের পয়লা মে ভরতপুর জেলার ভুসাওয়ার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সঞ্জনা জাটভ। সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া সঞ্জনার বিয়ে হয় ২০১৬ সালে, ভরতপুর সীমান্ত সংলগ্ন আলওয়ার জেলার সমুচী গ্রামে। বিয়ের আগে থেকেই তাঁর স্বামী কাপ্তান সিং রাজস্থান পুলিশে কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সঞ্জনা জাটভ বলেন, ’শ্বশুরবাড়িতে কখনও আমাকে পুত্রবধূ বলে মনে করা হয় নি, পরিবারের মেয়ে হিসেবেই দেখা হয়েছে। আমাকে পড়াশোনা করতে দিয়েছেন এরা। স্বামী সরকারি চাকরিতে ছিলেন বলে, আমিও সরকারি চাকরি করব, এমনটাই ভাবতাম। তবে ভাগ্য যা ঠিক করে রেখেছে, বাস্তবে তো সেটাই হওয়ার, তাই না?’

সঞ্জনা জাটভ যে শুধু স্নাতক ডিগ্রি পেয়েছেন, তা নয়। এরপরে তিনি আইন পড়েছেন, এলএলবি ডিগ্রিও পেয়েছেন।  তার কথায়, এসবই সম্ভব হয়েছে আমার স্বামী সবসময়ে পাশে থেকেছেন বলে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমি যখন রাজনীতির কাজে যাই, তখন শাশুড়িই সন্তানদের দেখাশোনা করেন। তবে আমি কিন্তু ঘরের কাজও করি আবার রাজনীতিও করি।’

ভোটের ফল ঘোষণার পরে সঞ্জনা জাটভের একটি ভিডিও খুব ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে তাকে নাচ করতে দেখা গেছে। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘এত আনন্দ হয়েছিল যে আমি নাচতে শুরু করেছিলাম।’

সঞ্জনা জাটভ বলেন, ‘আমার বাবা ট্রাক্টর চালাতেন। বাপের বাড়ির দিকে কেউ কখনও রাজনীতি করেননি। তবে, বিয়ের পর যখন তিনি শ্বশুরবাড়িতে আসেন, তখন তার মামা শ্বশুর ছিলেন গ্রামের ‘সর-পঞ্চ’ (গ্রামের প্রধান)। সেই থেকেই আমার প্রথম রাজনীতির প্রথম পাঠ শুরু হয়।’

তিনি রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর 'লড়কি হুঁ লড় সক্তি হুঁ' (আমি নারী, কিন্তু লড়াই করতে জানি) অভিযানেও যোগ দিয়েছিলেন।

গত বিধানসভা নির্বাচনে আলওয়ারের কাঠুমার আসন থেকে চারবারের বিধায়ক বাবুলাল বৈরওয়ার টিকিট কেটে দিয়ে সঞ্জনা জাটভকে প্রার্থী করেছিল কংগ্রেস দল। কিন্তু নির্বাচনে তিনি মাত্র ৪০৯ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। তার কথায়, ’বিধানসভায় পরাজয়ের ধাক্কায় আমার বাবা মারা যান।’

বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর লোকসভায় তিনি জিততে পারবেন, এমন আশা কীভাবে করেছিলেন- এই প্রশ্নের জবাবে সঞ্জনা জাটভ বলেন, ’জনগণ আমাকে অনেক ভালবাসা আর সাহস জুগিয়েছে। বিধানসভা ভোটে হেরে গেছি বলে মনেই হয়নি। দলও মনে করেনি যে আমি একজন পরাজিত প্রার্থী ছিলাম। তাই আমাকে এমপি টিকিট দিয়েছে। দলের বিশ্বাসের কারণেই আমি আজ এই জায়গায় আসতে পেরেছি।’

মুখ্যমন্ত্রীর নিজের জেলায় পরাজিত বিজেপি সঞ্জনা জাটভের জয়ের পরে সারাদেশে তার কম বয়স নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে রাজস্থানের সবথেকে বেশি আলোচিত বিষয় হল যে তিনি বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মার জেলায় তার দলের প্রার্থী তথা প্রাক্তন সংসদ সদস্য রামস্বরূপ কোলিকে হারিয়েছেন। সঞ্জনা জাটভের কথায়, ’আমি তো তাকে পরাজিত করি নি, জনগণ হারিয়েছে তাকে। তবে শুধু তার নিজের জেলায় নয়, তার নিজের গ্রাম আটারি গ্রামের তিনি পরাজিত হয়েছেন। সেখান থেকেও আমি বেশি ভোট পেয়েছি।’

শচীন পাইলটের রেকর্ড ভাঙ্গলেন সঞ্জনা

লোকসভা নির্বাচনের তিন দিন আগে ২৬ বছরে পা দিয়েছেন সঞ্জনা জাটভ। এর আগে রাজস্থানের কংগ্রেস নেতা শচীন পাইলট ২৬ বছর বয়সেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সবথেকে কম বয়সী এমপি হওয়ার রেকর্ডটি এতদিন তারই দখলে ছিল।

শচীন পাইলট বলেন, ‘আমিও ২৬ বছর বয়সে সংসদ সদস্য হয়েছিলাম। এখন সঞ্জনা আমার থেকেও কম বয়সে এমপি হয়েছেন। এইসব রেকর্ড তো গড়েই ওঠে অন্য কেউ তা ভাঙ্গবে, তার জন্যই। আমি খুশি যে দলিত, দরিদ্র পরিবারের এক নারী সংসদ সদস্য হয়েছেন।’