কে এই জেনারেল কাসিম সোলাইমানি? 



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
জেনারেল কাসেম সুলাইমানি, ছবি: সংগৃহীত

জেনারেল কাসেম সুলাইমানি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাত ও সমর-কৌশলগত পরিস্থিতিতে ব্যাপক আলোড়িত ইরানি জেনারেল কাসিম সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনা নতুন বছরের শীর্ষ শিরোনাম হয়েছে। দেশে-বিদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন এই ইরানি সেনাপতি। সবাই জানতে চাচ্ছে, কে এই কাসিম সোলাইমানি এবং কেন তাকে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে?

 
  

মধ্যপ্রাচ্য ও বর্তমান বিশ্বের সামরিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অন্যতম ছিলেন কাসিম সুলাইমানি। তাকে বিবেচনা করা হয় সমকালীন দুনিয়ার অন্যতম সেরা, কুশলী ও সফল সামরিক কমান্ডার হিসাবে। যুদ্ধকৌশল ও বিজয় নিশ্চিত করার সূক্ষ্ম পরিকল্পনা ও যোদ্ধাদল গঠনের মাধ্যমে তিনি বাজিমাৎ করতে সক্ষম ছিলেন। শুধু ইরান নয়, ইরানের ভূ-রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে আশেপাশে সফলভাবে বিস্তৃত করতে তার রয়েছে বিরাট কৃতিত্বপূর্ণ ও দুঃসাহসিক ভূমিকা। 

মধ্যপ্রাচ্য সম্ভবত সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতি পাড়ি দিচ্ছে বর্তমানে। চারটি জাতি গোষ্ঠী এখানে রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে সরব রয়েছে আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে। সৌদি নেতৃত্বে আরবগণ, তুরস্কের নেতৃত্বে তুর্কিগণ, ইরানের নেতৃত্বে পারসিকগণ এবং রাষ্ট্রহীন কুর্দিরা লড়ছে একে অপরের বিরুদ্ধে।

জাতিগত বিভাজনের বাইরে মতাদর্শিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে তীব্র মেরুকরণ বিরাজমান। তদুপরি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও ব্রিটেন তৎপর ও সম্পৃক্ত আছে তেল, সম্পদ লুণ্ঠন ও অস্ত্র বিক্রির ধান্দায়।

এমন জটিল ও সংকটময় পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি ছায়াযুদ্ধে সাফল্যের প্রধান রূপকার ছিলেন জেনারেল সুলাইমানি। ইরানের আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক, সামরিক কর্তৃত্ব এসেছে মূলত তারই হাত ধরে।

সুলাইমানিকে গণ্য করা হয় সিরিয়ার শিয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ত্রাতা হিসাবে। সামগ্রিক বিরোধিতা ও আক্রমণের মুখেও আসাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার মূল কলকাঠি ও সামরিক কৌশল ঠিক করতেন সুলাইমানি। 

লেবাননে শিয়া মিলিশিয়াদের পুনর্গঠন ও প্রতিআক্রমণে শক্তিও জুগিয়েছেন এই ইরানি জেনারেল। হামাস-হিজবুল্লাহকে একটি দুর্ধর্ষ মিলিশিয়া বাহিনীতে রূপান্তরের পেছনে তার নির্দেশিত প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সাহায্য কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।

ইরাকে সাদ্দামের পতনের পর শিয়া গোষ্ঠীকে সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার পেছনেও অবদান রয়েছে জেনারেল কাসিম সোলাইমানির। শুধু তাই নয়, বিশাল মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলো দেশের শিয়া রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তিকে তিনি প্রশিক্ষিত, সশস্ত্রভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন এবং নানা দেশের শিয়া স্বার্থে এক হয়ে লড়াইয়ের জন্যও প্রস্তুত করেছিলেন। যে কারণে সংখ্যালঘু হয়েও আসাদ সরকার আশেপাশের শিয়াদের অংশগ্রহণে সামরিক শক্তি বাড়াতে ও ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। 

জর্জরিত মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের কর্তৃত্ব ও শিয়া মতাদর্শ বিকাশকারী এই জেনারেলের হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে একটি মহাঘটনা এবং এ মূহুর্তে এটি অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাফল্য বলে বিবেচিত হবে। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্ররাও এর ফলে সন্তুষ্ট হবে। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ইরানবিরোধী সফলতা স্থায়ী হবে কিনা এবং ইরান ও শিয়া আধিপত্য খর্ব হবে কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। 

