ইসরায়েলের হামলায় ৫ হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত
লেবাননের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নাকোরায় চারটি ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরান-সমর্থিত লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ৫ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচ হিজবুল্লাহ সদস্য।
দক্ষিণ লেবাননের বেশ কয়েকটি গ্রাম ও শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (২১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ লেবাননের বেশ কয়েকটি গ্রাম ও শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় পাঁচ হিজবুল্লাহ সদস্য নিহত এবং আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে লেবাননের সামরিক সূত্রগুলো গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। হিজবুল্লাহ বলেছে, তাদের যোদ্ধারাও বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি স্থাপনায় আক্রমণ করে জবাব দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, লেবাননে সাত মাসে আন্তঃসীমান্ত সহিংসতায় ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েল বলছে, লেবানন থেকে চালানো হামলায় সীমান্তে ১৪ সেনা ও ১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। পাল্টাপাল্টি এই হামলায় উভয় পক্ষের কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
মূলত গাজায় যুদ্ধের জেরে লেবাননের দক্ষিণ সীমান্ত জুড়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাথে গুলি বিনিময় করছে হিজবুল্লাহ। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বলেছে, তারা তার মিত্র হামাসকে সমর্থন করতে এবং লেবাননে আক্রমণ চালানো থেকে ইসরায়েলকে নিবৃত্ত করতে ইসরায়েলে রকেট নিক্ষেপ করছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েলের সংঘাত শুরুর পর ৯ অক্টোবর থেকে হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী নিয়মিতভাবেই সীমান্তে গুলি বিনিময় করছে।
রাইসির উদ্ধারকার্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চেয়েছিল ইরান
কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পর যখন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন চিরশত্রু যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চেয়েছিল ইরান।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ‘কোনও কারণে’ ইরানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেই সহায়তা করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
মঙ্গলবার (২১ মে) বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর ইরান সরকার আমাদের কাছে সাহায্য চেয়েছিল। আমরা বলেছিলাম- আমরা সহায়তা করতে ইচ্ছুক। এটি আসলে এমন কিছু যা আমরা এই পরিস্থিতিতে যেকোনো সরকারের ক্ষেত্রেই করব। তবে শেষ পর্যন্ত মূলত লজিস্টিক্যাল কিছু কারণে, আমরা ইরানকে সেই সহায়তা প্রদান করতে পারিনি।’
তবে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে তথ্য প্রকাশ করেননি তিনি। দুই দেশের মধ্যে কীভাবে যোগাযোগ হয়েছিল তার কোনো বর্ণনাও করেননি ম্যাথিউ মিলার। কিন্তু তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, দুর্ঘটনার মুখে পড়ার পর অবিলম্বে রাইসির হেলিকপ্টার খুঁজে পেতে সাহায্য চেয়েছিল ইরান।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দীর্ঘ তল্লাশি অভিযান শেষে পাহাড়ি ও তুষারাবৃত এলাকা থেকে রাইসিসহ সবার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার মুখে পড়ার পর প্রধান শত্রু ইরান তাদের কাছে সহায়তা চেয়েছিল বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ‘ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও’ সেই সহায়তা করতে পারেনি দেশটি।
১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ওয়াশিংটনের সাথে তেহরানের কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে খোলামেলা সংঘর্ষের পর স্থিতিশীলতা আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান ওমানে বেশ গোপনেই তাদের সর্বশেষ আলোচনা সম্পন্ন করেছে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে ‘আনুষ্ঠানিক শোক’ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইরান নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নেওয়ার সাথে সাথে আমরা ইরানের জনগণ এবং মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার জন্য তাদের সংগ্রামের প্রতি আমাদের সমর্থন পুনর্নিশ্চিত করছি।’
অবশ্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এই শোক ও সমবেদনা প্রকাশকে রাইসির প্রতি সমর্থন হিসেবে নয় বরং বৈশিষ্ট্যসূচক মানদণ্ড হিসেবে বর্ণনা করেছে। ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাইসি এমন একজন লোক ছিলেন যার হাতে প্রচুর রক্তের দাগ ছিল’।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাইসির স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
সোমবার (২০ মে) জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এ পরিষদের অধিবেশনে রাইসি ও তার সঙ্গীদের স্মরণে এ নীরবতা পালন করা হয়।
বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা ইরনা জানায়, জাতিসংঘে নিযুক্ত মোজাম্বিকের রাষ্ট্রদূত পেদ্রো কমিসারিও আফনসো মে মাসের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সোমবার সকালে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
অধিবেশনের শুরুতে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির স্মরণে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের আহ্বান জানান পেদ্রো কমিসারিও।
রোববার (১৯ মে) আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দু’দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করেছিলেন। সেখান থেকে তিনটি হেলিকপ্টারের বহর নিয়ে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে ফিরছিলেন রাইসি ও তার সঙ্গে থাকা অন্য কর্মকর্তারা।
পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ে রাইসিকে বহনকারী বেল-২১২ মডেলের হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। এতে রাইসিসহ ওই হেলিকপ্টারের সব যাত্রী নিহত হন। অবশ্য অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছায়।
গাজায় যা ঘটছে তা গণহত্যা নয়: বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জোরালোভাবে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন। ফিলিস্তিনপন্থি প্রতিবাদকারীদের সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেছেন, গাজায় হামাসের ‘জঙ্গিদের’ বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে ইসরায়েলি বাহিনী গণহত্যা সংঘটিত করছে না।
সোমবার (২০ মে) হোয়াইট হাউজে ‘ইহুদি আমেরিকান হেরিটেজ মাস’ অনুষ্ঠানে বাইডেন বলেন, গাজায় যা ঘটছে তা গণহত্যা নয়। আমরা তা প্রত্যাখ্যান করছি।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাইডেন নিয়মিত ফিলিস্তিনপন্থি বক্তাদের প্রতিবাদের মুখোমুখি হচ্ছেন। ইসরায়েলের পক্ষে তার অবিচল সমর্থনের জন্য এসব প্রতিবাদকারীরা বাইডেনকে ‘গণহত্যা জো’ তকমা দিয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
বাইডেন বলেন, ইসরায়েলের নিজেই হামাস ‘জঙ্গিদের’ হামলার ভুক্তভোগী। ৭ অক্টোবর ইসরায়েল দক্ষিণাঞ্চলে হামাস ‘জঙ্গিরা’ হামলা চালিয়ে ১২০০ জনকে হত্যা আর কয়েকশ জনকে জিম্মি করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ‘লৌহদৃঢ়’।
সিনওয়ার ও হামাসের বাকি কসাইদের অপসারণ করতে ইসরায়েলের পাশে আছি আমরা। আমরা হামাসের পরাজয় চাই। এটি করার জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করছি আমরা, বলেন তিনি।
গাজায় হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের মধ্যে যারা অসুস্থ, বয়স্ক ও আহত তাদের মুক্তির জন্য ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলা আলোচনা স্থবির হয়ে আছে, কিন্তু বাইডেন তাদের মুক্তির চেষ্টায় ক্ষান্ত না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
তিনি বলেন, যত কঠিনই হোক না কেন আমরা তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছি, বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছি। বাইডেন গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিরও আহ্বান জানিয়েছেন।