হামাস নিশ্চিহ্নে গাজার কৃষিজমিতে ইসরাইলি ধ্বংসলীলা
দক্ষিণ গাজার উপকূলীয় আল-মাওয়াসির মাটিতে এখনও টাটকা ইসরায়েলি ট্যাংকের চাকার দাগ। বাতাসে বারুদের গন্ধ। উপড়ে যাওয়া মৃত একটি টমেটো গাছ তুলে ধরলেন ফিলিস্তিনের কৃষক নেদাল আবু জাহের। ৩৯ বছর বয়সী কৃষক ক্লান্ত গলায় বলেন, এই হল ধ্বংসের নমুনা। আমরা সাধারণ কৃষক, হঠাৎ এক দিন ট্যাংক এসে গোলাবর্ষণ শুরু করল, শুরু হল ক্ষেপণাস্ত্র হানাও।
আবু জাহেরের পিছনে পড়ে রয়েছে তার গাছঘরের (গ্রিনহাউস) ধ্বংসাবশেষ। জাহের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল কিন্তু এই এলাকাটিকে মানবিক ক্ষেত্র ( হিউম্যানিটারিয়ান জোন) হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
শুধু আবু জাহের নন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস সংঘর্ষ শুরু হওয়া পর থেকে সমগ্র গাজাজুড়ে প্রায় ৫৭ শতাংশ কৃষিজমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ও কৃত্রিম উপগ্রহ সংস্থা (ইউএনওএসএটি)-এর যৌথ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে সম্প্রতি তা জানা গিয়েছে।
এফএও-এর ম্যাটিউ হেনরি স্পষ্ট জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনের ৩০ শতাংশ অন্নসংস্থান হয় কৃষিক্ষেত্র থেকে। সেগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
২০২২ সালেও গাজা প্রায় ৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকার কৃষিপণ্য রফতানি করেছে ইসরায়েল, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক-সহ বিশ্বের বিভিন্ন অংশে। তার মধ্যে স্ট্রবেরি ও টমেটো অন্যতম। সংঘর্ষ শুরু হতেই সেই রফতানির পরিমাণ কমে হয়েছে শূন্য। কৃষিজমিতে চলছে গোলাবর্ষণ।
বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের উত্তরের অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে প্রায় ৬৮ শতাংশ কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাফাহ শহরের কাছে পাঁচ একর জমি ইজারা নিয়েছিলেন ৩৪ বছর বয়সী কৃষক ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ইসরায়েলি ট্যাংক ও বুলডোজার আমার চাষ করা ফল, লেবু, পেয়ারা, পালং শাক, বেগুন, স্কোয়াশ, কুমড়া ও সূর্যমুখীর চারাসহ বিভিন্ন গাছে ধ্বংসলীলা চালায়।
জাতিসংঘের মতে, গাজায় চলতে থাকা খাদ্যের হাহাকারের পিছনে এই ধ্বংসলীলা প্রবলভাবে দায়ী।
ইসরায়েলি সেনাদের অবশ্য দাবি, ইচ্ছে করে কৃষিজমি, ফলের বাগানে আক্রমণ করা হয়নি। হামাস বেশির ভাগ এই সব এলাকাগুলো থেকেই হামলা চালায়।
মানবাধিকার কর্মীদের একাংশের দাবি, হামাসের ভয় দেখিয়ে ইসরায়েল আসলে গাজাকে খাদ্যশূন্য করে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাইছে। গাজা কার্যত ধুঁকছে, তবু অব্যাহত ইসরায়েলি হামলা।