কারণ, কাসিম সোলাইমানি বছরের ওর বছর প্রশিক্ষণ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে যে সামরিক ভিত্তি ও যোদ্ধা বাহিনী তৈরি করেছেন, তা সহজেই নিঃশেষ হয়ে যাবেনা। বিশেষত আদর্শিক মনোবল ও উন্নত অস্ত্র দিয়ে তৈরি শক্তিকে নিমেষেই পদানত করা সম্ভব হবেনা। উপরন্তু ইরান এই জেনারেলের মৃত্যু ঝুকি ও বিপদের মুখে বার বার বলেছে, 'আমাদের অনেক কাসিম সোলাইমানি আছে।'

আরও অনেক সুদক্ষ জেনারেল থাকলেও কাসিম সোলাইমানি যে বিশিষ্টতা, নিজ পক্ষের প্রশংসা আর প্রতিপক্ষের নিন্দা পেয়েছেব, এমনটি সবার ভাগ্যে জুটে না। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে কাসিম সোলাইমানি সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে ইরাক-ইরান যুদ্ধে অংশ নেন। সামরিক দক্ষতা ও দৃঢ়তার কারণে পদোন্নতির এক পর্যায়ে ১৯৯৮ সালে তিনি ইরানের অত্যন্ত ক্ষমতাবান ও রাজনৈতিকভাবে বিশ্বস্ত বিপ্লবী গার্ডের কুদ্স ব্রিগেডের কমান্ডার হন। দেশের বাইরেও তিনি সাফল্য দেখিয়েছেন। আফগান-ইরান সীমান্তে দায়িত্ব পালনের সময় মাদকপাচার নিয়ন্ত্রণে তিনি বিরাট ভূমিকা পালন করেন। 

ইরাক, আফগান সীমান্ত ছাড়াও সুলাইমানির তৎপরতা ইরানের বাইরে লেবানন ও সিরিয়ায় পরিব্যাপ্ত। ২০০৮ সালে ইরাকি সেনাবাহিনী ও মুক্তাদা আল-সদরের অনুগত মাহদি বাহিনীর মাঝে যুদ্ধের উপক্রম হয়, তখন সুলাইমানি মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করেন।

২০১১ সালে সুলাইমানি মেজর জেনারেল হতে জেনারেল পদে উন্নীত হন। এ সময় আলি খামেনী তাকে 'জীবিত শহীদ' উপাধি দেন।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি প্রভাব বিস্তারের মূল কারিগর রূপে সুলাইমানিকে তখন থেকেই বিশ্ব চিনতে থাকে। আপাত দৃষ্টিতে রক্ষণশীল ইরানের ভেতরের খবর বাইরে খুব একটা না আসলেও নানামুখী সামরিক দায়িত্বের কারণে তার নাম চাপা থাকেনি।

ইরানের বাইরের প্রতিটি দেশে বিশেষ ভূমিকার জন্য সুলাইমানিকে নানা উপাধিও সাধারণ মানুষের পক্ষ ৎেকে দেওয়া হয়। ইরাকের শিয়াদের মুক্তিদাতা বা আসাদের ত্রাতা ছাড়াও তাকে লেবাননের হিজবুল্লাহ-এর সামরিক উইং-এর কার্যকরী প্রধান বলে গণ্য করা যায়। ২০১২ সালে তিনি নিজে সিরিয়ান হিজবুল্লাহ-এর নেতৃত্ব দিয়ে রণাঙ্গনে বাশার-বিরোধী সুন্নি বাহিনীগুলোকে নির্মূল করেন। আল-কাসির এর যুদ্ধে সুলাইমানিকে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। 

ইরাককে আইএসমুক্ত করার লড়াইয়েও সুলাইমানি কার্যকর সামরিক ভূমিকা পালন করেন। বিশেষত মুসেল ও ফাল্লুজা পুনরুদ্ধারে তার অবদাব ছিল গুরুত্বপূর্ণ তখন এক ইরাকি মন্ত্রী এমনও স্বীকার করেছিলেন যে, 'সুলাইমানি না হলে হায়দার এবাদির সরকার প্রবাসী সরকারে পরিণত হত আর ইরাক হত অস্তিত্বহীন।' 

এভাবে সুলাইমানি এক সামরিক মিথে পরিণত হন। আরবরা যেভাবে সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদের প্রশংসা করে, তুর্কিরা পাশাদের এবং কুর্দিরা সালাউদ্দিনের গুণগানে মুগ্ধ হয়, তেমনি সুলাইমানি পরিণত হন ইরানি বীরে। পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জলন্ত পরিস্থিতিতে তার ভূমিকা বা নাম নানা প্রসঙ্গে আলোচিত হতে থাকে।

