যুক্তরাষ্ট্র ‘জঙ্গলের আইন’কে স্বীকৃতি দিচ্ছে: ফিলিস্তিন

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের বসতি নিয়ে চার দশকের পুরোনো অবস্থান থেকে সরে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের বসতিকে বৈধ হিসেবে উল্লেখ করেছে দেশটি।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ‘ইসরায়েলি বেসামরিক বসতি আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী নয়।’ পশ্চিম তীরের অবস্থান ঠিক করার বিষয়টি ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের আলোচনা করে করতে হবে বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এ অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধান সমঝোতাকারী সায়েব এরেকাত যুক্তরাষ্ট্রের এ হঠকারী সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন পদদলিত করে ‘জঙ্গলের আইনকে’ স্বীকৃতি দেয়ার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন।

‘ল অব দ্য জঙ্গল’ বা ‘জঙ্গলের আইন’ বলতে এমন অবস্থা বোঝায় যেখানে ক্ষমতাশালী বা শক্তিশালীরা গায়ের জোরে তাদের নিজেদের স্বার্থে যা খুশি তাই করে আর সেটাকেই নিয়ম মনে করে। বাংলা প্রবাদে একে ‘জোর যার, মুল্লুক তার’ বলা হয়।

বিজ্ঞাপন

এরেকাত বলেন, ‘পূর্ব জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে ইসরায়েলি উপনিবেশ বসতি স্থাপন শুধু আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনই নয়, এটি যুদ্ধাপরাধও। আন্তর্জাতিক আইন পদদলিত করে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি বড় ধরনের হুমকি তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।’

ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনাও কড়া নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অবিবেচক সিদ্ধান্তের।
রুদেইনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বৈধ আইন বা প্রস্তাবকে খারিজ করে দেয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের না যোগ্যতা না আছে ক্ষমতা। ইসরায়েলি বসতিকে বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এখতিয়ার নেই।‘

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানে খুশি কট্টরপন্থী লিকুদ পার্টির নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার জন্য একে বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরসহ বিভিন্ন অংশে, এমনকি জর্ডান উপত্যকা ও ডেড সি‘র উত্তরাঞ্চলেও ইসরায়েলি সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় মধ্যপন্থি ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টির সঙ্গে যৌথভাবে সরকার গঠনে আলোচনা
চালাচ্ছেন নেতানিয়াহু।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের দাবি করা ভূখণ্ডের বিভিন্ন অংশে ইসরায়েল জোরপূর্বক বেসামরিক ইহুদিদের জন্য বসতি স্থাপন করে আসছে। এসব বসতিতে অবস্থান করা ইহুদিদের সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ। ইসরায়েলি বসতিকে নিজেদের স্বপ্নের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ার জন্য বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখেন ফিলিস্তিনিরা। জাতিসংঘও ইসরায়েলের এ কর্মকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী হিসেবে মনে করে।

এর আগে ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে। এর সঙ্গে তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। ২০১৮ সালে জেরুজালেমে দূতাবাস সরিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ ক্ষিপ্ত করে তুলেছিলো ফিলিস্তিনিদের। ওই সময় সহিংস প্রতিবাদও হয় ফিলিস্তিনি। ফিলিস্তিনিরা জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দেখতে চায়। সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের নিন্দা হয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদও। সাধারণ পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রকে তার সিদ্ধান্ততে পিছু হটার আহ্বান জানিয়েছিলো।