কে হবেন হিজবুল্লাহর পরবর্তী কর্ণধার? আলোচনায় ২ জন

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হাশেম সাফিউদ্দীন (বায়ে) এবং নাইম কাসেম

হাশেম সাফিউদ্দীন (বায়ে) এবং নাইম কাসেম

ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুর পর যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে সেখানে গোষ্ঠীটির পরবর্তী হাল কে ধরবেন তা নিয়ে চলছে আলোচনা। এই আলোচনায় রয়েছেন দুইজন, হাশেম সাফিউদ্দীন এবং নাইম কাসেম

এদের মধ্যে কার সম্ভাবনা বেশি তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা। যদিও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসান নাসরুল্লাহর শূন্যস্থান পূরণ করা খুব সহজ হবে না। কারণ তিনি ইসরায়েলকে যেভাবে প্রতিহত করেছেন সেই কৌশল ও বুদ্ধি হাশেম সাফিউদ্দীন কিংবা নাইম কাসেমের মধ্যে প্রবল নয়।

বিজ্ঞাপন

হাশেম সাফিউদ্দীন

হাশেম সাফিউদ্দীন হিজবুল্লাহর কার্যনির্বাহী পরিষদের প্রধান এবং নাসরুল্লাহর চাচাতো ভাই। নাসরুল্লাহের মৃত্যুর পর তাকেই সবচেয়ে যোগ্য মনে করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

হিজবুল্লাহর একটি সূত্র জানিয়েছে, হাসিম সাফিউদ্দীনকে নতুন সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দেখা যেতে পারে। তিনি গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক বিষয়গুলো তত্ত্বাবধান করেন। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের এই গোষ্ঠীর সামরিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী জিহাদ কাউন্সিলের সদস্যও তিনি।

১৯৬৪ সালে টায়ারের কাছে দেইর কানুন এন-নাহরের দক্ষিণ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সাফিউদ্দীন শিয়া ধর্মীয় শিক্ষার দুটি প্রধান কেন্দ্র ইরানের ইরাকি শহর নাজাফ এবং কোম অঞ্চলে নাসরুল্লাহর সঙ্গে ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন করেন। শুরুর দিকেই দুজনেই হিজবুল্লাহতে যোগ দিয়েছিলেন।

ইরানের সঙ্গে সাফিউদ্দীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ২০২০ সালে মার্কিন হামলায় নিহত শীর্ষ ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেইমানির মেয়েকে বিয়ে করেছেন তার ছেলে রেধা।  

কার্যনির্বাহী পরিষদের নেতৃত্বের পাশাপাশি, তিনি শুরা কাউন্সিলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং এর জিহাদি কাউন্সিলের প্রধান। এই দায়িত্বের জন্য তিনি হিজবুল্লাহর বিদেশী প্রতিপক্ষের কাছে শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। ২০১৭ সালে তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে মনোনীত করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তার সম্পত্তি জব্দ করে।

গত জুনে এক হিজবুল্লাহ কমান্ডার নিহত হওয়ার পর ইসরাইলের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দেন তিনি। সাফিউদ্দিন তখন বলেন, ‘শত্রুকে কান্না ও বিলাপের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলো।’

প্রায়ই দেশের জনতার উদ্দেশে বিবৃতি দেন হাশেম সাফিউদ্দিন। তার বক্তব্যে হিজবুল্লাহর সামরিক অবস্থান ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনের বিষয়গুলো ওঠে আসে।

সম্প্রতি বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় দাহিয়েহ উপশহরে হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটিতে এক অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের ইতিহাস, আমাদের বন্দুক ও আমাদের রকেট সবই তোমাদের সঙ্গে আছে।

নাইম কাসেম

৭১ বছর বয়সী নাইম কাসেম হিজবুল্লাহর ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল এবং প্রায়শই তাকে গোষ্ঠীটির সামনের সারির নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তিনি নাবাতিহ গভর্নরেটের কাফার কিলাতে জন্মগ্রহণ করেন। একটি দক্ষিণ লেবাননের একটি গ্রাম যেখানে গত অক্টোবর থেকে ইসরায়েল বাহিনী হামলা চালিয়ে আসছে।

শিয়া সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক সক্রিয়তায় কাসেমের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে, তিনি প্রয়াত ইমাম মুসা আল-সদরের বিতাড়িত আন্দোলনে যোগ দেন, যা পরবর্তীতে শিয়া গোষ্ঠীর আমাল আন্দোলনের অংশ হয়ে ওঠে। পরে তিনি আমাল ত্যাগ করেন এবং ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে হিজবুল্লায় যোগ দিয়ে গোষ্ঠীটির গুরুত্বপূর্ণ একজন হয়ে ওঠেন।

তিনি হিজবুল্লাহর শিক্ষাগত নেটওয়ার্কের অংশ তত্ত্বাবধান করতেন এবং গোষ্ঠীটির সংসদীয় কার্যক্রম তদারকিতেও জড়িত ছিলেন। কাসেম ১৯৯২ সালে হিজবুল্লাহর ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল নির্বাচিত হন। এর আগে এই দায়িত্বে ছিলেন ইসরায়েলের হামলায় নিহত আব্বাস আল-মুসাভির।  

কাসেম কয়েক বছর ধরে হিজবুল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থেকে জনমুখী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি গোষ্ঠীর শুরা কাউন্সিলের সদস্যও।

২০০৫ সালে 'হিজবুল্লাহ, দ্য স্টোরি ফ্রম উইদিন' নামে একটি বিখ্যাত বই প্রকাশ করেন। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছিল।

উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ইসরায়েলের হামলায় হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হিজবুল্লাহ। এক বিবৃতিতে লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠীটি বলেছে, তারা গাজার সমর্থনে এবং লেবাননের প্রতিরক্ষায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মোকাবিলা চালিয়ে যাবে।