বিরলতম চিতার খেলার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি
পূর্ব রাশিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলে পৃথিবীর বিরলতম এক চিতার খেলার দৃশ্য একটি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। দৃশ্যটি ধারণের সময় চিতাটি বিড়ালের মত আনন্দে মেতেছিল।
সম্প্রতি বন্য এ আমুর চিতাটির ধারণকৃত ভিডিওটি প্রকাশ করেছে রাশিয়ার প্রিমোরস্কি ক্রাই-এর লিওপার্ড ন্যাশনাল পার্ক।
ন্যাশনাল পার্ক-এর সংবাদ থেকে জানা যায়, যথেষ্ট বয়স হওয়া সত্ত্বেও, পুরুষ চিতাটিকে স্বাস্থ্যবান দেখাচ্ছিল এবং সে খোশমেজাজে ছিল। ক্যামেরার সামনে এই শিকারিকে গৃহপালিত বিড়ালের মতই খেলতে দেখা যায়।
লিওপার্ড ন্যাশনাল পার্কে প্রায় ৪০০ ক্যামেরা রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে এখানকার প্রাণীদের স্বাস্থ্য ও আচরণের দিকে নজর রাখা হয়।
বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে থাকা আমুর চিতা সংরক্ষণে ২০১২ সালে পার্কটি স্থাপিত হয়। রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে মাত্র ১২০টি সাইবেরিয়ান আমুর চিতা রয়েছে।
সাইবেরিয়ান এ চিতাগুলো টিকে থাকতে নিজেদের গাছের মধ্যেও লুকিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে কয়েক দশক ধরে চোরা-শিকারে মাত্র ১২০টি চিতা তাদের প্রাকৃতিক আবাসে টিকে আছে।
সাইবেরিয়া টাইমস এর প্রতিবেদনে জানা যায়, এই বিলুপ্তপ্রায় বিরল এই প্রজাতিকে বাঁচাতে ক্রেমলিন এই লিওপার্ড ন্যাশনাল পার্ক গড়ে তোলেন।
সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায়, মাত্র ৮৬টি প্রাপ্তবয়স্ক ও ২১টি চিতা শাবক এই অরণ্যে বসবাস করছে।
আজ থেকে প্রায় শতবর্ষ আগে এই বিড়াল শ্রেণির প্রাণীগুলোকে কোরিয়ান উপদ্বীপে, রাশিয়ার পূর্বে চীনের কয়েকটি প্রদেশে এদের দেখা যেত। কিন্তু ২০০৭ সালে রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে মাত্র ৩০টি আমুর চিতা পাওয়া যায়।
২০১৬ সালে ভ্লাদিমির পুতিন ১৬ টি শাবককে এই সংরক্ষিত অঞ্চলে নিয়ে আসেন। এর পর থেকেই এই প্রজাতির সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
হাজার বর্গমাইলের এই পার্কে স্থাপিত ক্যামেরাগুলোর মাধ্যমে চিতার সংখ্যা গণনা করে থাকে। সম্প্রতি এসব ক্যামেরায় সদ্য জন্ম নেওয়া তিনটি চিতা শাবককেও দেখা গেছে।
চোরা শিকারিদের কঠিন শাস্তির বিধানের কারণে চিতার সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটছে। বিলুপ্তপ্রায় সাইবেরিয়ান বাঘ ও চিতার চামড়া সন্ধানী চোরা শিকারিরা এই শাস্তির আওতাভুক্ত।
মহাবিপন্ন এই আমুর চিতা প্রজাতি প্রচণ্ড শীত কিংবা উষ্ণ আবহাওয়াতেও টিকে থাকতে পারে। এদের রয়েছে শক্ত ও দ্রুতগামী পা। নিশাচর অন্যান্য চিতার মত এরাও ঘণ্টায় ৩৭ মাইল বেগে ছুটতে পারে।
সাধারণত লোমশ শরীরের এই চিতাগুলোর ওজন হয়ে থাকে ৩২-৪৮ কেজি। তবে কখনো কখনো এদের ওজন ৭৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। স্ত্রী চিতা পুরুষ থেকে আকারে ছোট ও ওজনে কম হয়ে থাকে।
মাত্র তিন থেকে চার বছর বয়সেই এরা প্রজননক্ষম হয়ে থাকে। এর গড় আয়ু ১৫ বছর। এরা একাকী থাকতে পছন্দ করে।
চোরা শিকার, খাদ্য সংকট, বাসস্থান ধ্বংস এবং বনভূমি সঙ্কুচিত হয়ে পড়ায় পৃথিবীতে মহাবিপন্ন একটি প্রজাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে ।