নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ, ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র আটক

  • লুৎফে আলি মহব্বত, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আটক ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ/ছবি: সংগৃহীত

আটক ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ/ছবি: সংগৃহীত

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। কংগ্রেস, বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলের ডাকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ'র বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আসে লাখো জনতা। ভারতের উত্তরে রাজধানী শহর দিল্লির রামলীলা ময়দান থেকে দক্ষিণের বেঙ্গালুরুর টাউন হল ছাপিয়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে পূর্বের ম্যাগাসিটি কলকাতার ধর্মতলা ছুঁয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতেও। কলকাতায় প্রতিবাদের নেতৃত্ব দেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভারতীয় মিডিয়ার ভিডিও লাইভে সম্প্রচারিত স্মরণকালের সর্বাত্মক নাগরিক প্রতিবাদের ছবিতে দেশের সর্বত্র জনক্ষোভের উত্তাল পরিস্থিতি দেখা গেছে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও পুলিশ ও প্রতিবাদকারীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়ার খবরও রয়েছে। তবে, কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে উত্তাপ ছিল খানিকটা বেশি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সেখানকার অন্যতম আন্দোলনকারী ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ'কে আটক করা হয়েছে।

বেঙ্গালুরুতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ নাগরিক প্রতিবাদ থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আটক করা হয় ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ’কে। অভিযোগ করা হয়, আরও ৩০ জন প্রতিবাদীর সঙ্গে তাকে নিগ্রহ করে পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

৬১ বছর বয়সী এই ঐতিহাসিক মিডিয়াকে জানিয়েছেন, তিনি মহাত্মা গান্ধীর একটি পোস্টার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এবং সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সংবিধান নিয়ে কথা বলছিলেন। এই ‘অপরাধ’ ছিল তার। আর এ কারণেই আটক হতে হয়েছে তাকে।

নিজের বক্তব্য শেষ করার আগেই এই ইতিহাসবিদের হাত ধরে টানতে থাকে একদল পুলিশ। লাইভে দেখা যায়, পুলিশের উর্দিধারী কয়েকজন তাকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ভারতের সিভিল সোসাইটির সদস্যরা মৌলিক অধিকার হানির প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ ও তার সম্মানের কথা সর্বজনবিদিত। ভারতের প্রথম সারির ইতিহাসবিদের একজন তিনি। পুলিশ কোন অধিকারে তাকে নিগ্রহ করল, তাও এমন বর্বরভাবে, এই প্রশ্নও উঠছে নাগরিক সমাজে। প্রতিবাদ করার ‘অপরাধে’ তার মতো বিদগ্ধ মানুষকেও যদি আটক করা হয়, তাহলে দেশের গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা নিয়ে আরেকবার ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করছে ভারতের মিডিয়া পর্যবেক্ষক, সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীগণ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সারা ভারত আজ উত্তাল নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে। দেশের সর্বত্র এবং কলকাতায়ও আয়োজিত হয়েছে মহামিছিল। ধর্ম-দল-রাজনীতি নির্বিশেষে আপামর সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন সেই মিছিলে। এই ইস্যুতে প্রতিবাদ জানাতে গত কয়েকদিন ধরে উত্তাল ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কয়েকটি দেশ বিক্ষুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিজের দেশের নাগরিকদের ভারত ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে। এমন অবস্থায় নিপীড়নের দৃশ্য এবং বিশিষ্টজনদের আটক করার ঘটনাকে 'গণতন্ত্রের লজ্জা' বলে অভিহিত করা হয়েছে।