চাপে থাকা বাইডেনের এখন প্রত্যেকটা দিন পরীক্ষা
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম বির্তকে খারাপ করায় শুধু প্রতিপক্ষ নয়, ডেমোক্র্যাট দলের নেতারাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমালোচনা করছেন। তারা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে এখনই সরে দাঁড়ানো উচিত বাইডেনের। এতে চাপে পড়া বাইডেন কী বলছেন আর কী করছেন, বিশ্বের চোখ সেদিকে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে বিপর্যয়ের পর প্রতিদিনই নতুন পরীক্ষার মুখে পড়ছেন ডেমোক্রেটিক দলের এই নেতা। এ পরিস্থিতি থেকে উতরাতে তাই তার প্রতিটি পদক্ষেপই এখন গুরুত্বপূর্ণ।
৮১ বছর বয়সী বাইডেনের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা নিয়ে যে প্রশ্ন ছিল, সপ্তাহ দুয়েক আগে ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর তা আরও জোরালো হয়েছে। নিজের দলের অনেক নেতাই তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। এরই মধ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলের অন্যতম তহবিল সংগ্রহকারী হলিউড তারকা জর্জ ক্লুনি।
বাইডেনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ২০১০ বা ২০২০ সালে যে বাইডেনকে তিনি দেখেছিলেন, তার সঙ্গে আজকের বাইডেনের মিল নেই। ক্লুনির এ মন্তব্যকে বাইডেনের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তিনি পুরো বিষয়টি প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে বলে জানান। ৷আমরা সবাই আসলে তাকে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে সাহস জোগাচ্ছি, কারণ, সময় তো দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।
সময়-স্বল্পতা বড় দুশ্চিন্তা হয়ে উঠছে ডেমোক্র্যাট শিবিরে। বাইডেনকে নিয়ে দুশ্চিন্তা আর নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে ক্রমশ। বিশেষ করে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সর্বশেষ বিতর্কে বাইডেনের ভাঙা কণ্ঠে নড়বড়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলা, কথা বলতে বলতে খেই হারিয়ে ফেল।
অনেক ডেমোক্র্যাট নেতাকেই উদ্বিগ্ন করেছে। সে উদ্বেগ এতটাই যে, তারা মনে করছেন নিজের, দলের এবং দেশের স্বার্থে বাইডেনের উচিত এখনই নির্বাচনি লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানো।
বাইডেনের জন্য বড় ধাক্কা আসে নিজের দলের মার্কিন সিনেটের সদস্য পিটার ওয়েলচের দিক থেকে। প্রথম সিনেট সদস্য হিসেবে বাইডেনের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে সংবাদপত্রে একটি নিবন্ধ লিখেছেন তিনি। বুধবার ওই মতামতে ওয়েলচ লিখেছেন, দেশের ভালোর জন্য বাইডেন আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন।
ঘোরতর এ সংকট কাটিয়ে সমর্থন নিজের দিকে টানতে বাইডেনের সামনে একটি সুযোগ ছিল সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকার। তবে সেখানে ভালো কিছু করে দেখাতে পারেননি তিনি। আশার আলো দেখাতে পারেননি নর্থ ক্যারোলাইনা, নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, পেনসিলভেনিয়া, উইসকনসিন ও ভার্জিনিয়ায় নির্বাচনী সমাবেশেও।
এরই মধ্যে বাইডেনের সামনে আরেকটি সুযোগ হতে পারে আজ বৃহস্পতিবারের ন্যাটো সম্মেলন। পশ্চিমা সামরিক জোটের এ সম্মেলনে তাকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। এ সংবাদ সম্মেলন অনেকটাই পরিষ্কার করবে—সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে কতটা সাবলীলভাবে উত্তর দিতে পারেন তিনি।
এদিকে, ডেমোক্রেটিক পার্টিকে বাইডেনের বিকল্প হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে শীর্ষে রাখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে নির্বাচনে প্রতিযোগিতার জন্য শীর্ষ প্রতিযোগী হবেন তিনি। তবে অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীরাও আলোচনায় থাকবেন, যারা আগে যুক্তি দিয়েছিলেন যে তারা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর প্রচার চালাতে পারবেন।
বাইডেনের বিকল্প বিবেচনা করার মতো আরেকটি গ্রুপ রয়েছে, ‘সুপার ডেলিগেটস’। প্রায় ৭০০ জন সিনিয়র নেতা এবং নির্বাচিত কর্মকর্তাদের একটি দল। তাদের অবস্থানের ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনভেনশনে প্রতিনিধি হয়। সাধারণত দলীয় নিয়মের অধীনে তারা প্রথম ব্যালটে ভোট দিতে পারেন না। তবে তারা মনোনয়ন পরিবর্তন করতে পারেন। তারা পরবর্তী ব্যালটে ভোট দিতে পারেন।
তবে সত্যি যদি নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাসের মধ্যে একজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান, তাহলে এটি একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করবে। তবে এ সংকট কাটানোর জন্য ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের কিছুটা ভিন্ন কৌশল রয়েছে।
ডেমোক্র্যাটরা এক্ষেত্রে পার্টির চেয়ার ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বের সঙ্গে পরামর্শ করেন। পার্টির নিয়ম অনুযায়ী কনভেনশনের পর শূন্যস্থান পূরণ করার ক্ষমতা ডেমোক্র্যাটিক জাতীয় কমিটিকে দেওয়া হয়।