ফলে সুলাইমানি যে প্রতিপক্ষের টার্গেট হবে, এ কথা বলাই বাহুল্য। ইরানিরাও তাকে যুদ্ধ ময়দানে প্রাণ হাতে লড়াইকারী 'জীবন্ত শহীদ' মনে করতো। তার মৃত্যু নিঃসন্দেহে ইরান বিরোধী শিবিরকে স্বস্তি দিয়েছে এবং ইরানকে ক্ষুব্ধ করেছে। বিক্ষুব্ধ ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে তার মৃত্যুর পর পরই প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

 

জেনারেল কাসিম সোলাইমানির হত্যার ঘটনাটি জানতে একটু পেছনে তাকানো যেতে পারে। অতি সম্প্রতি মার্কিন নাগরিক হত্যার অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক ও সিরিয়ার কয়েকটি হিজবুল্লাহ ঘাঁটিতে বিমান হামলা করে। এতে প্রায় ত্রিশজন নিহত হয়। জবাবে উত্তেজিত হিজবুল্লাহ সমর্থকরা বাগদাদের মার্কিন দূতাবাসে হামলা করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই উত্তেজনার সুযোগে মার্কিনীরা আক্রমণের সুযোগ পায় এবং তাদের আপাতত বড় সাফল্য বাগিয়ে নেয়। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) অতিপ্রত্যুষে বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে মার্কিন বিমান হামলা চালিয়ে জেনারেল সুলাইমানিকে হত্যা করে। ধারণা করা হচ্ছে, সুলাইমানির অবস্থান নিশ্চিত করে এই হামলা চালানো ও তাকে নিহত করা হয়। 

বিদ্যুৎ বেগে তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে গেলে শুধু ইরান নয়, সারা বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তার মৃত্যুতে যুগপৎ শোক ও আনন্দ প্রকাশ পায়। মার্কিন, ইসরায়েল বা পশ্চিমা বিশ্বের আনন্দ ও স্বস্তির পাশাপাশি আরব বিশ্বের সুন্নি সম্প্রদায়েও খুশি পরিলক্ষিত হয়। কারণ, সুলাইমানির যুদ্ধ কৌশল ও আক্রমণে অকাতরে সুন্নির মৃত্যু হয়েছে। আরব বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিরা কোণঠাসা ও আক্রান্ত হয়েছে এবং ইরানের নেতৃত্বে শিয়া আধিপত্য লেবানন, সিরিয়া, ইয়ামেন হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তর ভূখণ্ডে বিস্তৃত হয়েছে। 

অন্যদিকে ইরানে জাতীয় শোকের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয়েছে। ইরান তাদের এই জাতীয় বীরের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার সঙ্কল্প জানিয়েছে। ফলে তার মৃত্যু শান্তির বদলে বদলার রাজনীতিকেই প্রলম্বিত করবে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে ইরানের নেতৃত্ব যে 'শিয়া ক্রিসেন্ট' উদিত হয়েছে, তাতে শিয়া প্রাধান্য ও আধিপত্য স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। জেনারেল কাসিম সোলাইমানির নেতৃত্বে শিয়া অগ্রযাত্রা ব্যাপকভাবে শক্তি সঞ্চয় করে বিস্তৃত হয়েছে। প্রধান সেনাপতির ভূমিকা পালন করে সুলাইমানি রণাঙ্গনকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন নিজের বিজয়ের পক্ষে। 

ইসলামের ইতিহাস নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে প্রাথমিক যুগ থেকেই রক্তাক্ত লড়াইয়ের মতাদর্শিক ধারা লক্ষ্য করা যায়। ভ্রাতৃঘাতী এই লড়াইয়ে একে অপরের হাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ও নিপীড়নের ইতিবৃত্তও লিপিবদ্ধ হয়েছে। লেখা হয়েছে অনেক বীর ও সেনাপতির নাম। কে সঠিক আর কে ভ্রান্ত, সে বিচারের আগে বরং আত্মঘাতী বেদনা, রক্ত, প্রাণনাশের ছবিই সবার আগে সামনে চলে আসে।

ইসলামের ঐতিহাসিক লড়াইয়ে যে তালিকায় একবিংশ শতকের প্রেক্ষাপটে অবশ্যই যুক্ত হবে জেনারেল কাসিম সোলাইমানির নামও।

   

যুক্তরাষ্ট্রে গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান ঘিরে রণক্ষেত্র হতে পারে ক্যাম্পাসগুলো



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। গত শনিবার (৪ মে) ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরও অন্তত ২৫ ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ।

আল-জাজিরা জানিয়েছে, এ নিয়ে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ক্যাম্পাসগুলো থেকে আড়াই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হলো। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের সময় ঘনিয়ে আসছে।

