মামলায় জেরবার ট্রাম্পের রাজসিক প্রত্যাবর্তন

  হাতি-গাধার লড়াই ২০২৪
  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উসকানি থেকে পর্ন তারকাকে ঘুষ, আয়কর জালিয়াতি, বিচারব্যবস্থার ওপর অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার মামলায় অভিযুক্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার আমেরিকার মসনদে। তার এই প্রত্যাবর্তনকে রাজসিক বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বুধবার (৬ নভেম্বর) বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা ২৭৯টি। অপরদিকে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৩টি ভোট। তার মানে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার ম্যাজিক ফিগার ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পার করেছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে আভাস পাওয়া গিয়েছিল তা ফিকে হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াইট হাউস দখলে নিতে মরিয়া ট্রাম্পের কাছে ক্ষমতার চেয়ে গুরুত্ব ছিলো ‘অন্য’ জায়গায়। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উসকানি থেকে পর্ন তারকাকে ঘুষ, আয়কর জালিয়াতি, বিচারব্যবস্থার ওপর অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা থেকে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের দেওয়া উপহার সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়া— আমেরিকার ফেডারেল আদালতে মোট ৩৪টি মামলায় অভিযুক্ত ট্রাম্প।

গত ৩১ মে ফেডারেল আদালতের ১২ সদস্যের জুরি জানিয়েছিল, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা সব ক’টি অভিযোগই প্রমাণিত! দোষী সাব্যস্ত করা হলেও এখনও পর্যন্ত আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্টকে সাজা শোনানো হয়নি।

বিজ্ঞাপন

রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবীরা বার বার আদালতের কাছে সাজা ঘোষণার দিনক্ষণ পেছানোর আবেদন করেন। যার কারণে বার কয়েক সেই তারিখ বদলানোও হয়। শেষ দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা হতে পারে ২৬ নভেম্বর। অর্থাৎ আর ২০ দিন পর। ওই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করেছে অনেক কিছু।

ইতিহাসে প্রথম ‘অপরাধী’ প্রেসিডেন্ট পেলো আমেরিকা। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে তার বিরুদ্ধে ওঠা ফৌজদারি মামলা স্থগিত হয়ে যেতে পারে।

অভিযোগ রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের পরে ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তার মুখ বন্ধ রাখতে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। ওই টাকা দেওয়ার বিষয়টি গোপন রাখতে ট্রাম্প তার ব্যবসায়িক সংস্থার নথিপত্রে জালিয়াতি করেছিলেন। সেই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল তাকে। নভেম্বরের শেষ দিকেই হয়তো সাজা ঘোযণা হতে পারে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের নির্বাচনে ফলাফল নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের শুরুতেই এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে তা স্থগিত করা হয়। ফের প্রেসিডেন্ট হলে, প্রথমেই অ্যাটর্নি জেনারেল স্মিথকে বরখাস্ত করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ফলে মামলার ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে।

২০২০ সালের নির্বাচনে টান টান লড়াইয়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের জর্জিয়া অন্যতম ভূমিকা নিয়েছিল। তবে সেখানকার নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনের ফলাফলে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ রয়েছে। যদিও সেই মামলা আপাতত স্থগিত।

ফৌজদারি মামলা ছাড়াও একাধিক দেওয়ানি মামলাতেও নাম জড়িয়েছে ট্রাম্পের। নিউ ইয়র্কের আদালতে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে অধিকৃত সম্পত্তির মামলা চলছে। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বেআইনিভাবে ৩০ কোটি ডলারের সম্পত্তি করেছিলেন ট্রাম্প, এই অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। দোষী সাব্যস্ত হলে জেল হবে না, তবে দিতে হবে জরিমানা।

এতো সব অভিযোগ নিয়ে ভোটের মাঠে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এদিকে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা হয়নি। তবে নিজের এ ঘোষণার পরই বিশ্বনেতারা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছাবার্তা দিচ্ছেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে।

ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানানো বিশ্বনেতাদের মধ্যে আছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যুক্তরাজ্যর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।

অভিনন্দন বার্তায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, সম্মান এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে আরও শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আমরা চার বছর একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত...।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে ‘ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রত্যাবর্তনের’ জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। এক্স–এ দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, প্রিয় ডোনাল্ড এবং মেলানিয়া ট্রাম্প, ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রত্যাবর্তনের জন্য অভিনন্দন! হোয়াইট হাউসে আপনাদের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন আমেরিকার জন্য একটি নতুন সূচনা এবং ইসরায়েল ও আমেরিকার জোটের জন্য একটি শক্তিশালী প্রতিশ্রুতির বার্তা।