জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে বিশ্বের ১২ কোটি মানুষ : জাতিসংঘ

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

যুদ্ধ, সহিংসতা এবং নিপীড়নের কারণে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ কোটি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জানিয়েছে জাতিসংঘ।

ক্রমবর্ধমান বাস্তুচ্যুত মানুষের এই সংখ্যাকে বিশ্বের রাষ্ট্র সমুহের বিনুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ হিসাবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, বিশ্বব্যাপী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ফের আগের সকল রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। গাজা, সুদান এবং মিয়ানমারের মতো জায়গায় সংঘাতের ফলে আরও বেশি লোক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

ইউএনএইচসিআর এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে যে, বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যা এখন জাপানের মোট জনসংখ্যার সমতুল্য।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যাপক বাস্তুচ্যুতির একটি বড় ধরনের কারণ হলো সংঘাত।’

ইউএনএইচসিআর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত বছরের শেষে ১১৭.৩ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং এপ্রিলের শেষের দিকে সংখ্যাটি আরও বেড়ে যায়। বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ১২ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় বসবাস করছে।

সংস্থাটি আরও বলেছে, সংখ্যাটি এক বছর আগের ১১ কোটি থেকে বেড়েছে এবং টানা ১২ বছর ধরে বেড়ে চলে আসছে। নতুন এবং পরিবর্তনশীল সংকটের সংমিশ্রণ এবং দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলোর সমাধানে ব্যর্থতার কারণে ২০১২ সাল থেকে বর্তমান সময়ে এটি প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।

গ্র্যান্ডি এএফপি’কে বলেন, আট বছর আগে যখন তিনি চাকরি নিয়েছিলেন তখন উচ্চ স্থানচ্যুতির পরিসংখ্যানে তিনি হতবাক হয়েছিলেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইউএনএইচসিআর গত বছর ২৯টি দেশে ৪৩ বার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে, যা কয়েক বছর আগে ছিল তার চার গুণেরও বেশি।

গ্র্যান্ডি বিশেষ করে উল্লেখ করেছেন যে, আন্তর্জাতিক আইনের সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে যখন সংঘাত পরিচালিত হয়, তখন প্রায়শই তা বাস্তুচ্যুতিতে শক্তিশালী অবদান রাখে।

গ্র্যান্ডি স্বীকার করেছেন যে, আন্তর্জাতিক আইন না মানার প্রবণতা কমার আশা বর্তমানে কম বলেই মনে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমি দেখতে পাচ্ছি যে, আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে পরিবর্তন না হলে বাস্তুচ্যুতির চিত্রটি ক্রমাগত বাড়তে থাকবে।’

জাতিসংঘের বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ২০২৩ সালের শেষে ১১৭.৩ মিলিয়ন বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে ৬৮.৩ মিলিয়ন লোক তাদের নিজের দেশে অভ্যন্তরীণভাবেই বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। শরণার্থী এবং অন্যান্যের আন্তর্জাতিক সুরক্ষার প্রয়োজনের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪৩.৪ মিলিয়নে বেড়েছে। সকল শরণার্থী এবং অন্যান্য অভিবাসী ধনী দেশে যায় এমন ধারণার বিরুদ্ধে ইউএনএইচসিআর।

সংস্থাটির মতে, অধিকাংশ শরণার্থীকে তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ৭৫ শতাংশ নিম্নে ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বসবাস করে, যেগুলো সম্মিলিতভাবে বিশ্বের আয়ের ২০ শতাংশেরও কম উৎপাদন করে।

২০২৩ সালের পর থেকে সুদানের প্রতিদ্বন্ধী দুই জেনারেলের মধ্যে যুদ্ধ দেশটির ৯০ লাখেরও বেশি লোককে বাস্তুচ্যুত করেছে। ২০২৩ সালের শেষে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ সুদানিকে বাস্তুচ্যুত করেছে।

গ্র্যান্ডি প্রতিবেশী চাদে পালিয়ে আসা অনেকের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যারা গত ১৪ মাসে প্রায় ৬ লাখ সুদানিকে আশ্রয় দিয়েছে।

গ্রান্ডি এএফপি’কে বলেছেন, ‘প্রতিদিন শত শত মানুষ একটি বিধ্বস্ত দেশ থেকে বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশে পাড়ি দিচ্ছে।’

গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো এবং মিয়ানমারে গত বছর ভয়ঙ্কর লড়াইয়ের কারণে আরও লক্ষাধিক মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

বর্তমানে গাজায় জাতিসংঘের অনুমান ১৭ লাখ মানুষ, যা মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ, তারা ৮ মাস আগে শুরু হওয়া যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ইউএনএইচসিআর অনুমান করেছে যে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের পর থেকে ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ গত বছর দেশের অভ্যন্তরে নতুনভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

সেখানে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ মোট ৩৭ লাখ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত লোক নিবন্ধিত হয়েছে।

ইউক্রেনীয় শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা ২ লক্ষ ৭৫ হাজার থেকে বেড়ে ৬০ লক্ষে দাঁড়িয়েছে।

সংস্থাটি বলেছে, সিরিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ১৩ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ জোরপূর্বক দেশের ভিতরে এবং বাইরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।