হাসান নাসরুল্লাহর অবস্থান জানায় ইরানের গুপ্তচর!
ইরানের একজন গুপ্তচরের তথ্যে ইসরায়েলের যম বলে খ্যাত লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে।
ফরাসি সংবাদপত্র লে প্যারিসিয়েন-এর বরাতে রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, লেবাননের বৈরুতে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ বিমান হামলায় নিহত হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে, ইরানের একজন গুপ্তচর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে তার অবস্থান সম্পর্কে জানিয়েছিলেন।
লেবাননের একটি নিরাপত্তা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে ওই গুপ্তচর জানিয়েছিলেন, সংগঠনের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সদস্যের সঙ্গে একটি বৈঠকে যোগ দিতে বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে হিজবুল্লাহর ভূগর্ভস্থ সদর দফতরে থাকবেন নাসরুল্লাহ।
যদিও এ বিষয়ে আর বিস্তারিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
এদিকে সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। এই হামলা একটি সুক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে করা হয়েছে এবং এতে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত ছিল। হামলাটি এমন সময়ে হয়েছে যখন নাসরুল্লাহ এবং ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীর অন্যান্য নেতারা লেবাননের বৈরুতে একটি বাঙ্কারে জড়ো হয়েছিলেন।
প্রতিবেদন মতে, দক্ষিণ বৈরুতের একটি ব্যস্ত এলাকা থেকে বাঙ্কারটি ৬০ ফুটেরও বেশি নিচে ছিল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নেতারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি হামলার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে সেই বাঙ্কারে জড়ো হয়েছিলেন।
হিজবুল্লাহ প্রধানকে হত্যার লক্ষ্যে ইসরায়েল সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হামলাটি চালিয়েছে বলে দাবি করা হয় প্রতিবেদনে। এছাড়া মাটির নিচে ৬০ ফুটেরও বেশি ভারী সুরক্ষিত অবস্থানকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে ইসরায়েলের প্রায় ৮০ টন বোমা ব্যবহার করেছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যায় ব্যবহৃত বোমার ওজন ছিল ২ হাজার পাউন্ড।
নাসরুল্লাহকে হত্যার জন্য যে যুদ্ধবিমানগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল, তার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। সেই ভিডিওর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, নাসরুল্লাহর ওপর হামলায় কমপক্ষে আটটি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয়। যুদ্ধবিমানগুলো ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমায় সজ্জিত ছিল। যুদ্ধবিমানগুলোয় অন্তত ১৫টি ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমা ছিল। বোমাগুলোর প্রতিটির ওজন প্রায় ২ হাজার পাউন্ড। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বিএলইউ-১০৯ বোমাও ছিল।
মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক বিস্ফোরক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ট্রেভর বল বলেন, বোমাগুলো ‘বাংকার–বাস্টার’ নামে পরিচিত। এগুলো বিস্ফোরণের আগে ভূগর্ভে প্রবেশ করতে পারে। এই বোমার সঙ্গে নির্ভুল আঘাত হানার একটি নির্দেশিকা–ব্যবস্থা যুক্ত থাকে।
মার্কিন বিমানবাহিনীর হামলার নিশানা (লক্ষ্যবস্তু) সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ ওয়েস ব্রায়ান্ট ভিডিওটি পর্যালোচনা করেছেন। তিনিও উল্লিখিত বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
গত কয়েক দিন ধরেই প্রতিবেশী দেশটির পূর্ব ও দক্ষিণ প্রান্তে মারাত্মক বোমাবর্ষণ চালিয়েছে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। বাদ যায়নি রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ অংশ। এই এলাকাগুলো হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত।
লেবাননের রাজনীতিতে নাসরুল্লাহর প্রভাব ছিল প্রশ্নাতীত। পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটির জনগোষ্ঠীর একাংশের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন নাসরুল্লাহ।আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া বা সংঘর্ষের সময়ে মধ্যস্থতা করা, দু’টি ক্ষমতাই ছিল নাসরুল্লাহর।
দক্ষিণ বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান সেনার ভয়ানক বোমাবর্ষণে নাসরুল্লাহর কন্যা জায়নাবের মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। যদিও লেবানন বা হিজবুল্লাহর তরফে এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।