ইউরোপের প্রথম পরিবেশবান্ধব মসজিদ কেমব্রিজে
ইউরোপে যখন নতুন করে ইসলামবিদ্বেষী প্রচারণা বাড়ছে, সরকারিভাবে আরোপ করা হচ্ছে কঠোর বিধি-নিষেধ, তখন এক মনোরম মসজিদ বানিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ। ইউরোপের প্রথম পরিবেশবান্ধব এক মসজিদের যাত্রা শুরু হয়েছে শহরটিতে।
মসজিদটি এমনভাবে বানানো হয়েছে যা শূন্য কার্বণ নির্মগন করবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ব্যবহার, বায়ুকে কাজে লাগিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে মসজিদটিতে। সৌরবিদ্যুতে আলোকিত হবে মসজিদের ভেতর-বাহির। পুরো বছরজুড়ে বিদ্যুতের চাহিদা মিটবে সূর্যের আলো থেকেই।
প্রকৃতিকে রক্ষা, বর্জ্য কমানো ও মিত্যবয়িতার ওপর ইসলামি বিধি-নিষেধের গুরুত্ব তুলে ধরতেই তৈরি করা হয়েছে এ মসজিদ।
প্রকৃতি-বান্ধব নকশার জন্য মসজিদটির স্থপতি ও কর্তৃপক্ষ পেয়েছে পুরস্কারও। ২০১৯ সালে উড অ্যাওয়ার্ডের শিক্ষা ও সরকারি খাতের পুরস্কারটি নিজের ঝুঁড়িতে তুলে নেয় মসজিদটি। একই বছর নকশার জন্য এ জে স্থপতি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। খ্যাতিমান স্থপতি জুগলের প্রতিষ্ঠান মার্ক বারফিল্ড করেছে মসজিদের নকশা।
কেমব্রিজ শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদটি মিল রোডে। এক হাজার নামাজি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৩ মিলিয়ন পাউন্ড।
এক হাজারেরও বেশি দাতার অনুদানে তৈরি হয়েছে এ মসজিদ। দাতাদের মধ্যে ব্যক্তি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন রাষ্ট্রও রয়েছে। ব্যয়ের সিংহভাগ এসেছে তুরস্ক সরকার ও দেশটির বেসরকারি কোম্পানি ইয়াপি মেরকেজি ও কাতারের সরকারি তহবিল থেকে।
কেমব্রিজ মসজিদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ মুসলিম গায়ক ইউসুফ ইসলাম মসজিদের পৃষ্ঠপোষক। তিনি আগে ক্যাট স্টিভেন্স নামে পরিচিত ছিলেন।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) হলেও এপ্রিলে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় মসজিদটি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইয়েপ এরদোগান। মসজিদের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের আমন্ত্রণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
বিশাল এ মসজিদ ইসলাম ও ব্রিটিশ বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনার নির্মাণশৈলী ও নকশার মেলবন্ধনে তৈরি হয়েছে। দুই সংস্কৃতিকে যেমনটি রূপ দেওয়া হয়েছে মসজিদের কারুকাজে, সাংস্কৃতিক সংযোগ ও বিশ্বাস স্থাপন করাটাও এ মসজিদ তৈরির উদ্দেশ্য।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেটিই তুলে ধরেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। লন্ডনে ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার লন্ডন থেকে কেমব্রিজে যান এরদোগান।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, এরদোগান মসজিদটি ইসলামবিরোধিতা বেড়ে যাওয়ার প্রতি একটি দৃষ্টান্তমূলক জবাব হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন।
এরদোগান বলেন, আমি মনে করি, এই মসজিদ যেটি প্রথমবারের মতো বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সৌহার্দ্যের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। মহান আল্লাহর ইচ্ছায়, এটি আগামী দিনে ঐক্যবদ্ধতা, সংলাপ ও শান্তি প্রসারের কেন্দ্রে পরিণত হবে।