দ. কোরিয়ার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের এক যাত্রীর শেষ বার্তা

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দ. কোরিয়ার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজ থেকে চলছে উদ্ধার কার্যক্রম

দ. কোরিয়ার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজ থেকে চলছে উদ্ধার কার্যক্রম

দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী একটি উড়োজাহাজের ভয়াবহ বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে। এতে উড়োজাহাজে থাকা ১৮১ জনের মধ্যে ১৭৯ জনই নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদ সংস্থা ইয়োনহাপ। উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার আগে এক যাত্রী তার স্বজনের কাছে শেষবারের মতো একটি বার্তা পাঠিয়ে বলেছিলেন, ‘আমাদের উড়োজাহাজের পাখায় একটি পাখি আটকে গেছে। আমি কি আমার শেষ কথাটি জানিয়ে দেব?’

দেশটির যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ওই যাত্রীর মতোই উড়োজাহাজটির এক পাইলটও সতর্ক বার্তা দিয়েছিলেন। এরপর তিনি বিপরীত দিক থেকে উড়োজাহাজটি অবতরণের চেষ্টা চালান। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বার্তা পাঠানো ওই যাত্রী ও পাইলট দু’জনের কেউই বেঁচে নেই। উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পর মাত্র দু’জন ক্রুকে সেখান থেকে উদ্ধার করা গেছে। তারা উড়োজাহাজটির শেষের দিকে ছিলেন। তবে তাদের দু’জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

দক্ষিণ কোরিয়ার এক কর্মকর্তা বলেছেন, উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের আগে পাখির আঘাত বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছিল নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার।

বিজ্ঞাপন

ইউ জায়ে-ইয়ং (৪১) নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমি বিমানবন্দরের কাছে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকি। দুর্ঘটনার আগে আমি উড়োজাহাজের ডান পাখায় একটি স্ফুলিঙ্গ দেখি। পরে আমি একটি বিকট বিস্ফোরণ শোনার পর পরিবারের লোকদের বলছিলাম যে বিমানে সমস্যা হয়েছে।

চো নামে অন্য এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, দুর্ঘটনার সময় আমি বিমানবন্দর থেকে সাড়ে ৪ কিলোমিটার দূরে ছিলাম। আমি উড়োজাহাজটিকে নামতে দেখেছি এবং পিছনে আলোর ঝলক লক্ষ্য করলাম। তারপর একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেলাম এবং বাতাসে ধোঁয়া উঠতে দেখলাম।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী কিম ইয়ং-চিওল (৭০) বলেছেন, উড়োজাহাজটি প্রথম প্রচেষ্টায় অবতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল এবং বিধ্বস্ত হওয়ার আগে আরেকটি প্রদক্ষিণ করেছিল। দুর্ঘটনার প্রায় পাঁচ মিনিট আগে দুবার ‘ধাতব স্ক্র্যাপিং’ শব্দ শুনেছিলাম।

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনার ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামনে এসেছে। ভিডিওটি লি জিউন-ইয়ং নামের এক ব্যক্তির সৌজন্যে পাওয়া বলে উল্লেখ করেছে বার্তা সংস্থাটি।

ভিডিওতে দেখা যায়, উড়োজাহাজটি বিমানবন্দরে অবতরণ করছে। রানওয়ে ধরে জোর গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ সময় উড়োজাহাজটির কোনো ল্যান্ডিং গিয়ার দেখা যাচ্ছিল না।

একপর্যায়ে উড়োজাহাজটি রানওয়ের শেষ প্রান্তে থাকা একটি প্রাচীরে গিয়ে প্রচণ্ডবেগে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে একটি বড় বিস্ফোরণ ঘটে। আগুনের বড় লেলিহান আকাশের দিকে উঠে যায়। পরে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে থাকে।

উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের কারণ জানিয়েছেন দেশটির স্থানীয় অগ্নিনির্বাপক সংস্থার প্রধান লি জিয়ং হিউন। তিনি বলেছেন, পাখির সঙ্গে ধাক্কা লাগার কারণে উড়োজাহাজটির ল্যান্ডিং গিয়ারে ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে।

তবে সঠিক কারণ খুঁজে পেতে পুলিশ ও অগ্নিনির্বাপক কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে তদন্ত শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।

দক্ষিণ কোরিয়ার যোগাযোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উড়োজাহাজটি ২০০৯ সালে তৈরি করা হয়েছে।