১৯৪৫ সালের পর এই প্রথম যুক্তরাজ্যের নির্বাচন জুলাই মাসে
১৯৪৫ সালের পর এই প্রথম যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের নির্বাচন ২০২৪ সালের ৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যুক্তরাজ্যে ৫ বছর পর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারই প্রথম আগাম ভোটের ঘোষণা করেন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ (স্থানীয়ভাবে ‘টোরি’ হিসেবে পরিচিত) দলের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
টোরি দলের ভেতরে অসন্তোষ সৃষ্টি হলে ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
এ বিষয়ে বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ৬ সপ্তাহের নির্বাচনি প্রচারণার পর শুরু হয়েছে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে ৪ কোটি ৬০ লাখ ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিচ্ছেন।
তবে এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার আগে ফটো আইডি বা শনাক্তকরণ ছবি দেখাতে হবে তাদের।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) লন্ডন সময় সকাল সাতটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় বিদ্যালয়, কমিউনিটি হলের মতো ভবনগুলোকে পোলিং স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
হাউস অব কমনসের ৬শ ৫০টি আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ অন্তত ৩শ ২৬টি আসনে জয় পেতে হবে।
প্রথমবারের মতো ফটো আইডির ব্যবহার
বিবিসি জানিয়েছে, নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের এমন নাগরিকেরা যুক্তরাজ্যের এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। গত ১৮ জুন এই নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হয়।
২০২২ সালের এক আইনি পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশটির বাইরে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করা প্রায় ২০ লাখ ব্রিটিশ নাগরিকও ভোটের জন্য নিবন্ধন করতে সক্ষম হন।
এবারের নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডের ভোটারদের ভোট দেওয়ার জন্য ফটো আইডি বা শনাক্তকরণ ছবি দেখাতে হবে।
এক্ষেত্রে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বয়স্ক বা অক্ষম ব্যক্তির বাসের পাস এবং ওয়েস্টার ৬০+ কার্ডসহ মোট ২২ ধরনের আইডি কার্ড গ্রহণযোগ্য ধরা হচ্ছে। উত্তর আয়ারল্যান্ডে ২০০৩ সাল থেকেই ভোট দেওয়ার জন্য আইডি দেখাতে হয়। সেখানে ৯ ধরনের আইডি কার্ড দেখানো যায়।
অন্যদিকে, যারা সঠিক আইডি ছাড়া ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তারা ভোটার অথরিটি সার্টিফিকেট নামে বিনামূল্যের একটি নথির জন্য আবেদনের সুযোগ পেয়েছেন।
ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের যেসব ভোটারের আইডি কার্ড হারিয়ে গেছে বা চুরি হয়েছে, তারা ভোটের দিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত জরুরি প্রক্সি ভোটের জন্য আবেদন করতে পারবেন, যাতে করে অন্য কোনো নিবন্ধিত ভোটার তাদের পক্ষে ভোট দিতে পারেন।
অনেকেই ইতোমধ্যেই ডাকযোগে ভোট দিয়ে নিজ নির্বাচনি এলাকার জন্য নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। যারা পোস্টাল ভোটের জন্য আবেদন করেছেন কিন্তু এখনো তা ফেরত দিতে পারেননি তারা রাত ১০টায় ভোট শেষ হওয়ার সময়ের মধ্যে তাদের স্থানীয় ভোটকেন্দ্রে তা হস্তান্তর করতে পারবেন। এছাড়াও অফিস চলাকালীন স্থানীয় কাউন্সিল অফিসেও পোস্টাল ভোট জমা দেওয়া যাবে।
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের খুঁটিনাটি বিষয়
যুক্তরাজ্যে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ হয়, ৫ বছরের। ২০১৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল কনজারভেটিভ পার্টি (টোরি)।
নিয়মমাফিক পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগাম নির্বাচনের ঘোষণায় বাস্তবে তা ঘটেনি।
যুক্তরাজ্য ৬৫০টি নির্বাচনি কেন্দ্র বা এলাকায় বিভক্ত। এই প্রত্যেক নির্বাচনি এলাকার ভোটাররা একজন সংসদ সদস্য নির্বাচন করেন, যারা তাদের হয়ে হাউস অব কমন্সে প্রতিনিধিত্ব করেন। নির্বাচনি ময়দানে লড়াই করতে নামা প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশ কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি। তবে কেউ কেউ আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও ভোটে লড়ছেন।
নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী
বর্তমানে যে দুই দল সবচেয়ে বেশি ভোট পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, সে দল দুটি হলো- ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও লেবার পার্টি।
৪৪ বছরের ঋষি সুনাক কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০২২ সালে যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তার বয়স ছিল ৪২। আধুনিক সময়ে ব্রিটেনের সবচেয়ে কম বয়সের প্রধানমন্ত্রী মি. সুনাক। শুধু তাই-ই নয়, তার হাত ধরে এবারই প্রথম কোনো ব্রিটিশ-ভারতীয় ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
অন্যদিকে, লেবার পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন স্যার কিয়ের স্টারমার। তার বয়স ৬১ বছর। ২০২০ সালে জেরেমি করবিনের পর দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে ‘ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস’-এর প্রধান ছিলেন স্টারমার। পাবলিক প্রসিকিউশনের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
ভোটের ফল ঘোষণার পরের পদক্ষেপ
ভোট গণনার পর যে দলের কাছে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক এমপি (সংসদ সদস্য) রয়েছেন, সেই দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এবং সরকার গঠন করার জন্য আহ্বান জানান রাজা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংসদ থাকা দলের নেতাই হন সংসদে বিরোধী দলনেতা।
যদি কোনো দলই সংসদ সদস্যের নিরিখে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে সেই দল নিজেদের সংসদ সদস্যের ওপর নির্ভর করে আইন পাস করতে পারে না। এর ফলে 'হাং পার্লামেন্ট' বা ত্রিশঙ্কু অবস্থা তৈরি হয়।
এই পরিস্থিতিতে বৃহত্তম দল সিদ্ধান্ত নিতে পারে অন্য দলের সঙ্গে মিলে জোট সরকার গঠনের অথবা সংখ্যালঘু সরকার হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে কোনো আইন পাস করার সময় তাদের অন্য দলের ভোটের ওপর নির্ভর করে থাকতে হয়।