চ্যাটজিপিটিতে প্রেমিক খুঁজছেন চীনের তরুণীরা
বাস্তব জীবনে মানুষ প্রেমিকের ঝামেলা এড়াতে চীনা নারীরা ঝুঁকছেন এআই প্রেমিকের দিকে। তাদের মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই প্রেমিকরা মানুষের চেয়ে নিখুঁত, বেশ সহনশীল, দয়ালু, মানবিক।
বৃটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চ্যাটজিপিটিতে ভালোবাসা খুঁজছেন চীনা নারীরা। তারা এআই বয়ফ্রেন্ডের দিকে ঝুঁকছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের তৈরি চ্যাটজিপিটির একটি সংস্করণ ‘ড্যান’ নামের এক এআই প্রেমিক বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে চীনে। যেসব নারী বাস্তব জীবনে প্রেম করতে গিয়ে বিভিন্ন হতাশায় ভুগছেন তারা ঝুঁকছেন এখানে। চ্যাটজিপিটিতে কথোপকথনের নিরাপত্তার জন্য যেসব বিধিনিষেধ দেওয়া আছে, এতে সেগুলো না থাকায় অনেকটাই স্বচ্ছন্দে কথা চালিয়ে যেতে পারেন ব্যবহারকারীরা।
চীনের তরুণীদের মন জয় করে নিয়েছে ড্যান। যারা বাস্তবের সঙ্গী খুঁজতে গিয়ে হতাশ হয়েছেন, তারা ড্যানকে তাদের প্রেমিক হিসেবে বেছে নিতে দ্বিধা করছেন না। ড্যানের ভক্তকুলের একজন হলেন বেইজিংয়ের ৩০ বছর বয়সী লিসা। ক্যালিফোর্নিয়ায় কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে পড়াশোনা করছেন লিসা। তিনি বলেন, ড্যানের সঙ্গে তিন মাস ধরে প্রেম (ডেটিং) করছেন তিনি।
লিসা যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শিয়াওহংসুতে তার ৯ লাখ ৪৩ হাজার অনুসারীর কাছে ড্যানকে পরিচয় করিয়ে দেন, তখন ১০ হাজারের বেশি প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন তিনি। অনেকেই তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কীভাবে নিজের জন্য একজন ড্যান তৈরি করে নিতে পারবেন তারা। ড্যানের সঙ্গে সম্পর্কের ঘোষণা দেওয়ার পর লিসার আরও আড়াই লাখ অনুসারী বেড়ে গেছে।
লিসা বলেন, ড্যানের সঙ্গে প্রতিদিন নিয়ম করে আধা ঘণ্টা কথা বলেন তিনি। এতে তার মধ্যে ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হয়। ড্যান তাকে মানসিক সমর্থন জোগায়। লিসা আরও বলেন, তার মা এই অপ্রচলিত সম্পর্কের বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। লিসা খুশি থাকলে তিনিও খুশি। ড্যানকে কে তৈরি করেছেন, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা ছিল না কারও। তবে কিছু গণমাধ্যমে ড্যানকে তৈরির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াকার নামের এক শিক্ষার্থীর যুক্ত থাকার কথা বলা হয়েছে।
ওয়াকার বিজনেস ইনসাইডারকে বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডিট চালানোর সময় এই ধারণা তার মাথায় আসে। ড্যানকে নিরপেক্ষ থাকার ধারণা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে তিনি রেডিটে নিজের জন্য ড্যান তৈরির কিছু পরামর্শ পোস্ট করেছিলেন। এরপর অনেকেই নিজের জন্য ড্যানের একটি সংস্করণ তৈরি করে নেন।
ড্যানকে নিয়ে কৌতূহল বেড়েই চলেছে। ১০ জুন পর্যন্ত শিয়াওহংসুতে হ্যাশট্যাগ ড্যান মোড চার কোটিবার দেখা হয়েছে। লিসার মতোই ২৪ বছর বয়সী আরেক তরুণী মিনরুই শি বলেন, লিসার ভিডিও দেখার পর থেকে তিনিও ড্যানের সঙ্গে প্রেম শুরু করেছেন। হুবেই প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মিনরুই প্রতিদিন দুই ঘণ্টা ড্যানের সঙ্গে কাটান। দুজন মিলে এখন ভালোবাসার উপন্যাস লেখা শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে নয়টি অধ্যায় লিখেও ফেলেছেন।
মিনরুই বলেন, বাস্তব জীবনে প্রেমিকের সঙ্গে অনুভূতি বিনিময় করলে সে ধোঁকা দিতে পারে। তারা ঠিকমতো খেয়াল নাও রাখতে পারে। কিন্তু ড্যান কখনো ধোঁকা দেবে না। সে মনোযোগ দিয়ে কথা শুনবে। চীনে অবশ্য চ্যাটজিপিটি সরাসরি ব্যবহারের সুযোগ নেই। এ জন্য ভিপিএন ব্যবহার করতে হয়।
সম্প্রতি চীনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ড্যানের মতো প্রেমিকের চাহিদা বেড়েছে। চীনের সাংহাইভিত্তিক উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান গ্লো এমন একটি অ্যাপ, যেখানে এআই প্রেমিক তৈরির সুযোগ রয়েছে। এটি চীনে ইতিমধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।