যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিতর্কিত নির্বাচন

  হাতি-গাধার লড়াই ২০২৪
  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস

ছবি: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস

বিশ্বের প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের গণতন্ত্রকে অনুকরণীয় হিসেবে দেখিয়ে আসছে দেশটি। এর ফলে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে মোড়ল হিসেবে টিকে আছে তারা। এরপেছনে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে
দেশটির নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও বস্তুনিষ্ঠতা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ২০০ বছরের ইতিহাসে সবগুলো নির্বাচনই গ্রহণযোগ্যতার খেতাব পায়নি। বেশ কয়েকটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ফলাফল নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। হয়েছে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করার মতো ঘটনাও।

এমনই তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

বিজ্ঞাপন

২০২০: ক্যাপিটল কাণ্ড

২০২০ সালের বহুল আলোচিত নির্বাচনে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ৭০ লাখ ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হন জো বাইডেন। ইলেক্টোরাল কলেজেও জিতে যান তিনি। তবে নির্বাচনে জিততে ফল বদলানোর জন্য কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচন কর্মকর্তা, বিচারবিভাগ ও তার নিজের ভাইস প্রেসিডেন্টের ওপর চাপ দিতে থাকেন ট্রাম্প। শেষমেশ ভোটের ফল মেনে নিতে অস্বীকৃতিও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনের ফল জোর করে পাল্টে দেওয়ার চেষ্টার অংশ হিসেবে ট্রাম্পের সমর্থকেরা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় তারা জোর করে মার্কিন পার্লামেন্ট ক্যাপিটলে ঢুকে পড়ে। সংঘাতে জড়িয়ে অনেকেই আহত হন।

এ নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করে বলেছেন, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষে হেরে যাওয়ার পরও তার হোয়াইট হাউস ছেড়ে আসা ঠিক হয়নি।

২০০০: ৫৩৭ ভোটে জয়

২০০০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী আল গোর সার্বিকভাবে রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশের চেয়ে বেশি ভোট (পপুলার ভোট নামে পরিচিত) পেয়েছিলেন। কিন্তু ইলেক্টোরাল কলেজে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি তিনি। শেষমেশ ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ফলেই বিজয়ী হন বুশ। সেখানে সামান্য ব্যবধানে গোরকে হারান তিনি।

পরে গোর এই অঙ্গরাজ্যের বেশ কয়েকটি কাউন্টিতে ভোট গণনা প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করেন। কিন্তু ৩৬ দিনের আইনি লড়াই শেষে এ বিতর্কের অবসান হয়। মাত্র ৫৩৭ ভোট বেশি পেয়ে ফ্লোরিডায় জয়ী হন বুশ, যা তাকে তর্কসাপেক্ষে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক প্রশাসনিক পদটি এনে দেয়।

১৮৭৬ সালের নির্বাচন

আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের আগে এবং পরে দীর্ঘদিন যাবত দক্ষিণাঞ্চলের লোকজন রিপাবলিকান ফেডারেল সরকারের অধীনে নিয়ন্ত্রিত ছিল। এতে তারা রাজ্যগুলোকে রাজনৈতিকভাবে পুনর্গঠন এবং উত্তরাঞ্চলের মতো অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনবোধ করে। ১৮৭৬ সালের পূর্বে মধ্যপন্থী এবং উগ্র শ্বেতাঙ্গদের কারণে এমন চেষ্টা বার বার ব্যর্থ হয়েছিল। অন্যদিকে, স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে রিপাবলিকান সরকার দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগে বার বার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আসছিল। আর এই দুর্নীতিতে সেখানকার রাজনৈতিক লোকেরাও জড়িয়ে পড়ে।

এ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সামুয়েল টিলডেন ও রিপাবলিকান পার্টির রাদারফোর্ড বি. হেইসের মধ্যে নির্বাচনের কে জিতবেন, তা পরিশেষে দক্ষিণের তিন অঙ্গরাজ্যের ফলাফলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই তিন অঙ্গরাজ্যে ভোটের ফল নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। এসব অঙ্গরাজ্যের সমর্থন ছাড়া উভয় প্রার্থীর কেউই ইলেক্টোরাল কলেজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছিলেন না।

ফ্লোরিডা, লুসিয়ানা এবং সাউথ ক্যারোলিনায় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও ওরেগনের একটি ইলেক্টোরাল ভোট টাইলডেনের বিপক্ষে পড়ে। চারটি রাজ্যের ভোটের ফলাফল যখন অনির্ধারিত তখন এর সমাধান করতে কংগ্রেসের শরণাপন্ন হতে হয়।

১৮৭৭ সালে কংগ্রেসের অধিবেশনে একটি দ্বিপাক্ষিক কমিশন গঠনের মাধ্যমে সাংবিধানিক সংকট সমাধানের চেষ্টা করেন রাজনৈতিক নেতারা। এ সময় সেই কমিটি দুই প্রার্থীর মধ্যে একটি চুক্তির ব্যবস্থা করে।

চুক্তি অনুযায়ী, রাদারফোর্ড প্রেসিডেন্ট হন এবং সাবেক কনফেডারেসির আওতাধীন দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় সরকার।