আগামী দিনগুলোয় স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। গত ১৭ এপ্রিল থেকে চলছে এই বিক্ষোভ। শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভ দমনে শুরু থেকেই পুলিশ অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে এসেছে।

এভাবে বিক্ষোভ দমন ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন অধিকারকর্মীরা। শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিক্ষোভে উত্তাল চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি সপ্তাহের শেষে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি মাসে অথবা আগামী জুনে এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে বাধা দিতে পারেন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা। এ কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার উদ্যোগ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা হুমকি দিয়েছেন, তাদের দাবি মানা না হলে এসব আয়োজন বর্জন ও অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে আসাসহ বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে ভাবছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে এসব অনুষ্ঠান বাতিল করেছে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। কোনো কোনোটি পিছিয়ে দিচ্ছে।

গত শনিবার সকাল পর্যন্ত ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলছিল। ওই সময় একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ক্যাম্পাসের লন থেকে কয়েক বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীকে আটক করছে।

এ ছাড়া বিক্ষোভ দমন করতে পুলিশ রাসায়নিক স্প্রে ব্যবহার করছে। এর পরই বিক্ষোভ একরকম দাঙ্গায় রূপ নেয়।

এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট জিম রায়ান বলেন, গত শুক্রবার রাতে বিক্ষোভকারীরা তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ করবে-এমন খবরে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশকে জানালে বিক্ষোভকারীদের আটক করা হয়। তবে আটকদের মধ্যে ঠিক কতজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তা স্পষ্ট নয়।

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানস্থলে মঞ্চের সামনে বিক্ষোভ করেন ফিলিস্তিনপন্থিরা। তবে এই বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ। ক্যাম্পাস পুলিশ দ্রুত বিক্ষোভকারীদের ঘিরে ফেলে স্টেডিয়ামের পেছনের অংশে নিয়ে যায়। তবে পতাকা, কাফিয়াহ এবং গ্র্যাজুয়েশন ক্যাপ পরে কয়েক ডজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্নাতক অনুষ্ঠান পণ্ড করেন।

এর এক দিন পর গতকাল রোববার নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এবং ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সমাপনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও সূচনা অনুষ্ঠান ব্যাহত হয়।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও এই বিক্ষোভ এখন নতুন নতুন দেশে ছড়িয়েছে। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভে নেমেছেন ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, ভারত, লেবানন, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও মেক্সিকোর শিক্ষার্থীরা।

;

ব্রুনাইয়ের আদালতে বাংলাদেশীকে ৫১ লাখ টাকা জরিমানা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অবৈধ সিগারেট চোরাচালানের অপরাধে এক বাংলাদেশী অভিবাসীকে ৬২ হাজার ব্রুনাই ডলার বা প্রায় ৫১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ব্রুনাইয়ের আদালত।

৬৩ কার্টন সিগারেট চোরাচালানের অভিযোগে গত শুক্রবার (৩ মে) এই রায় দিয়েছেন আদালত।

নির্বাহী বিচারক আজিম বিন ওসমান এই জরিমানা করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

অনাদায়ে বাংলাদেশি নাগরিক হাদিউল ইসলামকে (৪৩) ১৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

কাস্টমস প্রসিকিউটর আদালতে প্রকাশ করেন যে, আসামীর কাছ থেকে ৬৩ কার্টন চোরাচালান করা সিগারেট, একটি মোবাইল ফোন, ২ হাজার ২৪৩ ব্রুনাই ডলার এবং ৫৩ সিঙ্গাপুর ডলার নগদ পাওয়া গেছে।

এর আগে গত ২৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টায় কাম্পং পাঞ্চোর মেংকুবাউ এলাকায় দেশটির কাস্টমস বিভাগের অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে হাদিউলের কোয়ার্টার থেকে এই চোরাচালানের সিগারেট উদ্ধার করা জয়।

আদালত মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন এবং সিগারেটগুলো ধ্বংসের আদেশ দিয়েছেন।

;

ইনস্টাগ্রামে ছবি দেখে অবস্থান শনাক্ত, আততায়ীর হাতে ইনফ্লুয়েন্সার খুন



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ল্যান্ডি প্যারাগা গয়বুরোর

ল্যান্ডি প্যারাগা গয়বুরোর

  • Font increase
  • Font Decrease

ইনস্টাগ্রামে দেওয়া একটি ছবিই কাল হয়ে দাঁড়াল ইকুয়েডরের বিখ্যাত ইনফ্লুয়েন্সার ল্যান্ডি প্যারাগা গয়বুরোর (২৩) জীবনে। পোস্ট দেওয়া ওই অবস্থানের সূত্র ধরেই তাকে খুন হতে হয় দুজন বন্দুকধারীর হাতে। ইনস্টাগ্রামে তার প্রায় পৌনে ২ লাখ অনুসারী। খবর এনডিটিভি। 

