ট্রাম্পের পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের রায়, বাইডেনের সতর্কবার্তা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে নেওয়া কিছু পদক্ষেপের জন্য বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে রেহাই পাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (১ জুলাই) মার্কিন সুপ্রিমকোর্ট এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম সাবেক কোনো প্রেসিডেন্টকে অপরাধের অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত দিলেন সুপ্রিমকোর্ট।
আদালতের রায়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মহাখুশি হলেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সুপ্রিমকোর্টের ৯ সদস্যের বেঞ্চের ৬ জনই ট্রাম্পের দায়মুক্তির পক্ষে ছিলেন; বিপক্ষে ছিলেন তিনজন। পরে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। সেই অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংবিধানের অধীন ট্রাম্প যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সেগুলোয় দায়মুক্তি পাবেন। তবে ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের জন্য দায়মুক্তি পাবেন না তিনি।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গত নির্বাচনের ফল পাল্টে দেয়ার চেষ্টার পাশাপাশি কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা, পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের মুখ বন্ধ রাখার জন্য ঘুষ দেয়া, কর ফাঁকি এবং রাষ্ট্রের গোপন নথি সরানোর অভিযোগে কয়েকটি মামলা চলছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে তাকে হারিয়ে জয় পান জো বাইডেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা একটি মামলায় সরকারি কৌঁসুলিরা অভিযোগ এনেছেন, ওই নির্বাচনের ফল বদলাতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছিলেন ট্রাম্প। পরে ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে হামলার পেছনেও উসকানি দিয়েছিলেন তিনি।
সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপির ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিচার বিভাগকে যে নির্দেশ ট্রাম্প দিয়েছিলেন, তা প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দাপ্তরিক কাজের মধ্যে পড়ে। এছাড়া জো বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি না দিতে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাও তার সাংবিধানিক ক্ষমতার আওতায় ছিল। পরে ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলের দিকে যাত্রা করতে সমর্থকদের দেওয়া ট্রাম্পের নির্দেশও এখতিয়ারের মধ্যে ছিল তার।
এর আগে, ৬ জানুয়ারির ঘটনা থেকে সুরক্ষা পেতে নিম্ন আদালতে আবেদন করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ওই আবেদন খারিজ হয়। সোমবার সুপ্রিমকোর্টের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে নিম্ন আদালতের সেই আদেশ বাতিল হয়ে গেল। একই সঙ্গে মামলাটি আরও পর্যালোচনার জন্য নিম্ন আদালতে পাঠানো হবে বলে সিদ্ধান্তে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস।
আদালতের এই রায়ের বাইডেনের প্রচারশিবিরের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, আদালতের এ সিদ্ধান্তের ফলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যা ঘটেছিল, তা বদলে যাবে না।
বাইডেন এ প্রসঙ্গে সতর্ক করে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করেছে, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টদের রাজায় পরিণত করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘আদালতের এই রায়ের অর্থ হলো ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফলকে পাল্টে দেয়ার চেষ্টায় ট্রাম্পের যে ভূমিকা তার জন্য ৫ নভেম্বরের আগে তার বিচারকাজ হবে না। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা রাজায় পরিণত হতে পারেন। তবে আমেরিকায় কোনো রাজা থাকবে না, এই নীতিতে আমাদের দেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আমরা প্রত্যেকেই আইনের চোখে সমান, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নই। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও নয়। কিন্তু আজকে আদালত যা করেছে তা একটি বিপজ্জনক নজির। কারণ এমন সিদ্ধান্তে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আর আইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।’
আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প। সর্বোচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্তের ফলে এটা স্পষ্ট যে নভেম্বরের আগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ও ক্যাপিটলে হামলাসংক্রান্ত মামলার তেমন অগ্রগতি হবে না। আর তিনি যদি আবার ক্ষমতায় আসেন, তাহলে এ মামলায় বিচার বন্ধের চেষ্টা করতে পারেন, এমনকি নিজেকে ক্ষমা করেও দিতে পারেন।
সুপ্রিমকোর্টের সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লিখেছেন, আমাদের গণতন্ত্র ও সংবিধানের জন্য এটা একটা বড় জয়। একজন আমেরিকান হিসেবে আমি গর্বিত।