গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল: অ্যামনেস্টি
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল গণহত্যা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সংস্থাটির প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই অভিযোগ করা হয়। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন জনের সাক্ষাৎকার, স্যাটেলাইট ইমেজ ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিবৃতি বিশ্লেষণ করেই এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে উল্লিখিত আইনি সংজ্ঞা অনুযায়ী গাজায় ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।
৩২ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনটিতে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত গাজায় সংঘটিত ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েল অমানবিকভাবে অবিরাম এবং সম্পূর্ণ দায়মুক্তির সঙ্গে গাজায় ২৩ লাখ মানুষের জীবনকে নরকসাদৃশ করে তুলেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণ যুদ্ধের সূত্রপাত করলেও, এটি গণহত্যাকে ন্যায়সঙ্গত করে না বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন দ্বারা নিষিদ্ধ পাঁচটি কাজের মধ্যে অন্তত তিনটি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি এবং গাজায় এমন অমানবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্র তৈরি করা যা সেখানকার মানুষের শারীরিক ধ্বংস নিশ্চিত করতে পারে। ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ডকে ‘গাজায় ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করার ইচ্ছাকৃত প্রয়াস’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, আমাদের এই প্রতিবেদন সতর্ক সংকেত হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করছি। এটি গণহত্যা এবং এটি এখনই বন্ধ হওয়া উচিত।
প্রতিবেদনের প্রধান অভিযোগ- সামরিক অভিযানের নজিরবিহীন মাত্রা ও ধ্বংসের বিস্তৃতি, যা ২১তম শতাব্দীর অন্য কোনো সংঘর্ষে দেখা যায়নি।
>> সাধারণ নাগরিক ও বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর সরাসরি হামলা বা নির্বিচার হামলার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিসাধন করেছে।
>> মানবিক সহায়তা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করা এবং বসবাসের অনুপযুক্ত অবস্থার সৃষ্টি করা।
>.জল, স্যানিটেশন, খাদ্য এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ধ্বংস, যা গাজার জনগণের জন্য জীবনধারণ অসম্ভব করে তুলেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৪৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার বেশিরভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ২৩ লাখ জনগোষ্ঠীর প্রায় সবাই বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। জাতিসংঘ ও ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, গাজায় আর কোনও নিরাপদ স্থান নেই।
এদিকে, ইসরায়েলি সরকারের দাবি, তাদের অভিযান হামাসকে নির্মূল করতেই সীমাবদ্ধ। তবে অ্যামনেস্টি বলেছে, জাতিগত গোষ্ঠী হিসেবে ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর ইতোমধ্যে গাজায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। অ্যামনেস্টি আদালতকে গণহত্যার অভিযোগও অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।