গণহত্যা বন্ধ করুন: আইসিজেতে গাম্বিয়া
আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু বলেছেন, মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধ করুন। আধুনিক যুগে এই গণহত্যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আইসিজেকে গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ দিতে আহ্বান জানান তিনি।
আবুবকর মারি তামবাদু বলেন, রোহিঙ্গারাও মানুষ। তাদের খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানসহ বাঁচার অধিকার রয়েছে। রোহিঙ্গা শিশুরও অধিকার রয়েছে শিক্ষা লাভ করে ডাক্তার হওয়ার।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা গণহত্যা মামলার বিচারের শুনানি বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায় শুরু হয়।
আদালতে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু বলেন, আমি ২০১৮ সালে কক্সবাজারে ওআইসির পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করি। সেখানে গিয়ে রোহিঙ্গাদের চোখে ভয়, কষ্ট ও মানবিকতার চরম অবমাননা দেখতে পেয়েছি। সেখানে গিয়েই জানতে পেরেছি রাখাইনে গণহত্যা হয়েছে। গণহত্যা না হলে এত মানুষ পালিয়ে আসত না।
তিনি বলেন, আমরা এত দূরে থেকেও কেন আইসিজেতে এসেছি? কারণ, বিশ্বে যেকোনো স্থানে এমন গণহত্যা হলে দূরে থাকলেও এর বিচারের দায় আমরা এড়াতে পারি না।
গাম্বিয়া তাদের আবেদনে আদালতকে ঘোষণা করতে বলেছে যে, গণহত্যার কনভেনশনের অধীনে মিয়ানমার তার দায়বদ্ধতা লঙ্ঘন করেছে এবং অব্যাহত রেখেছে; চলমান গণহত্যা বন্ধ করতে হবে এবং এর দায়বদ্ধতাগুলোর প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান জানাতে হবে।
আবুবকর মারি তামবাদু বলেন, গণহত্যার অপরাধীদের একটি উপযুক্ত ট্রাইব্যুনালের সামনে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে; এবং অবশ্যই গণহত্যার শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনসহ এবং তাদের পুরো নাগরিকত্ব এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং বৈষম্য, নিপীড়ন এবং অন্যান্য সম্পর্কিত কর্মের বিরুদ্ধে সুরক্ষাসহ গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি না করার নিশ্চয়তা দেওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছে গাম্বিয়া।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া গত ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলাটি দায়ের করে। মিয়ানমার গণহত্যা, ধর্ষণ এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নির্মূল করছে বলে অভিযোগ করা হয় ওই মামলায়।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) আদালতে গাম্বিয়া বক্তব্য উপস্থাপন করছে। বুধবার মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরবে। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে গাম্বিয়া এবং বিকেলে মিয়ানমার প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন ও চূড়ান্ত বক্তব্য পেশ করবে।
রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি টিম ছাড়াও মানবাধিকার কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত রয়েছেন। শুনানিতে বাংলাদেশ কোনো পক্ষে না থাকলেও গাম্বিয়াকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করছে। মামলার শুনানি উপলক্ষে হেগ শহরে গাম্বিয়া ও মিয়ানমার ছাড়াও অন্য কয়েকটি দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা হাজির হয়েছেন। মামলায় গাম্বিয়াকে সমর্থন দিতে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) কূটনীতিকেরাও উপস্থিত হয়েছেন। এছাড়াও বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী এবং মিয়ানমার সরকারের সমর্থকেরাও উপস্থিত রয়েছেন।
আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হলেন সোমালিয়ার বিচারপতি আবদুলকোয়াই আহমেদ ইউসুফ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট চীনের বিচারপতি ঝু হানকিন। বিচারকদের নির্বাচন করেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদ।
অন্য সদস্যরা হলেন—স্লোভাকিয়ার বিচারপতি পিটার টমকা, ফ্রান্সের বিচারপতি রনি আব্রাহাম, মরক্কোর মোহাম্মদ বেনুনা, ব্রাজিলের আন্তোনিও আগুস্তো কানকাদো ত্রিনাদে, যুক্তরাষ্ট্রের জোয়ান ই ডনোহু, ইতালির গর্জিও গাজা, উগান্ডার জুলিয়া সেবুটিন্দে, ভারতের দলভির ভান্ডারি, জ্যামাইকার প্যাট্রিক লিপটন রবিনসন, অস্ট্রেলিয়ার রিচার্ড ক্রর্ফোড, রাশিয়ার কিরিল গিভরগিয়ান, লেবাননের নওয়াফ সালাম এবং জাপানের ইউজি ইওয়াসাওয়া।