ডাইপোল ইফেক্টে আফ্রিকায় বন্যা এবং অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল
বন্যা এবং ভূমিধসে পশ্চিম আফ্রিকায় মানুষ মারা যাচ্ছে, লাখো মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। অন্যদিকে হাজার মাইল দূরে দাবানলে পুড়ছে অস্ট্রেলিয়া। বিজ্ঞানীরা এই দুই ঘটনার পেছনের কারণ হিসেবে একটি ব্যাপারের কথা উল্লেখ করেছেন। তারা ধারণা করছেন এর পেছনে কারণ ভারত মহাসাগরের ‘ডাইপোল ইফেক্ট’।
বিবিসি বলছে, ভারত মহাসাগরের দুইপ্রান্তে তাপমাত্রার পার্থক্য (ডাইপোল ইফেক্ট) অনেকটা এলনিনো (বায়ুমণ্ডলীয় এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের সমুদ্রগুলোর মাঝে একটি পর্যাবৃত্ত পরিবর্তন) সদৃশ। ভারত মহাসাগরের উভয় মেরুতে তাপমাত্রার পার্থক্য যা ‘ভারতীয় নিনো’ নামে পরিচিত। সাগরের পূর্ব এবং পশ্চিম পার্শ্বে তাপমাত্রার পার্থক্য চক্রের তিনটি দশা রয়েছে। পজিটিভ, নেগেটিভ এবং নিউট্রাল।
গত ছয় দশকের মধ্যে পজিটিভ দশা এবারই সবচেয়ে সক্রিয়। এর মানে হচ্ছে পশ্চিম ভারত মহাসাগরে উচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। অন্যদিকে পূর্বপ্রান্তে হচ্ছে এর বিপরীত অবস্থা। এই সক্রিয় পজিটিভ ডাইপোল এই বছর স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক। এর ফলে পূর্ব আফ্রিকায় বন্যা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় খরা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এন্ড্রু টারনার বিবিসিকে বলেন, যখন ভারত মহাসাগরের দ্বিমেরু বা ডাইপোল ক্রিয়া ঘটে তখন পূর্ব আফ্রিকায় স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যায়। নেগেটিভ ডাইপোল দশায় ভারত মহাসাগরের পশ্চিমে ঠাণ্ডা ও শুষ্ক পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকে। আর নিরপেক্ষ দশায় সমুদ্রের তাপমাত্রা স্বাভাবিকই থাকে।
গত দুই মাসে পূর্ব আফ্রিকায় অক্টোবর এবং নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০০ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
জিবুতি, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা, তানজানিয়া, সোমালিয়া এবং দক্ষিণ সুদান খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব দেশে বন্যা এবং ভূমিধস হয়েছে। কমপক্ষে ৩০০ মানুষ এই দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছে ২ দশমিক ৮ মিলিয়ন আফ্রিকাবাসী।
ফেমিন আরলি ওয়ার্নিং সিস্টেমস নেটওয়ার্ক সতর্ক করে বলেছে যে, কেনিয়া তানজানিয়া রুয়ান্ডা এবং বুরুণ্ডিতে আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ায় তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
প্রায় ১০০টি দাবানলে পুড়ছে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস, সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে সিডনির উত্তরাংশ। অস্ট্রেলিয়ান আবহাওয়া অধিদপ্তর নাগরিকদের সতর্ক করে বলছে সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
দপ্তরের কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু ওয়াটকিনস বলেন, ভারত মহাসাগরের ডাইপোল ক্রিয়ার জন্য এই তাপমাত্রা বাড়ছে। গ্রিন হাউজ গ্যাসের নিঃসরণের কারণে ভারত মহাসাগরের ডাইপোল ইফেক্ট ক্রিয়া করছে।