তার মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশ জানায়, খুন হওয়ার আগে ল্যান্ডি দুপুরের খাবারের জন্য একটি রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি ওই খাবারের ছবি পোস্ট করেন তার ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে। ওই ছবি দেখে ল্যান্ডির অবস্থান চিহ্নিত করেছিলেন খুনিরা। এরপর সেখানে গিয়ে নৃশংসভাবে খুন করেন জনপ্রিয় এ ইনফ্লুয়েন্সারকে।

তারা আরও জানায়, ল্যান্ডিকে খুন করতে ওই রেস্তোরাঁয় দুজন বন্দুকধারী গিয়েছিলেন। তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পুরো ঘটনা সেখানে থাকা ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।

ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, ল্যান্ডি ওই রেস্তোরাঁয় খাওয়ার সময় একজনের সাথে কথা বলছিলেন। হঠাৎ ওই স্থানে অজ্ঞাত দুই বন্দুকধারী প্রবেশ করে গুলি ছোড়েন।

এ ঘটনার পর মুহূর্তের মধ্যেই রেস্তোরাঁর পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। গুলিবিদ্ধ হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন ল্যান্ডি। এরপর পালিয়ে যান বন্দুকধারীরা। দেখা যায়, সাবেক বিউটি কুইন (সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বিজয়ী) ল্যান্ডির রক্তাক্ত দেহ রেস্তোরাঁর ভেতর পড়ে আছে।

তদন্তকারীরা বলছে, তার খাবারের ছবির সূত্র ধরেই বন্দুকধারীরা রেস্তোরাঁয় পৌঁছায়। তারপর তারা সেখানে এসে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

তবে এখন পর্যন্ত এই খুনের পিছনের কারণ সম্পর্কে জানা যায়নি। এ নিয়ে কিছু গুঞ্জন ছড়িয়েছে। যেমন কেউ বলছেন, স্থানীয় একজন কুখ্যাত গ্যাং লিডারের সঙ্গে ল্যান্ডির সম্পর্ক ছিল। কেউ বলছেন, সংগঠিত অপরাধে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের দুর্নীতিসংশ্লিষ্ট একটি তদন্তের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ায় খুন হতে হয়েছে তাকে।

এমন গুঞ্জনও রয়েছে যে একজন মাদক সম্রাটের সঙ্গে ল্যান্ডির সম্পর্ক ছিল। তাই ওই ব্যবসায়ীর বিধবা স্ত্রী ল্যান্ডিকে খুন করিয়ে থাকতে পারেন।

;

লেবাননে ইসরায়েলের বিমান হামলায় এক পরিবারের ৪ সদস্য নিহত



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্ত ঘেষা মেইস আল জাবালে গ্রামে ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে এক পরিবারের চার সদস্য নিহত হয়েছেন।

রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হামলায় ওই চার লেবানিজ নিহত হয়েছেন বলে দেশটির বেসামরিক প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সূত্র ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে গাজায় হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল এবং ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গ্রুপের মধ্যে নিয়মিত গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটছে। এতে মেই আল জাবালের গ্রামসে বাসিন্দারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

এদিকে এক বিবৃতিতে, হিজবুল্লাহ জানায়, তারা প্রতিশোধ হিসেবে লেবাননের সীমান্তের নিকটবর্তী ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর কিরিয়াত শমোনা শহরে দশটি কাতিউশা রকেট নিক্ষেপ করেছে।

অক্টোবর থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে পাল্টাপাল্টি বিমান হামলা এবং গোলাবর্ষণ চালিয়ে আসছে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলি বাহিনী। তবে উভয়পক্ষ সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়ানো থেকে বিরত রয়েছে।

অক্টোবর থেকে লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় ২৫০ জনেরও বেশি হিজবুল্লাহ সদস্য এবং ৭৫ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। এছাড়া ইসরায়েলের একাধিক সূত্র বলেছে, লেবানন থেকে ছোড়া হিজবুল্লাহর রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলি অন্তত এক ডজন সৈন্য নিহত ও বেশ কয়েকজন বেসামরিক আহত হয়েছেন।

উল্লেখ্য, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৬০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। অন্যদিকে ইসরায়েলের এক হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ২৫২ জন হামাসের হাতে জিম্মি রয়েছেন বলেও জানায় ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ।

;