প্রথম দিনেই কৃষকদের খুশি করার চেষ্টায় মোদি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তৃতীয় মেয়াদে কাজ শুরুর প্রথম দিন মঙ্গলবার (১১ জুন) নরেন্দ্র মোদি যে ফাইলটিতে স্বাক্ষর করেছেন, সেটি পিএম কিসান নিধি যোজনার।
তৃতীয়বারের অভিষেকের দিনই মোদি বার্তা দিতে চাইলেন যে, কৃষকদের হতাশা দূর করাই তার এবারের অগ্রাধিকার। মোদিকে যখন ক্যামেরায় লং শট ফ্রেমে সই করতে দেখা গেল এবং তা ছড়িয়ে পড়লো বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে, তখন পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানার খনৌরিতে, জুনের ঠাঠা রোদে অনশনরত কৃষকরা তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের সামনে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন।
ডেরেক ও’ব্রায়েন, দোলা সেনদের তারা বলছেন, অনেক আগেই প্রধানমন্ত্রী কিসান নিধির ১৭তম কিস্তির টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এ তাদের ন্যায্য পাওনা। প্রধানমন্ত্রী ভোটের পর দরদ দেখাবেন বলে টাকা আটকে রেখে এখন ঢাকঢোল পেটাচ্ছেন।
কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের অন্যতম প্রকল্প হলো প্রধানমন্ত্রী কিসান নিধি যোজনা। কৃষকদের সহায়তা প্রদানকারী এই প্রকল্পেরই একটি ফাইলে মোদি মঙ্গলবার সই করার ফলে দেশের কিসান নিধি প্রকল্পের আওতাধীন ৯ কোটি ৩০ লাখ কৃষক ১৬তম কিস্তির টাকা পেতে চলেছেন। মোট ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলো প্রকল্পটির উপভোক্তাদের জন্য।
ফাইলে স্বাক্ষর করার পর মোদি বলেন, ‘আমাদের সরকার কৃষকদের কল্যাণে দায়বদ্ধ। দায়িত্ব নিয়েই কৃষকদের কল্যাণের সঙ্গে সম্পর্কিত ফাইলে স্বাক্ষর করলাম। আগামী দিনে আমি কৃষক এবং দেশের কৃষিক্ষেত্রের জন্য আরও বেশি কাজ করে যেতে চাই।’
পরে আজই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় গ্রাম ও শহরাঞ্চলে মোট ৩ কোটি বসতবাড়ি তৈরিতে সহায়তা দেবে সরকার।
এদিকে, কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ মঙ্গলবার এক্স হ্যান্ডলে বিক্ষোভরত কৃষকদের সুরেই একের পর এক পোস্ট করে মোদিকে আক্রমণ করেছেন।
তার ভাষ্যমতে, ‘তৃতীয় দফার প্রথম দিনই এক তৃতীয়াংশের প্রধানমন্ত্রী তার জনসংযোগ প্রচার এবং সংবাদপত্রের শিরোনামবাজি শুরু করেছেন। অফিসে বসে তার পিএম কিসান নিধি যোজনার ১৭তম ফাইলটি সই করা নিয়ে ঢক্কানিনাদ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু যদি ঘটনাপঞ্জি দেখা যায়, তা হলে বোঝা যাবে ১৬তম কিস্তিটি দেওয়ার কথা ছিল চলতি বছর জানুয়ারি মাসে। তা দিতে এক মাস বিলম্ব করা হয়। আর এই ১৭তম কিস্তিটি দেওয়ার কথা ছিল গত এপ্রিল-মে মাসে। কিন্তু নির্বাচনী আচরণবিধি জারি হয়ে যাওয়ার জন্য তা দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী এই ফাইলে সই করে কাউকে কৃতার্থ করছেন না। সরকারের নীতি অনুযায়ী এটা ইতিমধ্যেই কৃষকদের প্রাপ্য। রুটিন প্রশসনিক সিদ্ধান্তগুলোকে মহৎ দান হিসাবে দেখানোটা তার অভ্যাস হয়ে গেছে। যদিও তিনি নিজেকে নশ্বর মানুষ বলে মনে করেন না, মনে করেন তিনি দৈবশক্তির আধার।’
এরপরই মেদির সামনে কৃষকদের দাবিগুলোকে পেশ করে জয়রাম লিখেছেন, ‘মোদী যদি কৃষক-কল্যাণে সত্যিই উদগ্রীব হন, তাহলে এই পাঁচটি কাজ তিনি করবেন। স্বামীনাথন সূত্র মেনে কৃষকদের শস্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি গ্যারান্টি নিশ্চিত করবেন। কৃষি ঋণ মওকুফের জন্য স্থায়ী কমিশন গঠন করবেন। ফসল বিমা সরাসরি কৃষকদের অ্যাকাউন্টে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষক সমাজের সঙ্গে কথা বলে, নতুন আমদানি-রফতানি নীতি গঠন করতে হবে। কৃষি ক্ষেত্রে জিএসটি রদ করতে হবে।’
রাজনৈতিক শিবির বলছে, কৃষকদের তুষ্ট করা এবং তাকে প্রশাসনিক ভাষ্যের কেন্দ্রে নিয়ে আসাটা এবার বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের বড় দায়।
পশ্চিম উত্তর প্রদেশে ৮, হরিয়ানায় ৫, রাজস্থানে ১১, পঞ্জাবে ২, মহারাষ্ট্রে ১২-এই পাঁচ রাজ্যে মোট ৩৮টা জেতা আসন হারিয়েছে বিজেপি। মূলত কৃষকদের দাবি না মানা, কৃষক আন্দোলন দমনের চেষ্টা, মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষি-ডেয়ারি মালিক-পশুপালকদের সমস্যা এর অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
লোকসভা নির্বাচনেরর ফলাফলের পর একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, উনিশের তুলনায় বিজেপির কৃষক ভোট শতকরা ৩ শতাংশ কমেছে চব্বিশে। পাশাপাশি ইন্ডিয়া মঞ্চে সামগ্রিক বিচারে কৃষক ভোট ১৪ শতাংশ বেড়েছে।
মোদির দ্বিতীয় দফায় তিন বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে কৃষকদের বিক্ষোভ দেখেছিল দেশ। ন্যায্য সহায়ক মূল্যসহ বেশ কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে ওই আন্দোলন থামাতে তিন আইন বাতিল করে কেন্দ্র।